আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে শুরু হয়েছে যুদ্ধ। বিতর্কিত নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে এই যুদ্ধ চলছে। আজারবাইজানের একটি হেলিকপ্টার গুলি করে ধ্বংস করেছে আর্মেনিয়ার বাহিনী। দুই তরফ থেকেই জানানো হয়েছে, এই লড়াইয়ে কিছু বেসামরিক মানুষ মারা গেছে।
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের বর্তমান লড়াই প্রায় ত্রিশ বছর ধরে জিইয়ে রাখা সমস্যার ফল। এ লড়াই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আজারবাইজানের ভূমি অবৈধভাবে দখলকারী আর্মেনীয় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আজারবাইজানীদের অধিকার আদায়ের লড়াই।
নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের সমস্যা শুরু হয় উসমানীয় সম্রাজ্য পতনের পর। মূলত যখন এ অঞ্চলটি ব্রিটিশরা দখল করে নেয়। পরবর্তীতে এ অঞ্চল চলে যায় বলশেভিকদের অধীনে।
কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই দ্বন্দ্ব আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিতর্কিত নাগোরর্নি-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের ক্রমবর্ধমান লড়াই-সংঘর্ষে বেসামরিক নাগরিকসহ প্রায় ১০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
পাহাড়ি এই অঞ্চলটি আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হলেও ১৯৯৪ সাল থেকে এটি আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দু’পক্ষের যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত এ সংঘর্ষে ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের ভেতরে হলেও আর্মেনিয়া সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করছে জাতিগত আর্মেনীয়রা। এর আগে ৮০’র দশকের শেষদিকে কারাবাখ অঞ্চলে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মুহূর্তে সংঘর্ষ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। আর্মেনিয়া বলছে, রোববার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে তাদের ৮৪ জন সেনা নিহত হয়েছে, মারা গেছে বেসামারিক নাগরিকও।
আজারবাইজান তাদের কতো সেনার মৃত্যু হয়েছে তা না বললেও ৭ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। এই যুদ্ধে তুরস্কের ইন্ধনের অভিযোগও উঠছে।
গত মঙ্গলবার আর্মেনিয়া অভিযোগ করেছিল, তুরস্কের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান তাদের বায়ুসেনার বিমান ধ্বংস করেছে। এরপর তারা দাবি করেছে, তুরস্কের যুদ্ধবিমান দিনভর আর্মেনিয়ার এয়ার স্পেসে বিপজ্জনক ভাবে ঘোরাঘুরি করছে। তবে, তুরস্ক অবশ্য কোনো অভিযোগই স্বীকার করেনি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান বলছেন, আজারবাইজানের উচিত নাগর্নো-কারাবাখ দখল করে আর্মেনিয়াকে শিক্ষা দেয়া। তার জন্য তুরস্ক আজারবাইজানকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।
২০১৬ সালের পর বিতর্কিত ওই অঞ্চলে এবারই সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ হচ্ছে। এনিয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ সোমবার আংশিক সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন। অন্যদিকে জেনারেল মাইস বারখুদারোভ শত্রুদের ধ্বংস করে দিয়ে বিজয়ের আগ পর্যন্ত শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
চলমান এ যুদ্ধের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে উভয়পক্ষ। এ অবস্থায় বিশ্ব নেতারা তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ কোনোভাবে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে এতে আঞ্চলিক শক্তি রাশিয়া ও তুরস্কও জড়িয়ে পড়তে পারে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের জন্য বর্তমানে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংঘাত থামানো। এ মুহূর্তে কে ঠিক কিংবা কে ভুল তা নির্ধারণের সময় নেই।
আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুসান স্তেপানিয়ান দাবি করেছেন, সোমবার সকালেও উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়। এছাড়া আর্মেনীয় সেনারা আজারবাইজানের সেনাদের দখল করে নেয়া এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে।
তবে বাকু কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের সেনারা আরো সামনে অগ্রসর হয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের সেনাসদস্যরা শত্রুর ঘাঁটিতে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে তালিশ গ্রামের কাছে কৌশলগত বেশ কয়েকটি অবস্থান দখলে নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে শত্রুরা এখন পিছু হঠছে।
আর্মেনীয় সামরিক কর্মকর্তারা বলেছেন, আজারবাইজানের সেনারা বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে ভারী অস্ত্র নিয়ে হামলা করছিল। আর আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তার্তারে বিদ্রোহীরা বেসামরিক মানুষের ওপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছে।
বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে শান্তি আলোচনার আয়োজক হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, লাভরভ দুই দেশের সরকারকে বাকযুদ্ধ থামানোরও আহ্বান জানিয়েছেন।
ভয়েসটিভি/এএস