Home ধর্ম ইসলামে যুবাদের গুরুত্ব

ইসলামে যুবাদের গুরুত্ব

by Amir Shohel

যুবারা হচ্ছে যেকোনো জাতির প্রধান স্তম্ভ, জাতির স্নায়ু ও আত্মা। ইসলাম যুবাদের অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যৌবনকালকে কুরআনে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে উল্লেখ করেছেন। নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে যুবাদের অগ্রাধিকার দান এবং কুরআনের অনেক সূরায় যুবসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয় উপস্থাপন করার মাধ্যমে যুবাদের গুরুত্বের বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। আলোচ্য নিবন্ধে যুবাদের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হবে।

যৌবনকে জীবনে শ্রেষ্ঠ সময় বলে আল্লাহর ঘোষণা : শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য। এই তিন কালের মধ্যে সব বিবেচনায় যৌবনকাল হলো শ্রেষ্ঠ সময়। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা জীবনের এ মধ্যম স্তরকে শক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আল্লাহ তিনি দুর্বল (শিশু) অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন অতঃপর দুর্বলতার পর শক্তিদান (যৌবন) করেন, অতঃপর শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য।’ (সূরা রূম : ৫৪)

নবুয়ত ও রিসালাতের জন্য যৌবনকালকেই অগ্রাধিকার : নবী ও রাসূলদের বেশির ভাগকেই যুবক বয়সেই নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব দেয়া হয়। মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম আ:, ইউসুফ আ:, ইয়াহিয়া আ:, ইসহাক আ:, ঈসা আ: ও সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা.-সহ অনেককেই যুবক বয়সেই আল্লাহ তায়ালা নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব পেয়েছেন মর্মে কুরআন ও হাদিসে প্রমাণ পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে আবদুুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘আল্লাহ তায়ালা সব নবীকে যৌবনকালে নবুয়ত দান করেছেন, যৌবনকালেই আলেমদের ইলম প্রদান করা হয়।’ (তাবারানি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, সুনান আল-বায়হাকি; প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১২৫)

কুরআনে যুবাদের ঘটনার উল্লেখ : আল্লাহ আল কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় ঈমানদীপ্ত যুবকদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন, যা যুবাদের ব্যাপারে গুরুত্বের প্রমাণ বহন করে।

আসহাবে কাহফ : এ ঘটনার মূলে রয়েছে কয়েকজন যুবক। ঈমানদার যুবকদের শিক্ষার নিমিত্তে সুরাতুল কাহফে তাদের ঘটনা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা তোমাকে তাদের সংবাদ সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। নিশ্চয় তারা ছিল কয়েকজন যুবক, যারা তাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’ (সূরা কাহফ-১৩)

ইবরাহিম আ. : মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম আ.। যৌবনে ছোট্ট এক ঘটনার মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন পুরো ব্যাবিলনে। মূর্তি ভেঙে পুরো পৌত্তলিক সমাজব্যবস্থার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তাওহিদের ঘোষণা দিয়েছিলেন। আওয়াজ ওঠল, কে করেছে এই কাজ, কার এত বড় সাহস? ‘তাদের কেউ কেউ বলল, আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহিম।’ (সূরা আল আম্বিয়া-৬০)

ইউসুফ আ. : ইউসুফ আ. তাঁর সৌন্দর্য ও চরিত্র সংরক্ষণের জন্য এখনো পর্যন্ত পৃথিবীর যুবকদের কাছে অনুপম ও অনুকরণীয় আদর্শ। কুরআন সেই ঘটনা তুলে ধরেছে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ভঙ্গিতে। ‘তাদের কাহিনীর মধ্যে বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে শিক্ষা।’ (সূরা ইউসুফ-১১১)

মারিয়াম আ. ; কুরআনে বিস্তারিত আলোচনা করে আল্লাহ একটি সূরার নামকরণ করেন সূরাতুল মারিয়াম। তিনি ছিলেন একজন যুবতী। ‘আর স্মরণ করো এই কিতাবে উল্লিখিত মারিয়ামের কথা, যখন সে তার পরিবার থেকে আলাদা হয়ে নিরালায় পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিলো।’ (সূরা মারিয়াম-১৬)

