রাজধানীর মিরপুরের টেকনিক্যাল মোড়ে ট্রাকের ধাক্কায় অভিনেত্রী আয়েশা আক্তার আশার মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় মোটরসাইকেল চালক শামীম আহমেদের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আবু বক্কর সিদ্দিক তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
দারুস সালাম থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মকবুল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ সপ্তাহের প্রথম দিকে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
এর আগে ৬ জানুয়ারি শামীমকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহান আহমেদ মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
আরও পড়ুন : ‘আশা’ পূরণের আগেই নিভে গেল আশার জীবনপ্রদীপ
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ছয়-সাত বছর ধরে আসামি শামীম আহমেদের সঙ্গে আশার পরিচয় ছিল। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে আত্মিক সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। প্রায়ই আশাদের বাসায় যাতায়াত করতেন তিনি। আশার পরিবারও তাকে বিশ্বাস ও স্নেহ করত। মাঝে মাঝে অফিস ও অভিনয়ের কাজে আসা-যাওয়ায় সহযোগিতা করতেন শামীম।
গত ৪ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে বনানী অফিস থেকে বের হওয়ার সময় আশা তার বাবাকে ফোন করে বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় আসছি।’
এরপর রাত পৌনে ১১টার দিকে পুনরায় ফোন করে তিনি বলেন, ‘বাড়ির কাজের ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা হয়েছে। কাজ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আমি শামীম ভাইয়ের সঙ্গে চলে আসব।’
এ সময় শামীম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আপনার মেয়ে যেভাবে বলে সেভাবে কাজ করেন তাহলে ভালো হবে।’ পরে রাত পৌনে ২টার দিকে শামীম ফোন করে জানান, আশা আর নেই। টেকনিক্যাল মোড়ে একটি অজ্ঞাত ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করেছে।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, শামীম বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে দুই ট্রাকের মাঝখান দিয়ে দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় সামনের ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে আশা মোটরসাইকেলের পেছন থেকে ছিটকে পড়ে যান। এরপর পেছন থেকে দ্রুতগতিতে আসা একটি অজ্ঞাত ট্রাক তাকে চাপা দিলে মাথায় জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই আশা মারা যান।
এ ঘটনায় আয়েশা আক্তার আশার বাবা মো. আবু কালাম বাদী হয়ে দারুস সালাম থানায় একটি মামলা করেন। ওইদিনই শামীমকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
নির্মাতা রোমান রুনী জানান, সর্বশেষ ২ জানুয়ারি তার নাটক ‘দ্য রিভেঞ্জ’-এ অভিনয় করেছেন আশা। রোমান বলেন, ‘গতকাল রাত দেড়টার দিকে টেকনিক্যাল এলাকায় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। পেছন থেকে একটি ট্রাকের ধাক্কায় প্রায় ২০ ফুট দূরে গিয়ে পড়ে আশা। সঙ্গে সঙ্গে দারুস সালাম থানার পুলিশ এসে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেয়। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তখনই জানান ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে।’
প্রায় চার বছর আগে আশার টেলিভিশন নাটকের অভিনয়ে আসা। অভিনয়কেই সে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চেয়েছিলেন। শিল্পী হিসেবে বিটিভির তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, নায়িকা নয়, একজন পেশাদার অভিনেত্রী হতে চান। অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা ছিলেন তার একমাত্র অনুপ্রেরণা। সেভাবেই শৈশব থেকে তিনি নিজেকে তৈরি করছিলেন।
এই অভিনেত্রী মারা যাওয়ার দুই দিন আগে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। নাটকে তার সহশিল্পী ছিলেন সালাহউদ্দিন লাভলু এবং আনিসুর রহমান মিলন।
নাটকটির নির্মাতা রোমান রুনী জানান, আশার একটা স্বপ্ন ছিল প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার। তার অভিনয় দক্ষতার কারণে সেই সুযোগ তিনি দিয়েছিলেন। নাটকের প্রতিটা শর্ট শেষে আশা সবাইকে জিজ্ঞাসা করেছে কেমন হয়েছে, ভালো না হলে সে আবার শর্ট দিতে চাইত। কাজের প্রতি সে খুব সিরিয়াস ছিল। তার স্বপ্ন ছিল চলচ্চিত্র নিয়ে। সে পথে এগোনোর মাঝেই সে মারা গেল।’
আশা সম্প্রতি বড় পর্দায় নাম লিখিয়েছিলেন। তার অভিনীত ছবিটির নাম ‘বাবা মেয়ে’। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তার অভিনীত একাধিক নাটক এবং টেলিছবি। এর আগে আশা জাহিদ হাসানের সঙ্গে ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’ নাটকে অভিনয় করেছেন। নাটকটির পরিচালক জয় সরকার।
ভয়েস টিভি/ডিএইচ