Home সারাদেশ এএসআইয়ের বাবা-মা থাকতেন গোয়ালে, ঘর দিলেন এসপি

এএসআইয়ের বাবা-মা থাকতেন গোয়ালে, ঘর দিলেন এসপি

by Shohag Ferdaus
এসপি

ছেলে শাহ জামাল ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের এএসআই। অসহায় কৃষকের ছেলে শাহ জামাল চাকরি জীবনে অবৈধ অর্থ বৈভবের মালিক হননি। তাই অর্থনৈতিক অবস্থারও পরিবর্তন হয়নি সংসারে। বৃদ্ধ বাবা-মা থাকতেন গোয়াল ঘরের কোণে, দুর্বিষহ অবস্থায়। তবে এই ছেলেই ছিল দরিদ্র মা-বাবার শেষ সম্বল। গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে ডিউটি শেষে থানায় ফেরার পথে বুকে বাঁশ ঢুকে নিহত হন শাহ জামাল। তিনি সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার এএসআই হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

পরে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের একটি টিম শাহ জামালের মরদেহ দাফনের জন্য তার গ্রামের বাড়ি যশোর জেলার শার্শা উপজেলার দূর্গাপুরে নিয়ে যান। দাফন শেষে ফিরে পুলিশ সদস্যরা ওই পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জানান সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে। এরপরই পুলিশ সুপার প্রতিশ্রুতি দেন অসহায় বাবা-মাকে একটি ঘর করে দেয়ার।

অবশেষে দুই কক্ষের একটি সেমিপাকা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। কথা রেখেছেন তিনি।

২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে উপস্থিত হয়ে নিহত পুলিশ সদস্যের পরিবারের কাছে বাড়ির চাবি হস্তান্তর করেন এসপি। এ সময় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন নিহত শাহ জামালের বাবা সুলতান বিশ্বাস ও মা হাওয়া বিবি। এখন থেকে আর গোয়ল ঘরের কোণে থাকতে হবে না এই বাবা-মাকে।

নিহত এএসআই শাহ জামালের বাবা সুলতান বিশ্বাস বলেন, আমার ছোট ছেলে মনিরুল কৃষিকাজ করে। তার অবস্থাও ভালো না। উপার্জন করত বড় ছেলে শাহ জামাল। ১৭ বছর পুলিশে চাকরি করে শাহ জামাল ঘরবাড়ি ও জমি কিছুই করতে পারিনি। ছুটিতে বাড়িতে এলে স্ত্রীকে নিয়ে আমাদের সঙ্গেই ভাঙা ঘরে ঘুমাত। সেই ছেলেটিও মারা গেল। এখন পুলিশ সুপার দুই কক্ষের একটি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। এতেই আমরা খুশি। বাকিটা জীবন এখানে একটু ভালো থাকতে পারব।

অন্যদিকে নিহত এএসআইয়ের মা হাওয়া বিবি ছেলেকে হারানোর শোক এখনও কাঁটিয়ে উঠতে পারেননি। এখনও ছেলের কথা মনে করে মাঝে মাঝে ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন।

ঘর পেয়ে তিনি বলেন, এক ছেলেকে হারিয়েছি। আরেকজন (পুলিশ সুপার) ছেলের মতো আমার থাকার ঘর তৈরি করে দিলেন। আমি তার জন্য দোয়া করি।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন শাহ জামাল। বসবাসযোগ্য একটি ঘরও ছিল না ওই পরিবারের। এএসআই শাহ জামালের পরিবার বাস করতেন গোয়াল ঘরের এক পাশে। ঘটনাটি জেনেই মর্মাহত হই। এরপরই উদ্যোগ নিই একটি মানসম্মত ঘর তৈরি করে দেয়ার। অবশেষে দুই কক্ষের একটি আধাপাকা বাড়ি করে চাবি হস্তান্তর করেছি। শেষ বয়সে যেন পরিবারটি একটু ভালো থাকতে পারে। বাড়িটির নাম দিয়েছি প্রতিশ্রুতি।

তিনি বলেন, ছেলে হারানোর শোক কোনো কিছুতেই পূরণ হওয়ার নয়। তবে জেলা পুলিশের এই উদ্যোগে শোকাহত মা-বাবার মনটা কিছুটা হলেও হালকা হবে। তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

গত ১০ সেপ্টেম্বর আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বাজারে ডিউটি করছিলেন এএসআই শাহ জামাল। ভোরে ডিউটি শেষে আশাশুনি থানায় ফেরার পথে চাপড়া সেতু এলাকায় অবৈধ পার্কিংয়ে থাকা ট্রাকে রাখা বাঁশ বুকে ঢুকে গুরুতর আহত হন তিনি। উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like