সারাবিশ্বে জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম আপেল। মিষ্টি স্বাদের সুস্বাদু ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ, শর্করা, আঁশ, পেকটিন এবং ম্যালিক এসিড। আর এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ হচ্ছে শর্করা।
ভিটামিনের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন—এ এবং ভিটামিন—সি। তবে মজার বিষয় হলো, আপেলের মাংসল অংশের চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি ভিটামিন আছে আপেলের ছালে। খনিজ লবণের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ। আপেলে সোডিয়ামের পরিমাণ খুবই সামান্য।
পুষ্টিগুণে অনন্য এই ফলটি হাজার হাজার বছর ধরে এশিয়া এবং ইউরোপ জুড়ে চাষ হয়ে আসছে। আর ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে লাতিন আমেরিকাতেও শুরু হয় এর চাষাবাদ। কিন্তু এর উৎপত্তিস্থল মনেকরা হয় মধ্য এশিয়াকে।
অনেক সংস্কৃতিতে আপেলের ধর্মীয় এবং পৌরাণিক তাৎপর্য আছে। এদের মধ্যে গ্রীক এবং ইউরোপীয়ান খ্রিস্টীয় ঐতিহ্য অন্যতম। সাধারণত আপেলের জাতগুলি মূলের কলমের মাধ্যমে তৈরি করা হয়, যা ফলস্বরূপ গাছের আকার নিয়ন্ত্রণ করে। উইকিপিডিয়ায় দেয়া তথ্য মতে, বিশ্বে প্রায় ৭,৫০০ টিরও বেশি জাতের আপেল রয়েছে। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় জেনাস ম্যলুস প্রজাতির আপেল।
আপেল গাছ ৫-১২ মিটার দীর্ঘ এবং চওড়া ও শাখা প্রশাখা যুক্ত শীর্ষভাগ বিশিষ্ট বৃক্ষ। আপেল চাষের জন্য প্রয়োজন হয় বেলে ও বেলে দোঁয়াশ মাটি। অনেক জাতের আপেল বীজ থেকে চারা গাছ উৎপন্ন হয়। প্রকৃত পক্ষে এসব চারা ভালোভাবে বংশবৃদ্ধি হয় না বলে কলম করে নতুন গাছ উত্পাদন করা হয়।
ধারনা করা হয় যে সমস্ত উদ্ভিদ সর্বপ্রথম চাষের আওতায় আসে– আপেল তাদের মধ্যে অন্যতম এবং হাজার বছর ধরে চাষাবাদের মাধ্যমে এর মান উন্নত হয়েছে। বলা হয়ে থাকে আলেকজাণ্ডার দি গ্রেট সর্বপ্রথম ৩২৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে কাজাখস্তানে খাটো প্রজাতির আপেল পেয়ে মেসিডোনিয়াতে নিয়ে যায়।
খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অবধি ইরান এবং এশিয়া মাইনরের ইতিহাস থেকে জানা গেছে বামন শেকড় থেকে আপেল গাছের চারা তৈরি কথা। মহান আলেকজান্ডার বামন আপেল গাছের নমুনা এরিস্টটলের লাইসিয়ামে পাঠিয়েছিলেন। পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে বামন রুটস্টকগুলি বা শেকড় পদ্ধতি প্রচলিত হয়ে ওঠে। পরে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা এবং বিভিন্ন চক্রের মধ্যমে বিস্তার পায় আপেল গাছ।
সেই থেকে হাজার বছর ধরে এশিয়া এবং ইউরোপ জুড়ে আপেলকে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয় । খোসাসহ আপেলের খাদ্যযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম অংশে প্রায় ৮০% রয়েছে পানি।
বাজারে লাল ও সবুজসহ বিভিন্ন ধরণের আপেল পাওয়া যায়। তবে লাল আপেলের চেয়ে সবুজ আপেলের পুষ্টিগুণ একটু বেশি। সবুজ আপেল লাল আপেলের মতো তেমন স্বাদযুক্ত না হলেও এই আপেলের রয়েছে অনেক উপকারিতা।