মুসা আ. এর ডাকে সাড়া দিয়েছে যুবারা : ফিরাউনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কিছু সাহসী মানুষ মুসা আ. এর ডাকে সাড়া দিয়ে ছিলেন। তারাও ছিলেন যুবক। যাদের বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু মুসার প্রতি তার কওমের ক্ষুদ্র একটি দল ছাড়া কেউ ঈমান আনল না, এ ভয়ে যে, ফিরাউন ও তাদের পরিষদ তাদেরকে ফিতনায় ফেলবে।’( সূরা ইউনুছ-৮৩)

মুসা আ. এর সঙ্গীও ছিল যুবক : আল্লাহর আদেশে মুসা আ: খিদির আ:-এর সাথে সাক্ষাতের সময় সঙ্গী হিসেবে নিয়েছিলেন ইউশা বিন নুন আ:কে। তিনিও ছিলেন যুবক। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর স্মরণ করো, যখন মুসা তাঁর সহচর যুবকটিকে বলল, আমি চলতে থাকব যতক্ষণ না দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে উপনীত হবো কিংবা দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেবো।’(সূরা কাহফ-৬০)

ইয়াহিয়া আ. : আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো একজন কিশোরের বিষয়ে বলেন, ‘হে ইয়াহিয়া, তুমি কিতাবটিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো’ আমরা তাকে শৈশবেই প্রজ্ঞা দান করেছি। আর আমাদের পক্ষ থেকে তাকে স্নেহ-মমতা ও পবিত্রতা দান করেছি এবং সে মুত্তাকি ছিল।’ (সূরা মারিয়াম : ১২-১৩) এ ছাড়াও দাউদ আ. ও তালুতের ঘটনা উল্লেখ করার মতো।

যৌবনকালকে গণিমত তথা মূল্যবান সম্পদ হিসেবে ঘোষণা : যৌবনকালকে রাসূল সা: গণিমত হিসেবে উল্লেখ করে তা মূল্যায়ন করার তাগিদ দিয়েছেন। রাসূলু সা: বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে সরতে পারবে না- তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে তা অতিবাহিত করেছে; তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা ব্যয় করেছে।’ (সুনানে তিরমিজি-২৪১৭)
আবেদ যুবাদের জন্য আরশের ছায়াপ্রাপ্তির ঘোষণা : রাসূল সা: বলেন, ‘সাত শ্রেণীর মানুষকে হাশরের মাঠে আল্লাহ তায়ালা তাঁর আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। তন্মধ্যে অন্যতম হলো- ওই যুবক, যার যৌবন কেটেছে আল্লাহর ইবাদতে।’ ( সহিহ বুখারি-৬৬০)
ইসলামের দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে তরুণ ও যুবকদের অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ফলে দেখা যায়, ইসলামের একেবারে প্রথম দিকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাদের বেশির ভাগই ছিলেন কিশোর ও যুবক। প্রসিদ্ধ সাহাবিগণ ১০ থেকে ৩৭ বছর বয়সের আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। যদিও বয়সের ব্যাপারটা ঐতিহাসিকদের মতে কমবেশি হতে পারে।

যুদ্ধের নেতৃত্ব অগ্রাধিকার : ইসলামের প্রতিটি যুদ্ধে মুসলিম যুবকরা যে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে তা অদ্যাবধি মুসলিম ইতিহাসে অলংকৃত হয়ে আছে। যায়দ ইবনে হারিসা রা:, জাফর ইবনে আবি তালিব রা:, আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা:কে মুতার যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব দেন। তারা সবাই ছিলেন যুবক। উসামাহ বিন যায়েদকে কাফেলার আমির বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন ১৮ বছর বয়সে। উততাব বিন উসায়েদকে হুনাইন যাওয়ার আগে মক্কায় দায়িত্বশীল বানিয়েছেন যখন তার বয়স বিশের কিছু বেশি। মুআয ইবনে জাবাল রা:কে ৩০ বছরের কম বয়সে ইয়েমেনের গভর্নর নিয়োগ করেন। তরুণ বয়সেই আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র রা: বালকদের বাইয়াতের জন্য নেতৃত্ব প্রদান ও মুসআব ইবনে উমাইর রা. কে মদিনায় দাঈ হিসেবে পাঠানো হয়।

এ ছাড়া কুরআন ও হাদিস সংরক্ষণে যুবাদের দায়িত্ব দেয়াসহ রাসূল সা. অন্যান্য কাজেও যুবাদের গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি ইতিহাস থেকে জানা যায়।

লেখক : অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

You may also like