২০ অক্টোবর মঙ্গলবার বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও কিছু প্রার্থীর বর্জনের মধ্যে দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৯২ ইউপিতে নির্বাচন শেষ হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে এখন চলছে ভোট গণনা।
তবে কয়েকটি কেন্দ্রের বাইরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, জাল ভোট দেয়া এবং হামলা ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে।
বিশেষ করে কুমিল্লার আদ্রা ও বগুড়ার ধুনটের কালের পাড়া ইউপিতে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের কথা জানা গেছে। বেশ কিছু কেন্দ্রে সকালের দিকে ভোটারের লম্বা সারি দেখা গেছে। তবে করোনার মধ্যে এসব উপনির্বাচনে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোটগ্রহণের সময় তেমন কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, বরুড়া উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্চান করা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বিএনপির প্রার্থী তাদের সমর্থকদের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ এনেছেন। বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন বয়কট করে পুনঃনির্বাচন দাবি করেছেন।
এদিন ভোট শুরুর আগে কাকৈরতলা কেন্দ্রে দুই প্রতীকের প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার খবর পাওয়া যায়। এতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (আনারস প্রতীক) মাহফুজুর রহমান সেলিমের ১০ কর্মী আহত হয়েছে বলে তাদের দাবি। এদিকে পেরপেটী কেন্দ্রে আনারস প্রতীকের প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
আনারস প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী মো. সজিব অভিযোগ করেন, ‘সকাল সাড়ে ৭টায় কাকৈরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে প্রতিপক্ষ হামলা করে। এতে সুমন নামের একজন রক্তাক্ত আহত হয়। আরও কয়েকজন আহত হয়েছে।’
তার পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, বিএনপির প্রার্থী মো. পারভেজ হোসেন নির্বাচন বর্জন করে দাবি করে বলেন, ‘নৌকার লোকেরা ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে নলুয়া, পেরপেটি, আদ্রা, নরীন্দ্রপুরসহ ৬টি কেন্দ্র দখল করেছে। বহিরাগত লোক দিয়ে আমার কর্মী মনিরকে আহত করেছে, সে হাসপাতালে ভর্তি। আমি ভোট বর্জন করলাম। এ নির্বাচন আবার হোক। আমি লিখিত অভিযোগ দাখিল করবো। ’
তবে কাকৈরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইজিং অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, স্কুলের সীমানার মধ্যে কোনও ঝামেলা হয়নি। নৌকা ছাড়া অন্য প্রতীকের এজেন্ট কেন্দ্রে আসেনি।
এ কেন্দ্রের পুলিশ কর্মকর্তা এসআই নাছের জানান, ভোট শুরুর আগে বাইরে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার খবর শুনেছি। তবে ভেতরে কোনও সমস্যা হয়নি। কেন্দ্রের ভেতর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ. করিম বলেন, সব কেন্দ্রে ঠিকঠাক ভোট হচ্ছে। কোথাও কোনও সমস্যা এখনও শুনিনি। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
বরুড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। আমার নিকট কোনও অভিযোগ আসেনি।
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন হয়ে এখন গণনা চলছে। ১৫ হাজার ৯৯৮ জন ভোটারের অংশগ্রহণে এই উপনির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া। উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে মো. সেলিম মিয়া ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামান মিয়া (আনারস), শিবলী আহমেদ (মোটরসাইকেল) ও আক্তারুজ্জামান (চশমা) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গত ২৭ এপ্রিল আদিয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হলে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ওই পদে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়। আজ ২০ অক্টোবর উপ-নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে।
নরসিংদীর রায়পুরার আদিয়াবাদ ইউপি’র উপনির্বাচনে ভোট দিতে দীর্ঘ সারি ছিল নারী ভোটারদের। তবে মাস্ক পরার ও নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ানোর কোনও চেষ্টা ছিল না।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আদিয়াবাদ ইউনিয়ন পরিষদের এই উপ-নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৯৮ জন। মোট ৯টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ন করতে ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্বপালন করছেন। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি ও র্যাব দায়িত্ব পালন করছে।
