Home জাতীয় ঢাকার বুকে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

ঢাকার বুকে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

by Newsroom
এলিভেটেড-এক্সপ্রেসওয়ে

ঢাকার বুকে ১৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ  এলিভেটেড এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। যানজটের নগরী ঢাকাকে স্বস্থি দিতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বমূলক মালিকানা পিপিপি প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। মেট্রোরেলের পাশাপাশি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ফলে গতি আসবে রাজধানীর বুকে। বাড়বে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের খুব কাছে কাওলা থেকে বনানী পর্যন্ত ৭১.২৩ একর জমির ওপর প্রথম ধাপে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির কাজ শুরু হয়। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের সাথে চুক্তি করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এর আওতায় ওই বছরে কাজে একর পর এক পাইলিং জমি অধিগ্রহণ বিম ক্রস বিম পিলার নির্মাণ হয়েছে। কাওলার বেশিরভাগ কাজই শেষ করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। আরো ২ বছর আগে কাজটি হস্তান্তর করার কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, অর্থ সংকটের কারণে এখনো সেটি সম্ভব হয়নি।

একনজরে  প্রকল্প-

আয়ত : মোট ২২০ একর জমির ওপর ১৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ

ব্যয় :  প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছে ৮হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।

সুবিধা :-

*ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণের যোগাযোগ সহজীকরণ।

*এশিয়ান হাইওয়ে করিডোরের সেবা নিশ্চিতকরণ

*যাত্রাসময় কমানো

*জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব।

অর্থ সংকটে বছরের পর বছর ঝুলে থাকার পর অবশেষে এ বছরের জুলাই থেকে গতি পেয়েছে ঢাকার প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত প্রকল্পের প্রথম ধাপ শেষ করে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। ২০১৫ সাল থেকে নির্মাণ শুরু হওয়া এ প্রকল্প তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গেল ৫ বছরেও তা শেষ করা যায়নি। শুরুর প্রথম তিন বছরে কাজ হয়েছিল মাত্র ১০ শতাংশ। এ অবস্থায় ২০১৭ সালে বিনিয়োগে ব্যর্থ হওয়ায় ইটাল থাইয়ের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে চেয়েছিল সরকারের সেতু বিভাগ।

আরো পড়ুন- গণপরিবহনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

এ সময় অর্থ জোগাড়ে চীনের সিনোহাইড্রোকে ৪৯ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে -এর কাজ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রতি দেয় ইটাল থাই। কিন্তু তাতেও গতি পায়নি প্রকল্প। এর মধ্যে আরও প্রায় আড়াই বছর কেটে গেলেও অর্থ যোগান নিশ্চিত হয়নি। অবশেষে চায়না শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক এন্ড টেকনিক্যাল করপোরেশন গ্রুপ লিমিটেড কে ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রোকে ১৫ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করে ইটাল থাই ।

প্রকল্পের পাইল ড্রাইভিং কলাম, ক্রসবিম এবং কোনো কোনো অংশে আই গার্ডার স্থাপন শেষ হয়েছে। এখন দ্রুত আই গার্ডার বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত বসিয়ে দিয়ে এটি চালু করা হবে। বনানী থেকে কমলাপুর পুরোটাই রেললাইনের উপরে ছাদের মত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যাবে। নিচে রেললাইন থাকায় কাজের প্রক্রিয়া বেশ জটিল হবে। এজন্য চীন থেকে স্পেশাল পাইল ড্রাইভিং মেশিন নিয়ে আসা হয়েছে। এর মাধ্যমে কাজের সময় ট্রেন চলাচলে সমস্যা হবে না।

বলা হচ্ছে, রাজধানীর এক লাখ যানবাহন এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করবে। ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে গাড়ি। রাজধানীর ভেতরে ৩১ টি স্থান থেকে উড়ালপথে উঠানামা করবে গাড়ি। ৫ থেকে ৬ তলা ভবনের সমান উঁচু হচ্ছে উড়াল এ সড়কপথ।শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে কাওলা থেকে শুরু হয়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে যাচ্ছে এই উড়াল সড়কপথ। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। থাইল্যান্ড ভিত্তিক ইটাল-থাই ও চীনের সিনোহাইড্রো ও সিএসআই শেয়ার ভাগাভাগি করে এটি বাস্তবায়ন করছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নের ধাপঃ

