Home সারাদেশ এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে মূল চালকই ছিলেন না

এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে মূল চালকই ছিলেন না

by Mesbah Mukul

‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চের সার্ভে সনদে মাস্টার-চালক হিসেবে যে ৪ জনের নাম রয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের সময় তাদের কেউই পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন না। তদন্ত কমিটির সদস্যরা বলছেন, ত্রুটি ও ঘাটতি ছিল লঞ্চের অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থায়ও। এ ছাড়া আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই লঞ্চটি পাড়ে নিয়ে গেলে কিংবা লঞ্চের কর্মীরা সটকে না পড়লে হতাহতের ঘটনা কমানো যেত বলেও মনে করেন কমিটির সদস্যরা।

একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান। তিনি বলেছেন, আগুন লাগার পর লঞ্চটি পাড়ে থামিয়ে রাখলে এত মানুষের মৃত্যু হতো না।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, তদন্তের ক্ষেত্রে মালিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তদন্তে দেখা গেছে, লঞ্চের মাস্টার, সুকানি, চালক ও অন্য কর্মীদের অগ্নিনিরাপত্তার কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, সুগন্ধা নদীতে আগুন লাগার পর লঞ্চটি দ্রুত ঘাটে নোঙ্গর করলে এত হতাহতের ঘটনা ঘটত না। তাদের অনুমান, লঞ্চে আগুন লাগার পরে তা কিনারে ভেড়ানো হয় ঠিকই; সেখানে অনেক যাত্রী লঞ্চ থেকে নেমেও যান। কিন্তু লঞ্চের কর্মীরা অন্য যাত্রীদের না বাঁচিয়ে সটকে পড়েন। এর পর সম্ভবত স্রোতের তোড়ে লঞ্চটি আরও ৩০-৫০ মিনিট ভেসে অন্য পাড়ের দিকে চলে যায়। ততক্ষণে লঞ্চটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

অভিযান-১০ লঞ্চটি চলাচল করত ঢাকা-বরগুনা রুটে। ওই নৌপথে ৬টি লঞ্চের চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। এগুলো হলো- ফারহান-৮, অভিযান-১০, রাজহংস-৮, শাহরুখ-২, রাজারহাট বি ও পূবালী-১। এগুলোর মধ্যে চারটি লঞ্চের মালিক একই কোম্পানি। বাকি দুটি লঞ্চের মালিক দুটি কোম্পানি। ওই রুটে চলাচল নিয়ে এসব কোম্পানির মালিকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ রয়েছে। ওই বিরোধ নিষ্পত্তিতে গতকাল রবিবার মালিক-সংগঠনের কার্যালয়ে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকের আগেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নানা রকমের সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

ওই লঞ্চের সার্ভে সনদে প্রথম শ্রেণির ইনচার্জ মাস্টার হিসেবে কামাল হোসেন খান, দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার ইনচার্জ হিসেবে দেলোয়ার হোসেন, প্রথম শ্রেণির ইনচার্জ ড্রাইভার হিসেবে মহিউদ্দিন স্বপন ও দ্বিতীয় শ্রেণির ড্রাইভার হিসেবে রনি আহমেদ সজলের নাম রয়েছে। কিন্তু লঞ্চটি ছাড়ার সময় ভয়েজ ডিক্লারেশনে প্রথম শ্রেণির ইনচার্জ মাস্টার হিসেবে মো. রিয়াজ শিকদার, দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার খলিলুর রহমান, প্রথম শ্রেণির ড্রাইভার মাসুম বিল্লাহ ও দ্বিতীয় শ্রেণির ড্রাইভার আবুল কালামের নাম ছিল। লঞ্চটির চারজন মাস্টার ও ড্রাইভার পরিবর্তন করা হলেও নৌ অধিদপ্তরে মাত্র একজনের নাম ‘এনডোর্স’ করা হয়।

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সেন পরিচালক (অপারেশন মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। পুরো তদন্ত শেষ করতে আমাদের প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। তারপর আমরা অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে পারব। আগুন লাগার পর লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দ্রুত লঞ্চটি পাড়ে থামিয়ে রাখলে এত লোকের মৃত্যু হতো না। যেহেতু নদী খুব ছোট। কিন্তু লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সেটা করেনি; যার কারণে হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে।’

ভয়েসটিভি/এমএম

You may also like