Home সারাদেশ করোনা সন্দেহে নদীতে ফেলে দেয়া লাশ দুই দিন পর উদ্ধার

করোনা সন্দেহে নদীতে ফেলে দেয়া লাশ দুই দিন পর উদ্ধার

by shahin

সংবাদদাতা : হতভাগী পোশাক শ্রমিক মৌসুমী (২২) মরদেহ করোনা সন্দেহে তিস্তা নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে ২ দিন পর রোববার ওই নারীর মরদেহ তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে দাফন করা হয় ।
মৃত মৌসুমীর বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামের= । ওই গ্রামের গোলাম মোস্তফার স্বামী নিগৃহীতা মেয়ে। তিনি একই উপজেলার বাউড়া ইউনিয়নের সরকারের হাট এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী।

২৪ মে রাতে উদ্ধার করা লাশ সোমবার ২৫ মে ঈদের দিন বিকেলে লারমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় স্থানীয় পুলিশের উপস্থিতিতে জানাজা শেষে মৃতের নিজ গ্রামে দাফন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান রহুল আমিন বাবুল ।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানান, বাউড়া ইউনিয়নের সরকারের হাট এলাকার আবুল কালামের ছেলে মিজানুর রহমানের সঙ্গে ৬ মাস আগে বিয়ে হয় পোশাক শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে একাই গাজীপুরে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন মৌসুমী। গত বৃহস্পতিবার ২১ মে শারীরিকভাবে অসুস্থতা অনুভব করলে ট্রাক যোগে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। রংপুরের তাজহাট এলাকায় পৌঁছালে ট্রাক চালক মৃত দেখে তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে তাজহাট থানা পুলিশ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান। পরদিন শুক্রবার (২২ মে) খবর পেয়ে মৃতের বাবা গোলাম মোস্তফা তাজহাট থানায় গিয়ে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন। মেয়ের মরদেহ বুঝে নিয়ে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নিসাদকে মোবাইলে বিষয়টি অবগত করে নিজ এলাকায় দাফনের অনুমতি চান। কিন্তু চেয়ারম্যান ওই মরদেহসহ পুরো বাড়ি এবং মরদেহবাহী গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ মৃতের বাবা গোলাম মোস্তফার।

নিরুপায় হয়ে গরিব বাবা মেয়ের মরদেহ দাফন করতে তাজহাট এলাকার একজন লাশবাহী গাড়ি চালককে ৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। তারা মরদেহ দাফনের আশ্বাস দিয়ে মেয়ের বাবাকে বাড়ি পাঠিয়ে মরদেহটি তিস্তা নদীতে ফেলে দেন।

দুইদিন পরে স্থানীয়দের খবরে রোববার (২৪ মে) রাতে উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন গ্রামে তিস্তা নদী থেকে সরকারি ব্যাগে মোড়ানো অজ্ঞাত মরদেহটি উদ্ধার করে আদিতমারী থানা পুলিশ।

সোমবার (২৫ মে) ঈদের নামাজ শেষে আদিতমারী থানা পুলিশ মরদেহটির জানাজা শেষে কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নিতেই পরিচয় শনাক্ত করেন মৃতের বাবা গোলাম মোস্তফা। অবশেষে আদিতমারী থানা পুলিশ পাটগ্রাম থানা পুলিশের সহায়তায় নিজ গ্রামে মৃত মৌসুমীকে দাফন করে।

মৃত মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, হাতে-পায়ে ধরেও মরদেহ গ্রামে নিতে দেয়নি আবু সাঈদ নিসাদ চেয়ারম্যান। বাধ্য হয়ে একজন চালককে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি দাফন করতে। তারাও দাফন না করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। অবশেষে আবারও মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করতে হলো আদিতমারী থানায়। পুলিশের পাহারায় মেয়ের মরদেহ দাফন করি। মেয়ের মরদেহ নিয়ে যারা ব্যবসা করেছে তাদের বিচার দাবি করেন তিনি।

বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নিসাদের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারি ব্যাগে মোড়ানো মর্গের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ইউডি মামলা করা হয়েছে। মৃতের পরিচয় জানার পরে মেয়ের বাবার আকুতি শুনে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দুই থানা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে মরদেহ তার গ্রামে দাফন করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন মোহন্ত জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে ওই নারীর দাফন করা হয়েছে। পরিবার অভিযোগ দিলে অব্যশই ব্যবস্থা নেওয়া অবশ্যই হবে।

You may also like