Home সারাদেশ আপিল বিভাগের রায়ে রক্ষা পেল চট্টগ্রামের ৪৩ বাড়ি

আপিল বিভাগের রায়ে রক্ষা পেল চট্টগ্রামের ৪৩ বাড়ি

by Newsroom
আপিল

দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ের পর সরকারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায়ে অবশেষে রক্ষা পেল নগরীর দুই অভিজাত এলাকার পরিত্যক্ত ৪৩টি বাড়ি। ১১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এই রায় দেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, মহামান্য আদালতের রায়ের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি দুষ্কৃতিকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল। বিজয়ের মাসে চট্টগ্রামে এটি আমাদের অনেক বড় বিজয়।

হাইকোর্টের রায় সরকারের পক্ষে ছিল। এবার আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন। এসব বাড়ি সরকারিভাবে অনেককে বরাদ্দ বা বন্দোবস্তি দেয়া হয়েছে। আমাদের সরকারি অফিসও রয়েছে। এসব বাড়িতে সরকারি ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ অনেকেকেই জড়িত।

সরকারের হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম ছিল খুলশী ও নাসিরাবাদ এলাকায় সরকারি পরিত্যক্ত ওই ৪৩টি বাড়ি। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সঙ্গে দি চিটাগং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি. এর মধ্যে মামলা চলে আসছে। ২০১৪ সালের এক রায়ে মামলা হাউজিং সোসাইটির পক্ষেও গিয়েছিল।

২০১৮ সালের রায়ে প্রায় হাজার কোটি টাকার বাড়ি সরকারের পক্ষে আসে। বেহাত হওয়া থেকে রক্ষা পায়। সেই ৪৩টি বাড়ি নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি ও খুলশী এলাকায় অবস্থিত।

এসব বাড়ির মধ্যে রয়েছে ডিআইজি অফিস, পুলিশ কমিশনারের বাসভবন, বিএনসিসি অফিস, এনএসআই, ডিজিএফআই, বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রণ, মহিলা বিষয়ক কার্যালয়, বিচারকদের বাসভবন, আঞ্চলিক টেলিভিশন ভবনসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়। এছাড়াও ১০ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের নামেও চারটি বাড়ি বরাদ্দ রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসাইনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। হাউজিং সোসাইটির আপিল খারিজ করে দেন। এই রায়ের মাধ্যমে সরকারের মালিকানা চূড়ান্ত হয়ে গেল।

বেঞ্চের অন্য তিন বিচারপতি হলেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ও ওবায়দুল হাসান। সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।

জেলা প্রশাসক সূত্র জানায়, পাকিস্তান সরকার ৪৩ একর জায়গা সোসাইটির নামে বরাদ্দ নেয়া হয়। পরবর্তীতে এসব জায়গা সোসাইটির সদস্যদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে ৯৯ শতাংশই ছিল পাকিস্তানের অধিবাসী। দেশ স্বাধীনের পর বরাদ্দপ্রাপ্ত অবাঙালিরা বাড়ি-ঘর ফেলে পালিয়ে যায়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এসব সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে।

৭২ সালের পর থেকে সরকার বিভিন্ন সংস্থাকে বরাদ্দ দেয়। ১৯৮৬ সালে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর দি চিটাগং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের এসব সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে।

২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির পক্ষে রায় দেন হাইকোর্ট। এতে সরকারি ৪৩টি বাড়ি বেহাত হওয়ার উপক্রম হয়। ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর পূর্বের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল (রিভিউ পিটিশন) দায়ের করে সরকার। রিভিউ পিটিশনের শুনানি শেষে পূর্বের রায় বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এর ফলে বাড়িগুলো সরকারের পক্ষে আসে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আদালতে তথ্য গোপন করে এক তরফা রায় নিয়েছে দি চিটাগং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড।

সরকার হাইকোর্টের রায় পাওয়ার পর ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত সরকারি বাড়ি ভেঙে আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমিটরি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছিল। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সংকট নিরসনে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

নাসিরাবাদ এলাকার ৩৬টি ও খুলশী এলাকার সাতটি পরিত্যক্ত বাড়িসহ ৪৩টি বাড়ি অবমুক্তির জন্যে দি চিটাগং কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর রিট দায়ের করেন। ২০১৪ সালে রায় ঘোষণা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা প্রকাশ করা হয়নি। রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ার পর লিভ টু আপিলের উদ্যোগ নেয়া হয়। এটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর রিভিউ মামলা দায়ের করা হয়।

৪৩টি বাড়ির আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বাড়ির বর্তমান বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে ডিআইজি অফিস, পুলিশ কমিশনারের বাসভবন, বিএনসিসি অফিস, বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রণ অফিস, এনএসআই, ডিজিএফআই, জেলা মহিলা বিষয়ক অফিস ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবন রয়েছে।

এছাড়া সরকারি কার্যালয়, বাসভবন ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্পেশাল জজ, জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ), অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ, আঞ্চলিক টেলিভিশন ভবন, কর্ণফুলী রেজিমেন্ট অফিস, অতিরিক্ত জেলা, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, উপ-কমিশনারের কার্যালয়/বাসভবন রয়েছে।

সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়, কর্মকর্তাদের বাসভবনসহ অনন্ত ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

আরও পড়ুন : ভোলায় চার ভারতীয় হাজতিকে হাউজিং কিটস প্রদান

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like