Home ভিডিও সংবাদ ইতিহাস-ঐতিহ্যের গান্ধি আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর

ইতিহাস-ঐতিহ্যের গান্ধি আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর

by Amir Shohel

১৯৩৪ সালে জামালপুর মহকুমা কংগ্রেসের সম্পাদক নাসির উদ্দিন সরকার মেলান্দহ উপজেলায় গড়ে তোলেন গান্ধী আশ্রমটি। মেলান্দহ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ঝিনাই নদীর তীরে ঝাউগড়া ইউনিয়নের কাপাসহাটিয়া গ্রামে অবস্থিত আশ্রমটি। গান্ধী ভক্ত কমরেড নাসির উদ্দিন সরকার গ্রামের মানুষদের স্বদেশি চেতনায় উজ্জীবিত করে চরকায় সুতা তৈরি, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া ও শরীর চর্চা কার্যক্রম চালাতেন এ আশ্রমে। এই আশ্রমটি তখন পরিণত হয়েছিল বাংলার মুক্তিকামী মানুষের অন্যতম মিলনমেলায়। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক বৈঠকও হতো এখানে। এলাকাবাসীর উদ্যোগে ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণকল্পে আশ্রমে গড়ে উঠেছে একটি মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর। আশ্রমে সেবামূলক বেশকিছু কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। প্রতিদিন বহুদর্শনার্থী আশ্রমটি দেখার জন্য এখানে আসেন।

পাকিস্তানী শাসক চক্রের সমর্থকরা ১৯৪৮ সালে আশ্রমটিতে দফায় দফায় হামলা চালিয়ে আশ্রমের বহু স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়, টিকে থাকে শুধু অফিসটি। দেশভাগের পর আশ্রমের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও, ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে পুনরায় চালু হয়েছে সেই গান্ধি আশ্রমের কার্যক্রম। এই আশ্রমের মাধ্যমে গ্রামের মানুষদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, সেলাইসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

আশ্রমের ভেতর মেঝেতে রাখা আছে একটি চরকা। ৪টি কাঠের জানালা ও একটি দরজার সমন্বয়ে গঠিত আশ্রমের দেয়ালে মহাত্মা গান্ধীর নানা ধরনের কাজকর্মের ছবি ঝুলানো রয়েছে। এছাড়াও সেখানে রয়েছে নাসির সরকার, মেয়ে ব্রিটিশ বিরোধী নেত্রী রাজিয়া খাতুন ও পুত্র মোয়াজ্জেম হোসেনের ছবি। মেয়ে রাজিয়া খাতুনই ছিলেন আশ্রমের প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক।

একই আঙ্গিনায় গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর। গান্ধি আশ্রমের সেই সময়ের ঘরটিকে অক্ষত রেখে সেখানে সুতা তৈরির চরকা, গান্ধির কিশোর থেকে শুরু করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নানা ছবিসহ গান্ধির বাণীও সংরক্ষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরে ব্রিটিশ থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তি সংগ্রামের নানা ছবি ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

দ্বিতল জাদুঘরটি জামালপুর জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। উপর তলায় রয়েছে অডিটোরিয়াম। অডিটোরিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের উপর নানা ধরনের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান দেখানো হয়। এছাড়াও বিশেষ বিশেষ দিবসে নানা ধরনের আলোচনা অনুষ্ঠান, নাটক, প্রতিযোগিতাও আয়োজিত হয় অডিটোরিয়ামে। নিচ তলাকে জাদুঘরের প্রধান অংশ বলা যায়। এতে প্রবেশ করার পরপরই চোখে পড়বে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মাতৃভূমির জন্যে ফাঁসির কাষ্ঠে জীবন দানকারীদের তালিকা। এরপরই চোখে পড়বে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর মানচিত্র ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা।

নিভৃত পল্লীতে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠান দুটির প্রতিটি পরতে পরতে মিশে রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং মুক্তিসংগ্রামের নানা গল্প, যা থেকে নতুন প্রজন্মের অনেকেই এখানে এসে লাভ করতে পারছে প্রকৃত শিক্ষা। তাই এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি পর্যটকদের।

গান্ধির স্বদেশী চেতনা এবং বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই প্রতিষ্ঠান দুটি কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতে সারা দেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস এখানে সংরক্ষণ করা হবে। গান্ধির জীবনী এবং বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সেতুবন্ধন রচনা করবে এই গান্ধি আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর ।

জাদুঘরটিতে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে সরাসরি বাসযোগে জামালপুর সদরে আসতে হবে। এছাড়াও ঢাকা থেকে ট্রেনেও জামালপুর আসা যায়। জামালপুর সদর উপজেলার গেটপার থেকে অটোরিকশা দিয়ে যেতে হবে হাজীপুর বাজার অথবা সরাসরি জাদুঘর। জামালপুর সদর উপজেলা থেকে কাপাসহাটিয়া যেতে খরচ পড়বে জনপ্রতি ৫০-৬০ টাকা। রাস্তা সরু হওয়ায় মাইক্রোবাসে যাওয়া বেশ সুবিধাজনক। তবে জাদুঘর এলাকায় রাত্রি যাপনের কোনো সুব্যবস্থা নেই।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like