হিমালয়ের কোল ঘেষা দেশের উত্তরের জনপদে এবার আগাম শীতের হাতছানি। দুপুরের তপ্ত রোদেও হিমেল বাতাসে অনুভূত হচ্ছে শীত। আর মাঝরাতে শীতের তীব্রতা একটু বেশি। তীব্র শীতের আমেজ থাকে সকাল ৬টা পর্যন্ত।
অগ্রহায়ণের শুরুতে এমন দৃশ্য দেখে বুঝা যাচ্ছে, উত্তরাঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জে এখন শীতের আমেজ বিরাজ করছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রতি বছরই এ অঞ্চলে শীতের প্রকোপ একটু বেশি। তাই এখানকার মানুষের ভোগান্তিও দ্বিগুণ। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলসহ প্রান্তিক মানুষদের দিন কাটে নিদারুণ কষ্টে। তার উপর এ বছর যোগ হয়েছে করোনা সংক্রমণ।
তাই শীতজনিত কষ্ট লাগব ও করোনার সংক্রমণ রোধে আগাম সতর্ক অবস্থায় রংপুর জেলা প্রশাসন।
রংপুর জেলা প্রশাসকের অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৫১ হাজার ৬০০ কম্বল পেয়েছে রংপুর। এই কম্বল প্রতিটি উপজেলায় প্রেরণ করা হয়েছে। পরে উপজেলার আওতায় থাকা ইউনিয়নগুলোতে এই কম্বল বিতরণ করা হবে।
এছাড়াও ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ১ লাখ কম্বল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে নতুন করে চাহিদা পাঠানো হবে বলেও জানা গেছে।
উত্তরের জনপদ ঘুরে দেখা গেছে, সকালের আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্য উকি দিলেও গরমের বদলে মিলছে উষ্ণতা।
রংপুর গংগাচড়া নোহালী এলাকার লোকমান আলী জানান, আমাদের বাড়ির পাশে তিস্তা নদী। চার দিকে চর। তাই ঠান্ডা বেশি। আমাদের এই এলাকায় সকাল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত সূর্য দেখা যায় না। সারাদিনই রোদ থাকলেও তাতে গরম ভাব নেই। বিকেল হলেই পড়ে কুয়াশা। গরম কাপড় ও কম্বল ছাড়া রাতে ঘুমানো যায়না।
গজঘন্টা এলাকার কৃষক মোরশেদ আলীর বলেন, এবার একটু আগেই শীত এসেছে। এখনই শীতের মোটা কাপড় ছাড়া সকাল সন্ধ্যা বের হওয়া যায়না। এদিকে নগদ-বন্দরের বাজার ও ফুটপাতে দেখা মিলছে গরম কাপড় বিক্রির।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান জানান, রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা প্রতিদিন কমতে শুরু করছে। গত বুধবার পর্যন্ত ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দুই-একদিনে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসতে পারে।
বুধবার রাত থেকে শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে কিছুটা। আবার কুয়াশাও পড়ছে।অন্য বছরের তুলনায় এ বছর যেমন বৃষ্টি বেশি ছিলো, তেমনি শীতের তাপমাত্রাও বেশি নামবে বলে আশঙ্কা করছে রংপুর আবহাওয়া অফিস।
রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় জানান, রংপুর অঞ্চলে এবার আগেই শীত শুরু হয়েছে। তবে শীতের সময় ভাইরাসজনিত রোগ বাড়তে পারে। এজন্য সবাইকে সর্তক হতে হবে।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শীত বেশি হলে করোনার প্রভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগী, শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হতে পারেন।
রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, শীত বাড়লে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। সে কারণে আগাম সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এছাড়াও মানুষ ঘরের বাইরে বের হলে যেনো মাস্ক পড়ে সে কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
ভয়েস টিভি/টিআর
