Home মুক্তমত করোনা পরবর্তী স্বাস্থ্য জটিলতা

করোনা পরবর্তী স্বাস্থ্য জটিলতা

by Newsroom

সাধারণত Mild and Moderate ইনফেকশন ১৪ দিনে এবং Severe and Critical ইনফেকশন ২৮ দিনে ভালো হয়। এর পরেও যদি কোন রোগীর করোনা সংক্রান্ত জটিলতা থেকে যায় তখন এটাকে Post Covid কিংবা Long Covid Syndrome বলা হয়ে থাকে।

এই জটিলতা বিভিন্ন রুপে প্রকাশ পেতে পারে। যার মধ্যে প্রধানতম হলো ডি-কন্ডিশনিং সিন্ড্রোম যার মানে হলো প্রচণ্ড দুর্বলতা – মাংসপেশীর শক্তি কমে যাওয়া এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে না পারা। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে যেমন রোগী যদি ৫ মিনিট হাটতে পারে সময়ের ব্যবধানে এটা আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ফিজিওথেরাপি করা যেতে পারে।

এই সমস্যা উপসর্গযুক্ত এবং উপসর্গবিহীন উভয় প্রকার করোনা রোগীর ক্ষেত্রেই হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন অংগে অসুস্থতা হতে পারে যেমন ফুসফুসে কাশি-শ্বাস কষ্ট- অক্সিজেন কমে যাওয়া – অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠা ইত্যাদি সমস্যা দীর্ঘদিন থাকতে পারে।

হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ছন্দ (Rythm) এ সমস্যাসহ মায়োকার্ডাইটিস হতে পারে। স্নায়ু তন্ত্রের সমস্যার মধ্যে -মনোসংযোগ কমে যাওয়া- মাথা খালি খালি লাগা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে খিঁচুনীও হতে পারে। মানসিক অসুবিধা হিসাবে Post Traumatic Stress Disorder [ PTSD] যার লক্ষণ হিসেবে হতাশা-অবসাদ গ্রস্ততা- অস্বাভাবিক আচরণ -আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেখা দিতে পারে।

কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়া; নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া।  তবে অনেক ক্ষেত্রে তিন মাসের মধ্যে এটা কমে যায়। চর্মরোগের মধ্য একজিমা – শরীরে ফুস্কুড়ি পড়া ইত্যাদি হতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ মত এসকল সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হওয়াই বাঞ্চনীয়। এরইমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে পোষ্ট কোভিড ক্লিনিকের কার্যক্রম চালু আছে। আশা করি এটার পরিধি আরো প্রসারিত হবে।

সাধারণত Mild & Moderate Covid ১০ দিন এবং Severe & Critical Covid ২১ দিন ভাইরাস ছড়াতে পারে। একবার কোভিডে আক্রান্ত হলে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে সুস্থ ঘোষণার পরেও রোগী অসুস্থ বোধ করছেন বিশেষ করে জ্বর জ্বর ভাব ( তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রির নীচে) থাকে এটা পোস্ট কোভিডের ই একটি অংশ। কোন কারণে ভাইরাস শরীর থেকে পুরো পুরি অপসারিত হতে না পারলে শরীরে ইমিউনোলজিক্যাল প্রতিক্রিয়ায় এ সকল উপসর্গ দেখা দেয় এবং পরীক্ষা করলে পুনরায় পজিটিভ পাওয়া যেতে পারে।

তবে এরইমধ্যে যুক্তরাজ্যে আবিষ্কৃত নতুন ধরনের ভাইরাস দ্বারা পুনঃসংক্রমন ঘটতেও পারে। পুনশ্চঃ যাদের কনফার্মড কোভিড হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে তাদের আর ভ্যাক্সিন নেয়ার প্রয়োজন হবে না ৷

কোভিডে মৃত্য হার সাধারণ ভাবে- এক শতাংশ। তবে যাদের বয়স ষাটোর্ধ্ব  তাদের ক্ষেত্রে দশ শতাংশ এবং সত্তর থেকে আশি বছরের মধ্য এটা ১৫-২০ শতাংশ। ডায়বেটিস -উচ্চ রক্তচাপ- ষ্ট্রোক-স্থুলকায় (বিএম আই ৩০ এর উপর); সিওপিডি-হাঁপানী- ইমিউনোডেফিসিয়েন্সী ইত্যাদি ক্ষেত্রে মৃত্যুহার বেশি। আমাদের দেশে মৃত্যুহার কম প্রদর্শিত হওয়ার একটা বড় কারণ হলো এখানে বৃদ্ধ লোকের সংখ্যা  কম। উন্নত দেশে বৃদ্ধাশ্রমে অনেক লোকের বসবাসের কারণে তাদের আক্রান্ত ও মৃত্যু হার বেশি প্রদর্শিত।

ভ্যাক্সিনের প্রতি আমাদের দুর্বলতা এবং অতি নির্ভরশীলতা কমাতে হবে কারণ ভ্যাক্সিন আসলেও পর্যায়ক্রমে এটি সবাই পেতে অনেক সময় লেগে যাবে তাই ২০২১ বছর পুরোটাকেই আমরা সামাজিক দূরত্ব-হাত ধোয়া ইত্যাদি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা এবং  শতভাগ লোককে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করণের পাশাপাশি বাধ্য করতে হবে।

করোনা মহামারীর আনুষঙ্গিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে আমদেরকে কমপক্ষে আরো তিনটি অতিমারী মোকাবেলা করতে হবে যেমন- ডিকন্ডিশনিং-ডায়াবেটিস-মানসিক অসুস্থতা যার জন্য প্রয়োজন হবে দীর্ঘ কালীন সুসংগঠিত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।

লেখক : সভাপতি বিএমএ ফেনী

ভয়েস টিভি/ডিএইচ

You may also like