পঞ্চগড়ের বোদা থেকে বিরল প্রজাতির একটি ‘রেড কোরাল কুকরি’ সাপ আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে উপজেলার এক বাজারের কাছে একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে এটি উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সাপের এই প্রজাতিটি দেখা গেছে এবং পৃথিবীতে সাপটি মাত্র ২০-২২ বারের মত দেখা গেছে জানিয়েছেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা। সাপটি এখন রাজশাহী স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন আছে।
জানা গেছে, সোমবার সকালে বোদা উপজেলার এক বাজারের কাছে একটি নির্মাণাধীন ভবনে এক্সক্যাভাটর যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটছিলেন নির্মাণ শ্রমিকেরা। হঠাৎ কয়েকটি সাপ বেরিয়ে আসে। ভেতরে আরো সাপ থাকতে পারে এমন আশংকা থেকে তারা দ্রুত সেখানকার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মী ও সাপ উদ্ধারকারী মো.. শহীদুল ইসলামকে খবর দেন।
উদ্ধারকারী মো.. শহীদুল ইসলাম এসে মোট আটটি সাপ উদ্ধার করেন। যার একটি ছিল রেড কোরাল কুকরি সাপ। তিনি বলেন, এক্সক্যাভাটরের আঘাতে পেটের কাছে আঘাত লেগে সাপটির নাড়ীভুঁড়ি বেরিয়ে গিয়েছিল। সাপটি এখন চিকিৎসাধীন আছে। সুস্থ হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারে পাঠানো হবে।
রাজশাহী ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস রমন বলেন, সাপটির প্রাণের শঙ্কা এখনো কাটেনি। সাপটির নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাওয়ায়, সেটি এখনো খুবই জটিল অবস্থায় আছে। চিকিৎসা শুরু হয়েছে, আমরা এটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ব্যান্ডেজ করলেই সাপটি নড়াচড়া করে সেটি খুলে ফেলছে, যে কারণে তার চিকিৎসায় দীর্ঘ সময় লাগছে। সাপটির প্রাণ ঝুঁকিমুক্ত কিনা আগামী ৭২ ঘণ্টার আগে তা বলা যাবে না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান বলেন, সাপটি ধরা পড়ার পর সেখান থেকে তার কাছে ছবি ও ভিডিও পাঠানো হয়েছিল। এটি রেড কোরাল কুকরি সাপ। সাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য কমই পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, মাথার গঠন ও মুখের আকার এবং এর নড়াচড়ার ভঙ্গি ও ধরণ দেখে সাপটির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। রেড কোরাল কুকরি সর্বশেষ ২০১৯ সালে উত্তর প্রদেশের খেরি জেলায় দেখা গিয়েছিল এই সাপ। এটি খুবই বিরল প্রজাতির সাপ। বাংলাদেশে আগে কখনোই দেখা যায়নি।
তিনি আরো বলেন, মূলত ভারতের হিমালয় অঞ্চলের সাপ এটি। কিন্তু সাধারণত ভারতের উত্তরপ্রদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে এই সাপের দেখা মেলে। মৃদু বিষধর এই সাপটি সাধারণত লালচে উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়। এটি নিশাচর এবং বেশির ভাগ সময় মাটির নিচেই থাকে। দৈর্ঘ্য দেখে বোঝা যায় এটি একটি পূর্ণ বয়স্ক সাপ।
সাপের প্রজাতিটির বৈজ্ঞানিক নাম ওলিগোডন খেরিনসিস (Oligodon Kheriensis)। সাধারণত এটি খুব বেশি লম্বা হয় না, মাঝারি আকৃতির হয়ে থাকে। পঞ্চগড়ের আশেপাশের এলাকায় এ জাতের আরও সাপ থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন : পাবনায় বিষধর রাসেল ভাইপার, আতংকিত কৃষকরা
ভয়েস টিভি/এমএইচ