Home সারাদেশ কালো সোনা চাষে ব্যস্ত ফরিদপুর

কালো সোনা চাষে ব্যস্ত ফরিদপুর

by Newsroom
কালো সোনা

স্বর্ণের রঙ বা দাম কিংবা ক্যারেট পার্থক্যের কারণে ‘কালো সোনা’ বলা হয় না। পেঁয়াজের বীজের কালো দানা ফরিদপুরে ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে যে দামে বীজ বিক্রি হচ্ছে তাতে এটা সোনার চেয়ে কোনো অংশে কম না। এজন্যেই পেঁয়াজের বীজকে সবাই কালো সোনা বলে আখ্যায়িত করেছে।

পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকে সামনে রেখে ‘পেঁয়াজের বাল্ব’ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফরিদপুরের চাষিরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বাম্পার ফলনের আসা তাদের। এখন চলছে পুরোদমে বাল্ব রোপনের কাজ।

এ বছর চার দফা বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে জমি থেকে পানি না নামায় বাল্ব রোপণে কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। তবে এরই মধ্যে অনেক জমিতে বীজ উৎপাদনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তুলুনামূলক উচু জমিতে চাষাবাদ করে চাষিরা পেঁয়াজের বাল্ব রোপণ শুরু করেছে।

অনেক ক্ষেতে পেঁয়াজ গজিয়ে সবুজ আকার ধারণ করেছে। অনেক জমিতে চাষাবাদ চলছে। বীজ উৎপাদনে চাষিরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ফরিদপুরের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের জন্যে উপযোগী হওয়ায় এ জেলায় পেঁয়াজ বীজ চাষির সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশের মোট চাহিদার ৭৫ ভাগ পেঁয়াজ বীজ ফরিদপুর জেলার চাষিরা উৎপাদন করে থাকে। এ বীজের সিংহভাগ উৎপাদন করে থাকে অম্বিকাপুরের কৃষাণী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বিএডিসির এসএমই কৃষাণী সাহিদা বেগম। পেঁয়াজ বীজ চাষ করে হয়েছেন কোটিপতি। তাকে অনুসরণ করে এ অঞ্চলে প্রায় দুুই শতাধিক চাষি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে নেমেছে।

কৃষাণী সাহিদা বেগম বলেন, বৃষ্টির কারণে ১৫দিন পিছনে পড়ে গেছি। অন্যান্য বছর এই সময়ের আগে পেঁয়াজের বাল্ব লাগানো শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এবছর এখন পর্যন্ত ৩০ একর জমিতে বাল্ব লাগানো শেষ হয়েছে। এখনও আরও ৪/৫ একর লাগানো বাকি আছে।

এখন পুরোদমে চাষাবাদ চলছে, প্রতিদিন মাঠে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করছি, মাঝে মাঝে রান্নাও করতে হয়। তাদের সঙ্গে না থাকলে ঠিকমতো কাজ করে না।

তিনি আরো জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর জমির পরিমাণ বেড়েছে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করছে মাঠে। একদল ক্ষেতে বাল্ব রোপন করছে, একদল সেচ দিচ্ছে, কেউ সার দিচ্ছে, কেউ ক্ষেতের আগাছা পরিস্কার করছে।

কালো সোনা

নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে বীজ উৎপাদনের কার্যক্রম চলবে একটানা মে মাস পর্যন্ত কোন প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে। ভাল ফলন পাব বলে আসা করছি।

বীজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের দাবি জানিয়ে এই কৃষাণী বলেন, পেঁয়াজ বীজ লাভজনক কৃষি, তবে এতে ঝুঁকিও আছে। ১ একর জমি চাষ করতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খরচ হয় এক লাখ ৪০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। আর এক একর জমি থেকে ৩০০ কেজি বীজ পাওয়া যায়।

সরকার পেঁয়াজ বীজ চাষিদের নয় মাসের জন্য ঋণ দিয়ে থাকে। কিন্তু এতে চাষিরা উপকৃত হতে পারে না। ঋণের মেয়াদ এক বছর করা হলে চাষিরা তাদের উৎপাদিত বীজ বিক্রি করে ঋণ পরিষোধ করতে পারবে। এ জেলায় প্রচুর পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের জন্যে কোনো ব্যবস্থা নেই।

সাহিদা বেগম আরো বলেন, দুই বিঘা জমি দিয়ে শুরু করেছিলাম পেঁয়াজ বীজ চাষ। ধীরে ধীরে জমির পরিমাণ বাড়িয়ে এখন এই অবস্থানে এসে পৌঁছিয়েছি। আমার চাষাবাদ দেখে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক পেঁয়াজ বীজ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। গত বছর ২০০ মণ বীজ পেয়েছিলাম। এ বছর ২২০ থেকে ২২৫ মণ বীজ পাবো বলে আসা করছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে আগামীতে আমরা আরও বেশি করে বীজ উৎপাদন করতে পারবো।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হজরত আলী বলেন, দেশের উৎপাদিত বীজের ৭৫ ভাগ ফরিদপুর জেলায় উৎপাদন হয়ে থাকে। এ জেলার বীজের গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলার চাষিরা ফরিদপুর অঞ্চলের বীজ সংগ্রহ করে থাকেন।

পেঁয়াজ বীজ চাষে চাষিদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন : পদ্মার চরে স্বপ্ন বুনছে ধান চাষিরা

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like