Home জাতীয় ঘুষ দিলেই মেলে তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগ

ঘুষ দিলেই মেলে তিতাসের অবৈধ গ্যাস সংযোগ

by Newsroom

নির্দিষ্ট অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঠিকাদার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের যোগসাজশে অবৈধ গ্যাস সংযোগ সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব এলাকার বিল মাসে মাসে তুলে ভাগ-বাঁটোয়ারা করা হয় এবং তিতাস এই অবৈধ সংযোগে ব্যবহৃত গ্যাস সিস্টেম লসের খাতে ঢুকিয়ে দেয় বলে জানা গেছে।

এর আগে ২০০৯ সালে সরকার গ্যাস সংকট নিরোসনে বৈধভাবে সংযোগ দেওয়া বন্ধ করলে চালু হয় অবৈধ গ্যাস-সংযোগ। এখনো আবাসিক ও শিল্প কারখানায় গ্যাস-সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকলেও ঘুষ দিলে সহজেই পাওয়া যায়। তিতাস যে ২৫০ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইনের হিসাব তৈরি করেছে, তার বিপরীতে গ্রাহকসংখ্যা সুনির্দিষ্ট করা যায়নি। ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জনসংখ্যা ও আবাসিক ভবনের ঘনত্ব বিবেচনায় নিয়ে তিতাসের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যা অন্তত ১০ লাখ হবে।

অবৈধ সংযোগের হিসাব বের করলেও কীভাবে এসব লাইন দেওয়া হলো এবং কারা জড়িত, তা-ও চিহ্নিত করেনি তিতাস কর্তৃপক্ষ। মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান, সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত ইত্যাদি করা হলেও অবৈধ পাইপলাইন স্থাপন ও বাসাবাড়িতে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ দেওয়া বন্ধ হয় না। তবে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের পর যখন গ্যাসলাইনের ছিদ্রকে দায়ী করা হচ্ছে, তখন নড়েচড়ে বসেছে সরকারের জ্বালানি বিভাগ।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকাসহ ছয় জেলায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাস সরবরাহ করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। তিতাসের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা ও আশপাশের চার জেলায় গ্যাসের প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সদর, রূপগঞ্জ, বন্দর, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১৭৯ কিলোমিটার এবং মুন্সিগঞ্জ সদর ও গজারিয়া ৩১ কিলোমিটার পাইপ-লাইন রয়েছে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, পোস্তগোলা, ডেমরা, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, কড়াইল বস্তি, বনানীর বিটিসিএল এলাকা, জামগড়া, ধলপুর, আমতলাসহ কয়েকটি এলাকায় ২২ কিলোমিটার এবং গাজীপুরে রয়েছে ১৩ কিলোমিটার পাইপলাইন। এর বাইরে নরসিংদীতেও কিছু অবৈধ পাইপলাইন আছে।

অবৈধ এসব সংযোগ দিতে এলাকাভেদে এককালীন ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। এরপর বিল আকারে প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা করে নেওয়া হয়, যা তিতাসের হিসাবে জমা হয় না, ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়। গত এক বছরে জেলার বন্দর উপজেলায় আটটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

তিতাসের কর্মীদের যোগসাজশে দেওয়া অবৈধ সংযোগের বাসাবাড়ি ও শিল্প এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে বৈধভাবে সংযোগ নিয়ে নিয়মিত বিল পরিশোধ করা গ্রাহকেরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।

আবাসিকে গ্যাস-সংযোগ বন্ধ থাকার পরও ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিতাস প্রায় ১০ লাখ গ্রাহককে (আবাসিক) সংযোগ দিয়েছিল। এর মধ্যে ২০১৮ সালেই ৭ লাখ অবৈধ গ্রাহককে বৈধতা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে সংযোগ পাওয়া এসব গ্রাহকরা ব্যাংকে নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে গ্যাস বিল দিচ্ছেন বলে তিতাসের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে সরবরাহজনিত ক্ষতি বা সিস্টেম লসের হার ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে তিতাস। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ১ দশমিক ১৭ শতাংশ। তিতাসের বার্ষিক রাজস্ব আদায়ের অনুপাতে সিস্টেম লসের আর্থিক পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকার বেশি।

এর আগে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে তিতাসের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর মশিউর রহমান, তিতাসের পাইপলাইন ডিজাইন বিভাগের একটি শাখার ব্যবস্থাপক সাব্বের আহমেদ চৌধুরীসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ ঘটনায় দুদকের করা মামলার তদন্ত এখনো চলছে।

অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, অবৈধ গ্যাস-সংযোগের একটি তালিকা করা হয়েছে এবং সে অনুয়ায়ী শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। তিতাসের লোক জড়িত না থাকলে অবৈধ সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কারা কারা জড়িত, সেটি বের করাই চ্যালেঞ্জ।

এদিকে পরদিন সোমবার তিতাসসহ দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির প্রধানদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে।

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like