Home সারাদেশ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু

ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু

by Amir Shohel

ঠাকুরগাঁও শহরের ফ্রেন্ডস এ্যাপোলো হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ওই রোগীর মৃত্যু হয় বলে জানান নিহতের স্বামী সাদেকুল ইসলাম।

নিহত মাহাবুবা আক্তার (২২) ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের শাসর গ্রামের সাদেকুল ইসলামের স্ত্রী।

নিহতের স্বামী সাদেকুল ইসলাম জানান, ১২ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় অন্তসত্ত্বা গৃহবধূ মাহাবুবা আক্তারের সিজারিয়ান অপারেশন করার জন্য ঠাকুরগাঁও শহরের ফ্রেন্ডস এ্যাপোলো হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. আবিদা সুলতানা আমার স্ত্রীর অপারেশন করেন এবং আমার স্ত্রীর ছেলে সন্তান জন্ম হয়। অপারেশন শেষে আমার স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে ক্লিনিকের ওয়ার্ডে রাখা হয়। এরপর চিকিৎসক ওই ক্লিনিক থেকে চলে যান।

তিনি বলেন, ওয়ার্ডের রাখার কিছুক্ষণ পর থেকে আমার স্ত্রী মাহাবুবা আক্তারে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এসময় ক্লিনিকে কর্মরত নার্সদের একাধিকবার বিষয়টি বললে তাদের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। ক্লিনিকের নার্স ও কর্তৃপক্ষ সেবা না দিয়ে উল্টো তারা আমাকে অকথ্য ভাষা গালিগালাজ করে। প্রায় দুই ঘন্টা পর একজন নার্স এসে আমাকে এক ব্যাগ রক্ত আনতে বলে। তাৎক্ষণিক রক্ত যোগার করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছে এনে দেয়া হলে তারা সেই রক্ত আমার স্ত্রীর শরীরে দেয়। তারপরও কোনভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না।

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মঙ্গলবার বিকেলে আমার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। এসময় ফ্রেন্ডস এ্যাপোলো হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ বলা হয় রোগীকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তাৎক্ষণিক একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে মাহাবুবা আক্তারকে দিনাজপুরে নেয়ার পথে সে মারা যায়।

সাদেকুল ইসলাম বলেন, অপারেশনের আগে আমার স্ত্রী একদম সুস্থ ছিল। তার কোন শারীরিক সমস্যা ছিল না। অপারেশনের পর থেকে প্রচুর পরিমাণ রক্তক্ষরণ ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং অবহেলার কারণে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।

এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান নিহতের স্বামী সাদেকুল ইসলাম।

গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. আবিদা সুলতানা বলেন, নিহত ওই গৃহবধূর অপারেশন অনেক ভালো হয়েছে। অপারেশনের পর বাচ্চা ও তার মা সুস্থ ছিল। কিন্তু অপরাশেন পরবর্তী ক্লিনিকে অব্যবস্থাপনার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। রোগীর রক্তক্ষরণের সমস্যা হয়েছে তাৎক্ষণিক আমাকে জানালে তার ব্যবস্থা নেয়া যেত, কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ থেকে আমার সঙ্গে ১৬ ঘন্টার পর যোগাযোগ করেছে, যখন ওই গৃহবধু মৃত্যুর শয্যায়। এই মৃত্যুটি সত্যি বেদনাদায়ক।

ফ্রেন্ডস এ্যাপোলো হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক বাবলুর রহমান বাবলুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ক্লিনিকে সোমবার রাতে মাহাবুবা আক্তার নামে এক গৃহবধুর অপারেশন হয়েছিল; আজ দিনাজপুরে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি এখন কিছু করতে পারছি না, কারণ এই মুহূর্তে আমি ঢাকায় আছি।

স্বজনদের অভিযোগ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অপহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এমনটাই আমিও শুনেছি। ঠাকুরগাঁও গিয়ে অবশ্যই খোঁজখবর নেব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, গৃহবধূ মৃত্যুর ঘটনার এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজুর রহমান সরকার বলেন, ক্লিনিক অব্যবস্থাপনার কারণে গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like