Home সারাদেশ অভাবের তাড়নায় সন্তানকে নদীতে ফেলল মা, বাঁচল অলৌকিকভাবে

অভাবের তাড়নায় সন্তানকে নদীতে ফেলল মা, বাঁচল অলৌকিকভাবে

by Shohag Ferdaus
সন্তানকে নদীতে

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের কাশিমবাজার এলাকার একটি ব্রিজ থেকে কোলের শিশুকে অথৈ জলে ফেলে দিয়েছেন এক মা। পানিতে পড়ে শিশুটি ২০ মিনিটেরও বেশি সময় ভেসে থাকে। পরে পথচারী এবং এলাকাবাসী শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করে। শিশুটি এখন স্থানীয় রফিকুল ইমলাম ও এলিনা দম্পতির কাছে সুস্থ অবস্থায় রয়েছে।

এলিনা শিশুটিকে তার বুকের দুধও পান করিয়েছেন। তবে শিশুটির মা জমিলা বেগম শিশুটিকে ফেলে দিয়েই নিজ বাড়িতে পালিয়ে যায়।

জমিলা বেগমের দাবি এক বছর আগে দুই মাসের সন্তান জাহিদকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি রংপুর থেকে বিতাড়িত হয় সে। পরে উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের পূর্বকেদার গ্রামের দরিদ্র পিতা জয়নাল মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। দিনমজুর পিতা অভাবে থাকায় তার সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে প্রায়ই দ্বন্দ্ব হত।

সন্তানের খাবার এবং খরচ চালাতে মাঝে মধ্যে তাকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হত। এসব থেকে রেহাই পেতে সন্তানকে পানিতে ফেলে দেয়ার চিন্তা আসে তার।

জমিলা বেগমের পিতা জয়নাল মিয়া জানান, সকালে আমি ও আমার ছেলে মাটি কাটতে যাই। মাটিকাটার স্থানের অদূরে মানুষের কোলাহল শুনে জানতে পারলাম আমার মেয়ে জমিলা তার ছেলে জাহিদকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। কি কারণে এ কাজ করলো তা আমি জানি না।

তিনি আরও জানান, দুই বছর আগে রংপুরের মর্ডান মোড়ের ভর্ত কবিরাজের ছেলে হাফিজুরের সঙ্গে জমিলার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরেই সংসার ভাঙে জমিলার। এসময় শিশু জাহিদকে নিয়ে তার বাড়িতে ফিরে আসে জমিলা।

এদিকে তিন সন্তান নিয়ে বড় মেয়ে জরিনা আগেই বাপের বাড়ি চলে আসে। ফের আরেক মেয়ে চলে আসায় তা কিছুটা সমস্যায় ফেলে। সব মিলিয়ে নয় সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ অসাধ্য হয়ে ওঠে জয়নালের।

দিনমজুরের কাজ করে এই বিশাল সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। জমিলার মা জবেদা বেগম জানান, প্রায়ই জমিলার সন্তান নিয়ে পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকতো। তার খরচ চালাতে চাইতো না জমিলার বাবা।

জমিলার বৃদ্ধা নানী সুফিয়া বেওয়া জানান, তার ভিক্ষাবৃত্তির চাল দিয়ে মাঝেমধ্যে জমিলার সন্তানের খরচ চলতো। তবে জমিলা তার সন্তানের জন্য অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে। এসব নির্যাতন থেকে বাঁচতে আজকে সন্তানকে পানিতে ফেলে দিয়েছে।

প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার দিন (শুক্রবার) জমিলা দুই কেজি চাল সবার আড়ালে বিক্রি করে শিশুর জন্য খাবার ও তেল সাবান কিনে আনলে তার বাবা রেগে গিয়ে জমিলাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। মনের দুঃখে অবুঝ শিশুকে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাশিম বাজার সংলগ্ন একটি ব্রিজ থেকে ২০ ফুট নিচে পানিতে ফেলে দেয় জমিলা।

প্রত্যক্ষদর্শী দুলাল হোসেন সন্তোষ জানান, সকাল ৯টার দিকে তিনি ওই পথে বাজারে যাচ্ছিলেন। এ সময় ব্রিজের ওপরে উঠলে এক মহিলাকে কিছু পানিতে ফেলতে দেখে। কিছু পড়ার শব্দ শুনে নিচে তাকিয়ে দেখে একটি শিশু পানিতে ভাসছে এবং হাত-পা নাড়াচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এসময় তিনি ব্রিজের ওপর থেকে চিৎকার করতে থাকে। তার চিৎকারে স্থানীয় ফরিদুল ইসলাম এবং একজন পথচারী এগিয়ে এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে। উদ্ধার করতে তাদের ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। এ সময় শিশুটি পানিতে ভেসে ছিল। উদ্ধারের পর আগুন জ্বালিয়ে শিশুটিকে সুস্থ করা হয়।

পরে ব্রিজের পাশের বাড়ির রফিকুল ও এলিনা বেগম দম্পতি শিশুটিকে হেফাজতে নেন।

এলিনা বলেন, শিশুটিকে তার বুকের দুধ খাওয়ানো হয়েছে। শিশুটিকে তিনি লালন-পালন করতে চান।

বলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান জানান, শিশুটি আপাতত রফিকুল ও এলিনা বেগম দম্পতির কাছে রয়েছে। তাকে তার মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হবে।

এ বিষয়ে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার দেব শর্মা জানান, বিষয়টি আমি কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি, চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়েছিলাম খোঁজ-খবর নিয়ে ওই পরিবারকে সহযোগিতা দেয়া হবে।

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like