Home সারাদেশ গাইবান্ধায় ‘অচেনা প্রাণীর কামড়ে’ মসজিদের ইমামসহ হতাহত ১২

গাইবান্ধায় ‘অচেনা প্রাণীর কামড়ে’ মসজিদের ইমামসহ হতাহত ১২

by Newsroom
অচেনা প্রাণীর

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের তালুক কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের বাসিন্দরা ‘অচেনা প্রাণীর’ আক্রমণের ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। ওই প্রাণীর হামলায় এ পর্যন্ত হরিণাথপুর গ্রামের মসজিদের এক ইমামসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইমাম ফেরদৌস সরকার রুকু (৫৬) মারা যান।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন হরিণাথপুর গ্রামের আমরুল ইসলাম (৩১), সুমি বেগম (৪০), তালুক কেঁওয়াবাড়ি গ্রামের শেফালী বেগম (৩০), মুক্তা বেগম (২৮), কিশামত কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের আফছার আলী (৩৫), ব্রাহ্মভিটা গ্রামের হামিদ মিয়া (৪০), হরিণাথপুর গ্রামের মনজিলা বেগম (৫০), তালুক কেঁওয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মো. রাব্বী শেখ (১০)। বাকিদের নাম জানা যায়নি।

সুযোগ পেলেই এলাকার ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল, ধানের জমি থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ করে বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

এই প্রাণীর হাত থেকে রেহাই পায়নি কুকুরও। এ প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়ে দুটি কুকুরের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গ্রামবাসী।

প্রাণীর ভয়ে অনেক অভিভাবক সন্তানের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে আবার সন্তানদের সাথে করে স্কুলে নিয়ে যান। গ্রামের প্রায় সবাই লাঠি নিয়ে চলাফেরা করে। এই আতঙ্ক ওই গ্রাম ছাড়াও আশপাশের আরও দুই গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের অনেকেই এটাকে বলছেন শিয়াল, আবার কেউ বলছেন হায়েনা। তবে এটাকে ‘পাগলা শিয়াল’ বলে ধারণা করছেন পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান নয়ন।

তালুক কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের সাইদুর রহমান জানান, প্রাণীটি হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের ওপর আক্রমণ করে না। শুধু মানুষ ও কুকুরের ওপর আক্রমণ করে। ওই প্রাণী আমার বাড়ির দুটি কুকুরের ঘাড়ে কামড়ে ছিল। পরে ওই ক্ষত স্থানে ঘায়ের সৃষ্টি হয়ে কুকুর দুটি মারা গেছে।

আক্রমণের শিকার মো. রাব্বী শেখের মা রুমি বেগম (২৭) বলেন, ‘অচেনা এই প্রাণীর আক্রমণে পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। আমার ছেলেও আক্রমণে আহত হয়েছে। এখন আতঙ্কে আছি, যদি কিছু হয়ে যায়। ’

তালুক জামিরা গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, স্থানীয়দের কেউ এটিকে শিয়াল বলছে, কেউ বলছে হায়েনা। এই জন্তুর ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারছিন না। ভয়ে গ্রামবাসী রাত জেগে পাহারা দেয়।

নিহত ইমাম ফেরদৌস সরকার রুকুর ভাই সাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘ফেরদৌস সরকার রুকু প্রায় দেড় মাস আগে মাঠে ঘাস কাটার সময় ওই প্রাণী তাকে হামলা করে। এ সময় সে হাতে থাকা কাস্তে দিয়ে প্রাণীটিকে আঘাত করেও রক্ষা পায়নি।

তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে প্রাণীটি পালিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে তার নাক ও পেছনের মাংস ছিঁড়ে ফেলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে যখম সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি জানান, পরে তাকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে সেলাই দেওয়াসহ জলাতঙ্ক ও টিটেনাস টিকা দিয়ে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এরপর তিনি আরও দুইদিন হাসপাতালে গিয়ে জলাতঙ্কের বাকি দুইটি ডোজ টিকা নেন। এরপরও অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরে ১৭ অক্টোবর তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

হরিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রুবেল মিয়া বলেন, ওই প্রাণী এক দিনে আরও তিনজনকে আক্রমণ করে।

এ বিষয়ে হরিণাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রাকিব হোসেন বলেন, ‘এটা কোন ধরনের প্রাণী তা বলা মুশকিল। আমরা মানুষজনকে সতর্ক থাকতে বলছি।’

পলাশবাড়ী থানার ওসি মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বন ও প্রাণিসম্পদ বিভাগকে জানানো হয়েছে।’

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান নয়ন বলেন, ‘এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি প্রাণীটি পাগলা শেয়াল হতে পারে। শেয়াল পাগল হলে কুকুরের চেয়ে ভয়ানক হয়ে থাকে।’

আরও পড়ুন : সাপের জন্যে সেতু নির্মাণ, বাড়ছে পর্যটক আকর্ষণ

You may also like