               আয়তন                                               অবস্থান

১. ১ম ধাপ-এক্সপ্রেসওয়ে দৈর্ঘ্যের ৭.৪৫ কি:মি।   -বিমানবন্দর সড়ক-বনানী ফ্লাইওভার রেল ক্রসিং

২. ২য় ধাপ এক্সপ্রেসওয়ে দৈর্ঘ্যের ৫.৮৫ কি.মি।    -বনানী-মগবাজার রেল ক্রসিং পর্যন্ত

৩.৩য় ধাপ-এক্সপ্রেসওয়ে দৈর্ঘ্যের অবশিষ্টাংশ।    -মগবাজার-কুতুবখালি

প্রাইভেট কার থেকে শুরু করে সব ধরণের গাড়ি এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলার সময় ১০০ থেকে ৪০০ টাকা টোল দিবে। কোনো ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়িকে থামতে হবে না। মিনিট বিশেকের মধ্যেই বিমানবন্দর থেকে মগবাজার হয়ে কমলাপুর নামা যাবে এবং আধঘন্টায় গিয়ে নামা যাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের যাত্রাবাড়ি অংশের কুতুবখালিতে।

 

চীনের সিনোহাইড্রো আসার পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে নতুন করে কাজ শুরু করা হয় মাসখানেক আগে।বনানী ওভারব্রিজের পাশে মুল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। মিক্সার মেশিন বিম স্থাপন সংযোগ আই গার্ডার নির্মাণে ব্যস্ত শ্রমিকরা। একাজে চীনের প্রকৌশলী এবং সহযোগীরা সাহায্য করছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে কাজে গতি আনার কথা বলা হলেও চীনের নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের দেখা যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে এই কাজে গতি ফিরেছে তাদের ত্বত্ত্বাবধানে।

পুরনো অ্যালাইনমেন্ট অনুযায়ী লিংকটি হাতিরঝিল লেকের মাঝামাঝি এবং পান্থকুঞ্জ হয়ে মুল এক্সপ্রেসওয়েতে সংযুক্ত হওয়ার কথা ছিল। এই সংযোগের কারণে পুরান ঢাকা ও ধানমন্ডির বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ শতাংশ যানবাহন প্রবেশ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল এবং পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করবে। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকাকে বাইপাস করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। এর ফলে ঢাকা ও এর আশপাশের অংশে যানজট দূর হবে। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ২০ মিনিট।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসয়ে

ঢাকার বুকে নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসয়ে। ছবি : ভয়েস টেলিভিশন

জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে ২৫ বছর পর্যন্ত টোল আদায় করবে ইতাল-থাই। এরই মধ্যে এ প্রকল্পে ইতাল-থাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন। পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১১টি টোল প্লাজা, এর মধ্যে পাঁচটি হবে এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে রাজধানীর অন্তত ৩০ ভাগ গাড়ি চারলেন প্রশস্ত এ এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের সুযোগ পাবে বলে জানা গেছে। বলা হচ্ছে, প্রায় ১০০ বছরের স্থায়িত্ব থাকবে এটির। নির্মাণের সাড়ে ৩ বছর সহ ২৫ বছর পর্যন্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ডের ইটাল থাই এখান থেকে টোল আদায় করবে।দুই চাকার মোটরসাইকেল বা তিনচাকার গাড়িকে এটি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। এছাড়া, এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলের সময় জরুরি কারণে গাড়ি থামতে হলে কিছুদূর পরপর থাকা সার্ভিস লেনে দাঁড়াতে পারবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ নিয়ে সবচেয়ে বড় জটিলতা ও বাঁধা ছিলো জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপুরণ দেয়া। তবে নির্মাতা সংস্তাগুলোর মাধ্যমে ৯২ একরের মালিকদের ক্ষতিপুরণ দেয়া হয়েছে।

এবছর অথবা আগামি বছরের শুরুতে প্রথম অংশের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলেও বাকি দুটি অংশের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত খুলে দেয়া হবে না।

ভয়েস টিভি/ডিএইচ

You may also like