Home চিকিৎসা ঈদেও ছুটি মিলছে না চিকিৎসক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের

ঈদেও ছুটি মিলছে না চিকিৎসক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের

by shahin

ইবনে আনোয়ার : বিশ্বের পাশাপাশি দেশে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও । তাইতো প্রাণঘাতী মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে এবারের ঈদে ছুটি মিলছে না স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের । ঈদের ছুটির চেয়ে মহামারির এ সময়ে কীভাবে রোগীর সেবা দেওয়া যায় সেই চিন্তাই এখন করোনাযোদ্ধাদের ।

মহামারী করোনা ভাইরাস কোভিট-১৯ মোকাবেলায় সরকার সকল স্বাস্থ্যকর্মীর ঈদেও ছুটি দিচ্ছে না । অর্থৎ স্বাস্থ্য বিভাগের কারোই ছুটি মিলছে এবারের ঈদে ।

দেশে ক্রমেই বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা । দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রুগী সনাক্ত হয় । এর পর হতে ২২ মে পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ২০৫ জনে মহামারী করোনা ভাইরাসটিতে মোট ৪৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে ।

চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৫২ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ২৫ হাজার প্রায়। তবে ২১ লাখের মতো রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে চিকিৎসক নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীরা । তাদের কারো কাছেই এবারের ঈদ উদযাপন কোন বিষয় না । তাদের লক্ষ্য জয়ী হওয়া । এটা জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ।

গত ২৬ মার্চ থেকে টানা সরকারি ছুটি চলছে। সরকােরর নানা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটি পেলেও ছুটি নেই স্বাস্থ্য বিভাগে ।

করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসার নেতৃত্বে থাকা স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে ঈদ সামনে রেখে অন্যরা ছুটি পেলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কেউ কোনো ছুটি পাচ্ছেন না। চলমান করোনা প্রতিরোধযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে জেগে থাকবেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

এ দিকে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যেসব রোগী শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ শতাংশই চিকিৎসক এবং নার্স সহ স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন । এর মধ্যে চিকিৎসক, নার্স এ স্বাস্থকর্মীরা সংখ্যা ছাড়িয়েছ তিন হাজার ।

জানা গেছে , সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় ৪২টি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ৬৪টি জেলা সদর হাসপাতাল, ৩৯২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিশেষায়িত হাসপাতাল, ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র- সবগুলো প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে ঈদেও ।

পাশাপাশি বেসরকারি সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানও খোলা রাখতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে । অর্থাৎ করোনাকালে ঈদের ছুটিতেও সচল থাকবে পুরো স্বাস্থ্য বিভাগ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফোকাল পারসন ও অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান গণমাধ্যমেক জানিয়েছেন , করোনাকালের এই ঈদে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সবার ছুটি গত ২৬ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ওই আদেশ বহাল থাকবে।

প্রতিবছর ঈদের সময় হাসপাতাল চালু রাখতে ডিউটি রোস্টার আগে থেকেই তৈরি করা হতো। সে অনুযায়ী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এত বছর পালা করে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু এবার সে সুযোগ নেই। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেও চব্বিশ ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এক আদেশে সব প্রতিষ্ঠানকে সপ্তাহের সাত দিনই নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন বলেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। এটা জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ। ভাইরাসকে পরাজিত করে জীবন বাঁচানোর এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা রোগীর পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। আবার কেউ প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের এই আত্মত্যাগ জাতি কোনোদিন ভুলবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এর সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তারা কেউই ঈদের ছুটির কথা চিন্তাই করছেন না। ঈদের ছুটির চেয়ে মহামারির এ সময়ে কীভাবে রোগীর সেবা দেওয়া যায়, সেটিই তাদের কাছে মুখ্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারাও এ বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত আছেন।

You may also like