দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করা সেই জমজ শিশু সাফিয়া-মারিয়ায় এখন সৌভাগ্য পরিবারটির জন্য। দুধের বদলে ময়দা গোলা পানি খেতে খেতে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাদের ভর্তি করা হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। মূলত এরপরই মানবিক এ ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর পরিবারটির বোঝা হয়ে থাকা সেই দুই যমজ শিশুই ভাগ্য বদলে দিল অসহায় মা-বাবার।
১৮ অক্টোবর রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় পরিবারটিতে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সাফিয়া ও মারিয়ার বাবা আনিসুর রহমানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে একটি ইজিবাইক। যেটির উপার্জনের টাকা দিয়েই সংসার চলবে তাদের। বাচ্চারাও খাবার অসুবিধা থেকে মুক্তি পাবে। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহমেদের উদ্যোগে বাস্তবায়ন হয়েছে এটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারবর্গ মিলে এই সহায়তা করেছেন বলে জানিয়েছেন সহকারী অধ্যাপক মনির উদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, পরিবারটি অসহায় ও অভাবের তাড়নায় তারা দুধের বদলে ময়দা গোলা পানি খেয়েছে টানা কয়েক মাস এটি ব্যথিত করেছে আমাদের। বাচ্ছা দুটির বাবা পায়ের ভ্যান চালাই। তার কাছ থেকে জেনেছি, পায়ের ভ্যানে এখন আর রোজগার হয় না। মানুষ উঠতে চাই না। পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্য নিয়ে সবদিক বিবেচনা করে একটি ইজিবাইক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেটি তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এটি থেকে রোজগার দিয়েই এখন থেকে আনিসুর রহমান সংসার চালাবেন ও বাচ্ছা দুটিকে ভালোভাবে দেখবেন।
শিশু সাফিয়া ও মারিয়ার বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুর গ্রামে। মানবিক এ ঘটনাটি নিয়ে গত ৩১ জুলাই ভয়েস টিভিতে সংবাদ প্রকাশের পর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরীসহ অনেক হৃদয়বান মানুষ তাদের পাশে দাঁড়ান। বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন।
গত ৭ অক্টোবর শিশু দুটির জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দের দুই কক্ষের একটি ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যে দুই কক্ষের ঘর বরাদ্দ আসবে প্রথম ধাপেই দুই শিশু মনির জন্য দুই কক্ষের একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে। তারা খুব অসহায় মানুষ। কথা বলে জেনেছি, তাদের সামান্য পরিমাণ নিজস্ব জমি রয়েছে তবে থাকার জন্য ঘর নেই।
ইজিবাইক হাতে পাওয়ার পর সাফিয়া-মারিয়ার বাবা আনিসুর রহমান জানান, আমি খুব খুশি। যে স্যারেরা মিলে আমার বাচ্ছাদের জন্য আমাকে এই সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি চিরঋনি হয়ে থাকবো।
যমজ শিশুর মা স্বপ্না বেগম বলেন, ঘর হবে বাচ্ছাদের দুধের সমম্যার সমাধান হয়েছে। এখন ইজিবাইকও পেয়েছি। আমাদের আর অভাব থাকবে না। এতেই আমরা চলতে পারবো। যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ইজিবাইক প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইজ্ঞিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. হযরত আলী। তিনি বলেন, সংবাদটি দেখার পর মনিরউদ্দীন স্যার মূলত পরিবারটিকে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ গ্রহন করেন। সে লক্ষ্যেই শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারবর্গ মিলে এই পরিবারের প্রধান আনিচুর রহমানকে একটি নতুন ইজিবাইক ক্রয় করে দেওয়া হলো। এছাড়া বাচ্ছা দুটির জন্য প্রতিমাসে দুধ ও কিছু খাদ্য সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হবে। সেটি এক থেকে দেড় বছর চলমান থাকবে। আমরা তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখবো।
ভয়েসটিভি/এএস