প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র হচ্ছে- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। সে আলোকে আমরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।
২৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে সামরিক বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজের ডিএসসিএসসি ২০২০-২০২১ কোর্সের স্নাতক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এ কোর্সে এবার ২২৫ জন অংশ নেন, যার মধ্যে ৪৩ জন বিদেশি কর্মকর্তা।
বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি চর্চার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ কারও সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়নি; আলোচনার মাধ্যমেই মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফেরত নেবে, এটাই সরকার চায়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দান এবং তারা যাতে ফিরে যেতে পারে তার ব্যবস্থার জন্য আমরা কিন্তু কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত হইনি। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, আলোচনার মাধ্যমে তারা তাদের নাগরিকদের যেন ফিরিয়ে নিয়ে যায়। একটা বন্ধুত্বসুলভ মনোভাব নিয়েই আমরা এই কাজ করে যাচ্ছি। তবে যারা অন্যায় করছে, নিশ্চয়ই সেটা আমরা বলব। কিন্তু তারপরও তাদের নাগরিকদের তারা ফেরত নেবে, সেটা আমরা চাই।’
বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দেয়ায় সারবিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঐক্য উন্নয়নে বাংলাদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রাখছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদসহ নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিপন্ন মানবতার ডাকে সাহায্যেরও হাত বাড়িয়েছি।’
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের কথা মনে রেখে বাংলাদেশকে আরও ‘অনেকদূর’ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যের কথাও জানান তিনি।
‘মনে রাখতে হবে এই দেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন করেছি। এই দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিলেন। আমাদের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হবার সক্ষমতা অর্জন করেছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য আরও অনেকদূর যাওয়া।’
এজন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ২০২১-২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। ২০৪১ এ বাংলাদেশ কেমন হবে, আমরা ২০২১ এ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব, সাথে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। কিন্তু ২০৪১ এর বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশের প্রাচীনতম ট্রাই সার্ভিস প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রথম বছরে ছিল ৩০ জন, তা বেড়ে ২২৫ জনে উন্নীত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৩টি বন্ধুপ্রতীম দেশের এক হাজার ২০৮ জন অফিসার এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেছেন।
‘এই কোর্সেও ১৬টি বন্ধুপ্রতীম দেশের ৪৩ জন বিদেশি কর্মকর্তাসহ ২২৫ জন সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে পিএসসি অর্জন করছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশাবাদী, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ তার শিক্ষা-প্রশিক্ষণের উচ্চমানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে। এ প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েটগণ তাদের অর্জিত জ্ঞান, ইচ্ছাশক্তি ও অঙ্গীকারের মাধ্যমে দেশকে একটি স্থিতিশীল, টেকসই, আত্মনির্ভরশীল ও সর্বোপরি গৌরবময় অবস্থানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন: আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই : প্রধানমন্ত্রী
ভয়েস টিভি/এসএফ