Home জাতীয় কী ছিল ‘জজ মিয়া’ নাটকে

কী ছিল ‘জজ মিয়া’ নাটকে

by Shohag Ferdaus

জজ মিয়া নাটকের কথা একালেও বেশ আলোচিত। এটি এখন প্রবাদে পরিণত হয়েছে। একজন নিরীহ মানুষকে জজ মিয়া সাজিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি বানিয়ে তৈরি করা হয় এ নাটক। মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের পরে যতবারই ২১ আগস্ট এসেছে এবং এ মামলার প্রসঙ্গ এসেছে ততবারই আলোচিত হয়েছে জজ মিয়া।

বহু নাটকীয়তার পর আলোচিত সেই মামলা থেকে অব্যাহতি পান জালাল উদ্দিন ওরফে জজ মিয়া। বর্তমানে এই মামলার অন্যতম সাক্ষীও তিনি। নোয়াখালীর সেনবাগে আলোচিত যুবক জজ মিয়ার বাড়ি।

সেসময়ে মূল ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিএনপি সরকার জালাল উদ্দিন ওরফে জজ মিয়ার ওপর চালায় নির্যাতনের স্টিমরোলার। ভয় দেখানো হয় ক্রসফায়ারের। পরে তদন্ত কর্মকর্তাদের শিখিয়ে দেয়া জবানবন্দী দিতে রাজি হন তিনি। এর পর সিআইডির কার্যালয়ে কয়েক দিন চলে আদালতে কীভাবে ১৬৪ ধারার জবানবন্দী দিতে হবে তার রিহার্সেল চলে। পরে তিনি জবানবন্দী দেন।

জানা যায়, ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে ধরে আনা হয় জালাল উদ্দিন নামের এই যুবককে। জজ মিয়াকে ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে একটি সাজানো জবানবন্দী আদায় করে সিআইডি। ২০০৫ সালের ২৬ জুন আদালতে দেয়া ওই কথিত স্বীকারোক্তিতে জজ মিয়া বলেছিলেন, তিনি আগে কখনো গ্রেনেড দেখেননি; গ্রেনেড ও বোমার মধ্যে পার্থক্য তিনি জানেন না। পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে তিনি অন্যদের সঙ্গে গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন। ওই বড় ভাইয়েরা হচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদ, মুকুল প্রমুখ।

সেসময় এ স্বীকারোক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে সিআইডি সাজানো ছকেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। ২০০৬ সালের আগস্টে এই নাটকের পেছনের ঘটনা ফাঁস করে দেন জজ মিয়ার ছোট বোন খোরশেদা বেগম। তিনি তখন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জজ মিয়াকে গ্রেফতারের পর থেকে সিআইডি তার পরিবারকে মাসে মাসে ভরণপোষণের টাকা দিয়ে আসছে। জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলা মামলায় রাজসাক্ষী করতে সিআইডির প্রস্তাবের কথাও ফাঁস করে দেন তিনি। এরপর জোট সরকার আর ‘জজ মিয়া গল্প’ নিয়ে এগোতে পারেনি।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন করে এই মামলার তদন্তের উদ্যোগ নেয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। অব্যাহতি দেয়া হয় জোট সরকারের আমলে গ্রেফতারর হওয়া জজ মিয়া, পার্থসহ ২০ জনকে। সেই জজ মিয়া এখন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। সামান্য আয়ে স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে কোনো রকমে চলে তার সংসার।

জজ মিয়া পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভাই, ‘জজ মিয়া’ নামটি শুনলেই আমার ভয় লাগে। জজ মিয়া নাম শুনলেই মানুষ আমারে সন্দেহ করে। সবাই আমারে এড়াইয়া যাইত। আপনাগো কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আপনারা আমারে স্বাভাবিক জীবনে ফিরাইয়া আনছেন।’

সেই সময়ের দুঃসহ স্মৃতি মনে করে জজ মিয়া বলেন, ‘ওই দিন (২১ আগস্ট ২০০৪) আমি বাড়িতে বাবুলের চায়ের দোকানে ছিলাম। টেলিভিশনে দেখে এলাকার লোকজনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। সেখানে গ্রামের মুরব্বিরা সবাই ছিলেন। কিন্তু সেই আমাকেই কি না বানানো হয় গ্রেনেড হামলাকারী! সেনবাগ থানায় এসপি রশীদ সাব (সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ) ক্রসফায়ারে মারার ভয় দেখিয়ে বলেন, যা শিখিয়ে দিব সেগুলো কোর্টে বলতে হবে। তাই প্রাণভয়ে কোর্টে স্বীকারোক্তি দিই।’

ভয়েস টিভি/নিজস্ব প্রতিবেদক/এসএফ

You may also like