বগুড়ার কালের পাড়া নির্বাচনে নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি। নেই মাস্ক পরার কড়াকড়ি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বালাই।
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের আগের রাতেই হারেজ উদ্দিন (নৌকা) ও স্বতন্ত্র সাজ্জাদ হোসেন শিপনের (মোটরসাইকেল) সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও দিনের নির্বাচনে এর তেমন কোনও প্রভাব দেখা যায়নি। মঙ্গলবার প্রতিটি কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৩২ জন সদস্যকে উপস্থিত রেখে সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। নির্বাচনে প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত হারেজ উদ্দিন আকন্দ (নৌকা), স্বতন্ত্র সাজ্জাদ হোসেন (মোটরসাইকেল), তরিকুল ইসলাম (ঘোড়া) ও লিটন আহম্মেদ (আনারস)।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত জানান, এখানে স্মরণকালের ভালো ভোট চলছে। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত অন্তত ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। শেষ পর্যন্ত ৮০ শতাংশ ভোট পড়ার আশা করেন তিনি।
এর আগে সোমবার রাতে নৌকা ও মোটরসাইকেল প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় অন্তত আটজন আহত এবং ২-৩টি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। রাতে উপজেলার হাঁসখালী গ্রামে প্রচারণা চালানোর সময় এ ঘটনা ঘটে। ধুনট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কামরুজ্জামান মিয়া জানান, দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন সামান্য আহত ও দুটি মোটরসাইকেল ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে কোনোও পক্ষই মামলা করেনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, উৎসব মুখোর পরিবেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়ে এখন গণনা চলছে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ মো. হাবিবুর রহমান, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী মো. বাহার মিয়া, মিনার প্রতীক নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোট সমর্থিত প্রার্থী আছাদ উল্লাহ এবং আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র মো. হুমায়ুন কবীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে ভোট চলাকালে সকালে রসুলপুর উত্তর ও দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে নারী ভোটারদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোট কেন্দ্রে আসা রসুলপুর দক্ষিণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার গোলাপ মিয়া জানান, এবারের ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো। নিজের ভোট নিজে দিতে পারছি, ভালো লাগছে।
একই কেন্দ্রের রত্না বেগম জানান এর আগে ভোট দিয়েছিলাম, তখন হট্টগোল ছিল। ঝামেলা ছিল। তবে এবার পরিবেশ ভালো। আমার ভোটটি আমি নিজে দিতে পারছি এটাই বড় সার্থকতা।
রসুলপুর উত্তর সরকারি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসা নারী ভোটার আকলিমা আক্তার জানান,কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। তবে ভোটারদের লাইন লম্বা। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারছি বেশ ভালো লাগছে।
তবে দুটি কেন্দ্র ঘুরে করোনা পরিস্থিতিতে ভোট নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের তেমন কোনও বিষয়ই চোখে পড়েনি। ভোটারদের লাইনেও পরস্পরের দূরত্ব দেখা যায়নি।
চলতি বছরের ১০ জুলাই বার্ধক্যজনিত কারণে চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান মিয়ার মৃত্যুর পর ইউনিয়ন পরিষদটি শূন্য ঘোষণা করে উপজেলা নির্বাচন কমিশন।
এছাড়াও রংপুরের সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন, নওগাঁর মান্দা উপজেলা ও মথুরাপুর ইউনিয়ন, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়ন, চুয়াডাঙ্গার তিনটি, সাতক্ষীরার চারটি ও ময়মনসিংহের একটি ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
কলারোয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ইউনিয়নের নয়টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোট গণনা শেষে দেখা যায় স ম মোর্শেদ নৌকা প্রতীকে ৬ হাজার ৮০৫ ভোট, প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদের ভাই ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রউফ মোটরসাইকেল প্রতীকে ৫ হাজার ৭৭৭ ভোট ও নেসার আলী আনারস প্রতীকে ৭৬৪ ভোট পেয়েছেন। নৌকা প্রতিকের প্রার্থী স ম মোর্শেদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
ভয়েস টিভি/ডিএইচ