Home সারাদেশ পাবনায় চলছে অবাধে শামুক সংগ্রহ, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

পাবনায় চলছে অবাধে শামুক সংগ্রহ, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

by Newsroom

বর্ষার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে পাবনা বিলগুলো থেকে অবাধে শামুক সংগ্রহ শুরু হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষার এই সময়ে পাবনার বিভিন্ন বিল থেকে ব্যাপক হারে শামুক সংগ্রহ করা হয়। অসাধু একটি চক্র অতিরিক্ত টাকার লোভ দেখিয়ে স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা শামুক ও ঝিনুক কিনে নিচ্ছে।

এতে করে উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ, মাটি ও পানিতে বিরুপ প্রভাবের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়বে। ফলে শামুক রক্ষার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।

পরিবেশবিদদের মতে, উন্মুক্ত জলাশয়ের খাল, বিল, নদী, নালা, হাওর, বাওড়ের পানি বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম ভুমিকা রাখে শামুক। আর এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটির জন্যে শামুককে প্রাকৃতিক ফিলটার বলা হয়।

প্রকৃতির এ পরম বন্ধু শুধু পানি বিশুদ্ধ করার কাজই নয়, মিঠা পানির মাছের খাবার ও কৃষি জমিতে মাটির জৈব শক্তির গুণাগুণ ঠিক রাখতে বিশেষ ভুমিকা রাখে। বর্ষার সময় এই শামুক এক দিকে যেমন বংশ বিস্তার করে থাকে, অপরদিকে জালাশয়ের নোংড়া পানির পোকামাকড় খেয়ে পানিকে বিশুদ্ধ করে থাকে।

জানা গেছে, জেলায় বিভিন্ন অঞ্চলের বিল থেকে প্রতিদিন প্রায় তিনশ টন শামুক সংগ্রহ হয়ে থাকে। এই শামুক সংগ্রহের জন্যে অঞ্চল ভেদে ব্যাপারীরা মৎস্যজীবী ও অভাবি কৃষকদের ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা কিনে দিচ্ছে। প্রতিদিন একজন শামুক সংগ্রহকারী সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিন থেকে চারবস্তা শামুক সংগহ করে থাকে। প্রতি বস্তা শমুকের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শামুককে বন্য প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আর এই আইন অমান্যকারীকে এক বছরের জেলসহ অর্থ দণ্ডের বিধান থাকলেও সেটি কার্যকর হচ্ছে না। এই শামুক স্থানীয় ব্যপারীরা সংগ্রহ করে খুলনাসহ দক্ষিণ অঞ্চলের মাছের খাদ্য তৈরির বিভিন্ন কারখানায় পাঠিয়ে দিচ্ছে। এছাড়াও এগুলো মাছের খাদ্য হিসেবেও বিক্রি করা হয়। এভাবে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার শামুক বিক্রি হয় শুধু এই পাবনা জেলা থেকেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সোনাগাদনের বড় বিল, সুজানগরের গাজনার বিল, চাটমোহর ও ফরিদপুর উপজেলার চলনবিল, আটঘরিয়া উপজেলার ডিকশি, আতাইকুলা উপজেলার ঘুঘুদহসহ প্রায় ১৫টি স্থান থেকে নির্বিচারে চলছে এই শামুক সংগ্রহ ও নিধনের কাজ। বছরের আষাঢ় মাস থেকে শুরু হয়ে আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত চলে এই শামুক সংগ্রহ।

এভাবে শামুক নিধন অব্যাহত থাকলে মাটির উর্বরতা হ্রাস, মাছের খাদ্য সংকট এবং জলধারার পানি ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে যাবে বলে জানান পরিবেশবিদগণ। দ্রুত জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ জলজ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবিদদের।

এডওয়ার্ড কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ কিছু ব্যবসায়ীদের প্রলোভনে পড়ে ব্যাপক হারে শামুক নিধন করছে। ধীর গতি ও নিরীহ প্রকৃতির প্রাণী হওয়ায় সহজেই শিকারে পরিণত হচ্ছে।

এর ফলে পানির জীববৈচিত্র্যের যেমন হুমকি সৃষ্টি হচ্থে তেমনি এর উপরে নির্ভরশীল খাদ্যগ্রহণকারী মাছ ও পাখি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে জমিতে বিষ প্রয়োগের ফলেও শামুক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জীববৈচিত্র রক্ষার জন্যে প্রশাসনের এ বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি।

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like