Home সারাদেশ ‌‘কি খায়া বাঁচমো বাবা কনতো’

‌‘কি খায়া বাঁচমো বাবা কনতো’

by Shohag Ferdaus
বাবা

‘পঁচিশ শতক ধানের ভুঁই গাড়ছি। তাক হিনা আপদ ধরছে। এ্যালা কি খায়া বাঁচমো বাবা কনতো বাচ্চা কোচ্চাক নিয়া। করোনার জন্য মানুষের দেহো কি দুর্গ-দশা হয়া গেইচে। মানুষ বাঁচপের নাগছে না। এ্যালা কি করমো কনতো’ এভাবেই আক্ষেপের কথা বলছিলেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের জয়দেব হায়াত গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ আয়মন বেওয়া। তিনি পঁচিশ শতক জমিতে ব্রিধান-২৮ লাগিয়েছিলেন যা নেকব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে সব চিটা হয়ে গেছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, বিরূপ আবহাওয়া এবং কীটনাশক কাজে না লাগায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বোরো ধান নেকব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে চিটা হয়ে গেছে। নষ্ট হওয়ার পথে রয়েছে আরও অনেক বোরো ক্ষেত। এই ধান দিয়েই বছরের বেশিরভাগটা সময় খাবার যোগান দিত যে কৃষক পরিবার; এখন তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ। কৃষি বিভাগের পরামর্শ এবং সংক্রমিত জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেও শেষ রক্ষা হয়নি এবার।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে চিকন ধান আবাদ করা হয়েছে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে। এসব চিকন ধানেই দেখা দিয়েছে নেকব্লাস্টের আক্রমণ। বিশেষ করে ব্রিধান-২৮ ও ব্রিধান-৮১ যারা লাগিয়েছেন তারা পরেছেন বিপাকে। ফলে এসব কৃষকের দিশেহারা অবস্থা। কৃষি বিভাগ বলছে বিরূপ আবহাওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে কীটনাশক কাজে না লাগায় ধান ক্ষেতে দেখা দেয় এই নেকব্লাস্ট (ধানের গলাপচা রোগ)। সংক্রমিত জমিতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করেও পুরোপুরি কাজ হচ্ছে না। একরের পর একর জমিতে পাকা ধানে চিটা হয়ে যাচ্ছে। যে ধান পরিবারের খাদ্য মেটানোর পর খরচ ওঠানোর কথা; সেই কাঙ্ক্ষিত ধান না পেয়ে হতাশ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের জয়দেব হায়াত গ্রামের মৃত নছর উদ্দিন তেলির পূত্র নুর মোহাম্মদ (৫০) বলেন, ‘এক একর জমির ভাতই আমি খাই এবং ২/৪ মন বেঁচি কামলা কৃষাণের দাম দেই। এখন বেচাতো দূরের কথা নিজের ভাতও হবার নয়। পরামর্শ মোতাবেক আমি খরচ করছি, ওষুধ-পাতিও দিছি। ট্রিটমেন্ট ঠিকই করছি অথচ ধান চিটা হইছে।’

বাবা

একই অভিযোগ জানালেন অচিনগাছ এলাকার কৃষাণি আমিনা ও জয়গুন। এবার ধান চিটা হওয়ায় ছেলেমেয়ের খাবার নিয়ে চিন্তায় রয়েছে তারা। করোনার কারণে স্বামীরা শ্রম দিতে বাইরে যেতে পারছে না। এদিকে অনেক টাকা খরচ করে ধানও পাওয়া গেল না। ফলে চরম হতাশার ছাপ তাদের চোখেমুখে।

রাজারহাটের কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের কৃষি অফিসার তরিকুল ইসলাম জানান, মাঠে মোটা ধানের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। চিকন ধানে নেকব্লাস্ট ও ব্লাস্ট দেখা দিচ্ছে। সঠিক নিয়মে ঔষধ দেয়ার পরও কৃষকরা ব্যর্থ হচ্ছে। মনে হচ্ছে ঔষধে কাজ হচ্ছে না।

আরও পড়ুন: গরম বাতাসে কপাল পুড়েছে ৩ লাখ কৃষকের, ক্ষতি ৩৩৪ কোটি টাকা

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জরুল ইসলাম জানান, এখন ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে ফলন একটু কম আসলেও পরবর্তীতে যে ধান কাটা হবে তা খুবই ভালো হয়েছে। বর্তমানে নেক ব্লাস্টের কোনো আক্রমণ নেই। সাধারণত নেকব্লাস্ট আক্রান্তের পরে কীটনাশক স্প্রে করায় ফলাফল পাচ্ছে না কৃৃষক। আগে থেকেই ওষুধ দিলে এমন ক্ষতি হত না।

আরও পড়ুন: নাটোরে মেয়াদোত্তীর্ণ কীটনাশকে কপাল পুড়লো তিন কৃষকের

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like