Home সারাদেশ আজো আতঁকে উঠেন উপকূলবাসী

আজো আতঁকে উঠেন উপকূলবাসী

by Newsroom

ভোর সাড়ে ৩টা। হঠাৎ বাতাসের শব্দ। কিছু বুঝে উঠার আগেই পানিতে তলিয়ে যায় পুরো ঘর। সবার যেন বাঁচার আকুতি। মুহুর্তের মধ্যে চোঁখের সামনে আটজন ভেসে যায়। এদের মধ্যে সাতজনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সকালে দেখা মিললো খেজুর গাছের উপরে ছোট বোন রাশিদার (৪) লাশ।

শুধু তাই নয়, চারদিকে লাশের সারি। লাশ দেখলেই বোঝা যায়, জীবন বাচাতে তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই লড়াই করেছিলেন। কোন লাশ গাছে ঝুলে আছে আবার কোন লাশ মাটিতে পড়ে আছে। লাশের পাশে স্বজনদের আহাজারি। অনেক লাশ পানিতে ভেসে গেছে, খুজে পায়নি পরিবারের সদস্যরা।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরে ঘটে যাওয়া প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী অজিউল্যাহ।

অজিউল্যাহ হঠাৎ করেই দেখতে পান ৫টি যুবতি মেয়ে পানিতে ভেসে এসেছে, তখনও তারা জীবিত। তাদের বাঁচাতে ছুটে যান তারা বাবা মোজাম্মেল হক। পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাদের চুল গাছের সাথে বেধে বাচানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু তাদের মধ্যে দুই জন বেচে গেলেও বাকিরা মারা যায়। এ ঘটনা চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ গ্রামের।

ঝড়ের সেই দিনের বিভীষিকাময় ভয়ানক এমন ঘটনার বর্ণনা দেন তখন বেচে যাওয়া মানুষগুলো।   বাসু মেম্বার, সামসুদ্দিন, আবদুল মালেক, হাফেজ ফারুক, মজিবুল হক, মো: ইউসুফসহ কয়েকজন জানালেন ঝড়ের কথা।

১৯৭০ সালের এর এইদিনে ভোলার উপকূলে আঘাত হানে প্রলংকারী ঘূর্নিঝড়টি।  এতে প্রান হারায় এক লাখের অধিক মানুষ।

সেই ঝড়ের কথা মনে করে আজো আতঁকে উঠেন সমগ্র উপকুলের মানুষ।
৭০ এর ভয়াল ঝড়ে পুরো জেলা লন্ড ভন্ড। নদীতে যেমনি ভাসছে লাশ ঠিক তেমনি গাছে গাছে ঝুলে ছিলো মানুষের লাশ।

দিনটির কথা স্মরণ করে  স্বজনহারা মানুষ। যাদের সংখ্যা অনেক দীর্ঘ। বেশিরভাগ পরিবারেরই বেঁচে থাকার মতো কেউ ছিলো না। সেই ঝড়ে দ্বীপজেলা ভোলা জেলার সাত উপজেলার বিস্তৃর্ণ জনপদ লন্ড ভন্ড হয়ে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। মারা যায় এক লাখের অধিক মানুষ। ঝড়ের ক্ষতচিহ্নের বর্ণনা করতে গিয়ে আজো শিউরে উঠেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

সেদিনের ঝড়ে স্বজনহারা মনির বলেন, ঝড়ে আমার তিন বোনকে হারিয়েছে। তাদের কথা মনে করে আজো মা কাঁদেন।

তুলাতলী এলাকার বাদশা মিয়া বলেন, মেঘনা নদী দিয়ে মানুষের মরদেহ ভাসতে দেখেছি। পরিচিত কাউকে উদ্ধার করেছি। বাকি মরদেহ স্রোতে ভেসে গেছে।
স্থানীয় রহমত আলী, ছিদ্দিক ও সিরাজ উদ্দিন বলেন, সেদিনের ঝড়ে মদনপুরের ১৮টি ঘরের মধ্যে ৪০ জনের মরদেহ পাওয়া যায়। একটি পরিবারে কেউ বেঁচে ছিলেন না।

প্রত্যক্ষদর্শী শাহে আলম বলেন, সেদিন দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। রাতে পুরো দমে ঝড় শুরু হয়। ভোরে জলোচ্ছ্বাসে মানুষ মারা যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মনপুরা, চরফ্যাশন, লালমোহন উপজেলায়।

প্রবীণ সংবাদিক ও ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম হাবিবুর রহমান বলেন, বন্যার পরে দেখেছি সাপ আর মানুষ দৌলতখানের চৌকিঘাটে জড়িয়ে পড়ে আছে। স্নেহময়ী মা তার শিশুকে কোলে জড়িয়ে পড়ে আছে মেঘনার পাড়ে। সোনাপুরের একটি বাগানে গাছের ডালে এক মহিলার লাশ ঝুলছে। এমনিভাবে মনপুরা, চরফ্যাশন, লালমোহন, তজুমুদ্দিন ও দৌলতখানসহ সমগ্র জেলায় মানুষ আর গবাদি পশু সেদিন বঙ্গোপসাগরের উত্তাল জলে ভেসে গেছে। জন-মানুষ শূণ্য হয়ে পড়েছিলো দ্বীপজেলা ভোলা।

ভয়ানক সেই ঝড়ের কথা এখনো ভুলেনি উপকূলের মানুষ। গাছে ঝুলে ছিল অনেকের মরদেহ। বাঁচার লড়াই করেছেন অনেকে। কেউ বেঁছেছেন তবে বেশিরভাগই তাদের স্বজনদের হারিয়েছেন।

এদিকে উপকূলবাসীদের অভিযোগ, উপকূলে একের পর এক দুর্যোগ আঘাত হানলেও আজো উপকূলবাসীর জন্য টেকশই বেড়িবাঁধ কিংবা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ হয়নি। প্রতিবছরই ঝড় আসে। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু  এখানের মানুষ মৃত্যু ঝুঁকিতে ভোগে।

ঘূর্ণিঝড় আসলেই মৃত্যু আতংক তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।

ভয়েস টিভি/ডিএইচ

You may also like