ময়মনসিংহের রেজিয়া ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় সাত বছরের শিশু সাজ্জাদ হোসেনের মৃত্যুর অভিযোগে সাড়ে চারমাস পর কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার চর লক্ষীপুর কাছিমুল উলুম মাদ্রাসার কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়। সে ওই গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাত হোসেনের উপস্থিতিতে শিশু সাজ্জাতের মরদেহ উত্তোলন করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর আবুল কাশেমসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পিবিআই ইন্সপেক্টর আবুল কাশেম বলেন, নিহত শিশুর মা আনোয়ারা বেগম ময়মনসিংহ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত মামলাটি পিবিআই এ হস্তান্তর করেন। একই সাথে গত বছরের ১৫ নভেম্বর মরদেহ উত্তোলনের জন্যে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশ দেন। পরে ২ ডিসেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের পর আজ কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মরদেহ ময়না তদন্ত করে আবারও দাফনের ব্যবস্থা করা হবে। শিশুর পরিবার যেন সুষ্ঠু বিচার পায় তার চেষ্টা করা হবে।
নিহত শিশুর মা আনোয়ারা বেগম জানান, ১ অক্টোবর সাজ্জাতের এপেন্ডিসাইডের ব্যথা উঠলে নগরীর চরপাড়ার ব্রাহ্মপল্লী এলাকার রেজিয়া ক্লিনিকের মালিক হাসানুজ্জামান তার ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন। ভর্তি হওয়ার পর ওই রাতেই অপারেশন করতে হবে বলে জানান ক্লিনিকের মালিক হাসানুজ্জামান ও তার স্ত্রী পরিচালক সাবিনা ইয়াসমিন। অপারেশন করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জন ডিসি বর্মণ ও অজ্ঞানের ডাক্তার টিকে সাহা এবং ডাক্তার প্রীতি রঞ্জন রায়।
তিনি জানান, তাড়াহুড়া করে অপারেশন করে ডাক্তাররা চলে গেলে ছেলের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তখন ক্লিনিকের লোকজনের সহযোগিতা চাইলে কেউ এগিয়ে আসেনি। ছেলের খারাপ অবস্থার জন্যে তারা কোন দায়ভার নিবে না বলে ভোরে কর্তৃপক্ষ তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়। পরদিন সকালে ২ অক্টোবর সাজ্জাতকে কোলে করে নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও জানান, ছেলে মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হলে মামলাসহ বড় ধরনের ক্ষতি করা হবে বলেও হুমকি দেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। দুই ছেলে নিয়েই মানুষের বাড়িতে কাজ করে তার সংসার চলতো। অপারেশনের টাকাও ঋণ করে দিয়ে ছিলেন। ছেলে মারা গেলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের সহযোগিতা বা শান্তনা দেয়নি।
কান্নাজড়িত কন্ঠে বিচার দাবি করে আনোয়ারা বলেন, রেজিয়া ক্লিনিকের চিকিৎসকরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাত হোসেন বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশেই মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। পর্ববর্তীতে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারন করে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন পেশ করবেন।
ভয়েস টিভি/এমএইচ