আগামী ২ এপ্রিল বাংলাদেশ পরিচালক সমিতির নির্বাচন। এতে সভাপতি হিসেবে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। তার বিপরীতে আছেন আরও দুইজন প্রার্থী কাজী হায়াৎ ও শাহ আলম কিরণ প্যানেল। নির্বাচন উপলক্ষে এফডিসি পাড়া বেশ জাকজমকপূর্ণ। সেখানে পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানকে দেখা যাচ্ছে বেশ ফুরফুরে মেজাজে।
বর্তমান ও অতীত নিয়ে কথা হয় এই পরিচালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমান চলচ্চিত্র একেবারে থমকে আছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি চলচ্চিত্র আবার আগের দিন ফিরে পাবেন বলে আশাবাদী এই পরিচালক।
তিনি আরও বলেন, ‘সবাই শুধু এখানে এসে কথা বলে। কাজ করার মানুষ খুব কম। শেষে এসে চলচ্চিত্রের প্রতি নিদারুণ ভালোবাসা দেখিয়েছেন শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার সেলিম চেয়ারম্যান। বর্তমান চলচ্চিত্রের দুর্দিনে ১০০ পরিচালককে নতুন করে কাজে লাগিয়ে যেন চলচ্চিত্রে আবার নতুন প্রাণ ফিরিয়ে এনেছেন। সকল পরিচালকের পক্ষ থেকে তাকে সাধুবাদ জানান।’
বর্তমানে চলচ্চিত্র ধ্বংসের প্রধান কারণ হিসেবে বড় বড় চিত্রনায়ক আর চিত্রনায়িকাদের দায় কি আছে এই ইন্ডাষ্ট্রিতে- এমন প্রশ্নের জবাবে এই পরিচালক বলেন, এটি অবশ্যই সত্য। আমরা যখন আগে কাজ করেছি তখন ক্যামেরা অন করা হতো সকাল ৭টায়। আর এখন বড় বড় নায়করা সেটে আসেন সন্ধ্যা ৭টায়। এ ব্যর্থতা আসলে নিজেরই বলে স্বীকার করেন তিনি।
এছাড়াও তার হাতে বাংলাদেশের বড় বড় স্টার তৈরি হলেও নায়ক শাকিব খানের পারিশ্রমিক বেশ আকাশচুম্বি। এ কথা প্রসঙ্গ তিনি বলেন, ‘দেশীয় চলচ্চিত্রে এটি বিরল ইতিহাস। সেখানে চলচ্চিত্র অঙ্গণ ধ্বংসের মুখে সেখানে এমন কথা শুনলে সত্যি হাসি পায়। আমার হাতে তার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার অভিষেক হলেও নায়ক সালমান শাহ, মৌসুমী, শাকিল খান, পপি কই তারা তো এরকম পারশ্রমিক হাকিয়ে নেননি। এটি আসলে সবার ব্যক্তিত্ব। মানুষের টাকা দরকার আছে। সেটি তুলনামূলক সব দিকে হিসাব করেই নিতে হবে। এখন আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এই অঙ্গণকে বাঁচাতে তারপর না হয় অন্য হিসাব।’
দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় রাজত্ব করা শাকিব খানের পাশাপাশি নতুন নায়ক কেন আর আসেনি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন নায়ক তৈরির দায় কি শুধু আমার ছিল। আমি যা পেরেছি তা তো করেছি। সবারই আমার মতো নতুন নায়ক-নায়িকা তৈরি করার দরকার ছিল। তারা কেন করেনি। আজ যদি আমাদের ইন্ডাষ্ট্রিতে ৮ থেকে ১০টা নায়ক-নায়িকা জুটি থাকতো তাহলে হয়তো ১২০০ প্রেক্ষাগৃহ থেকে মাত্র ১০০ প্রেক্ষাগৃহে চলে আসতো না। সেখানে যদি নিজেকে অনেক বড় ভাবেন সেটিও তার ব্যর্থতা বলে আমি মনে করি। তবে এই ইন্ডাষ্ট্রি এক শাকিব খানকে দিয়ে টিকানো দিয়ে সম্ভব নয়। আমাদের অবশ্য বিকল্প চিন্তাই করতে হবে। আমি নির্বাচনে নির্বাচিত হলে প্রথমত নতুন নায়ক-নায়িকা খোঁজার বিষয়টি আমাদের কমিটিতে বেশি প্রধান্য দিবেন বলে জানান এই জনপ্রিয় পরিচালক।
এই পরিচালকের হাত ধরে একাধিক জনপ্রিয় নায়কের অভিষেক এর ছোঁয়া রয়েছে। সোহানুর রহমান সোহান মূলত ১৯৭৭ সালে পরিচালক শিবলি সাদিকের সহকারী হিসেবে তার চলচ্চিত্র কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি শহীদুল হক খানের ‘কলমিলতা’, এজে মিন্টুর ‘অশান্তি’ ও শিবলি সাদিকের ‘ভেজা চোখ’ চলচ্চিত্রে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। একক ও প্রধান পরিচালক হিসেবে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’। পরিচালনায় তার প্রথম সফলতা আসে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এছাড়াও কয়েকশত ব্যবসায়িক চলচ্চিত্র তার ঝুলিতে দেখা যায়।
ভয়েসটিভি/এএস