খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ইফতারিতে খেজুর রাখতেন। এজন্য রমজান মাসে বিশ্বব্যাপী খেজুরের ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। এসময় দামও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। আরবিতে একে বলে ‘তামার’। খেজুর উৎপাদনের দেশ হিসেবে সৌদি আরব বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত হলেও দেশটি খেজুর উৎপাদনে শীর্ষ নয়। আরব দেশগুলো শুধু বাণিজ্যিকভাবে খেজুর উৎপাদন করে না বরং বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে খেজুর উপহারও পাঠায়।
গুণে-মানে ‘আজওয়া’ জাতের খেজুরকে সবাই সেরা মনে করে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খেজুরও এই আজওয়া। হাজার বছর যাবত মদিনা এবং এর আশপাশে আজওয়ার অসংখ্য বাগান রয়েছে। বিশ্বজুড়ে এই খেজুরের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। পাওয়া যায় আমাদের দেশেও। প্রতি কেজির দাম পড়ে ৮০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা।
খেজুরের পুষ্টিগুণ অনেক। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে। যেমন, এ, কে ও বি৬। এছাড়াও থাকে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদান। পানি কম আর সুগার অনেক বেশি থাকে বলে সংরক্ষণ করা যায় দীর্ঘদিন, অন্তত বছর খানেক। খেজুরের বৈচিত্র্যও কম নয়। দুই শরও বেশি প্রজাতির হয়। শুধু খেজুরই নয়, কাজে লাগে এর বিচিও। ব্যবহার করা হয় সাবান, এমনকি আইলাইনার বানাতেও। কম যায় না খেজুরগাছের বীজও। সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে অনেক বছর। এক যুগেরও বেশি। যখনই পর্যাপ্ত আলো-পানি পায়, বীজ থেকে গাছ গজাতে শুরু করে। একেকটি গাছে প্রতি মৌসুমে ১০০ কেজিরও বেশি খেজুর হয়।
ভালো খেজুর জন্মাতে অন্তত ১০০ দিন ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরম তাপমাত্রা, সঙ্গে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। অবশ্য খেজুরগাছের লবণ সহ্য করার ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই সেচের জন্য সাগরের পানিও ব্যবহার করা যায়।
ধারণা করা হয়, খেজুরগাছ মানুষের চাষ করা সবচেয়ে পুরোনো ফল বা ফসল। প্রথম শুরু হয়েছিল আনুমানিক পাঁচ থেকে আট হাজার বছর আগে। আজকে যেখানে ইরাক, সেই অঞ্চলে। তখন ওখানে গড়ে উঠেছিল সুমেরীয় সভ্যতা। ইরাকের বিখ্যাত মেসোপটেমিয়ার সভ্যতার সেটি প্রথম পর্যায়। প্রাচীন রোমেও 6 এই গাছ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে ওখানে আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় ফল তেমন একটা হতো না। মূলত বাগানের সৌন্দর্য বাড়াতেই এই গাছ লাগানো হতো।
আবহাওয়ার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণে খেজুর হয়। সেখানে এর ব্যবহারও হয় প্রচুর। তাই ওই অঞ্চলে একে বলা হয় ‘ট্রি অব লাইফ’। এমনকি সৌদি আরবের জাতীয় প্রতীকেও আছে এই গাছের ছবি। তবে সবচেয়ে বেশি খেজুর উৎপাদনে দেশটি দ্বিতীয়। এই বাবদে সবার ওপরে মিসর।
বিশ্বজুড়ে দুই শরও বেশি প্রজাতির খেজুর আছে। প্রতিবছর উৎপাদিত হয় প্রায় ৯০ লাখ মেট্রিক টন। এর পাঁচ ভাগের এক ভাগই হয় মিসরে। সংখ্যায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন। ১৫ লাখ মেট্রিক টন খেজুর উৎপাদন করে দ্বিতীয় সৌদি আরব। তিন, চার ও পাঁচে আছে ইরান, আলজেরিয়া ও ইরাক। যথাক্রমে উৎপাদন করে ১৩ লাখ, ১১ লাখ ও সোয়া ছয় লাখ মেট্রিক টন।
খেজুরের ইংরেজি ‘ডেট’। নামটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘ডাকটাইলোস’ থেকে। অর্থ ‘আঙুল’। বলাই বাহুল্য, আকৃতির জন্যই ফলটির এমন নামকরণ হয়েছে।
সুমেরীয় সভ্যতায় উদ্ভব হয়েছিল বিশেষ লিখন পদ্ধতি কিউনিফরমের। এর কিছুকাল পরেই প্রাচীন মিসরে গড়ে ওঠে বিখ্যাত লেখার পদ্ধতি হায়ারোগ্লিফিকস। এতেও আছে খেজুরগাছের ব্যবহার। আস্ত গাছের প্রতীক দিয়ে বছর বোঝানো হতো।
ওমানে একটি মজার রীতি আছে। নতুন শিশুর জন্ম হলে তার নামে একটি খেজুরগাছ লাগানো হয়, যেন তাকে কোনো অবস্থায়ই অভুক্ত থাকতে না হয়।
ভয়েস টিভি/এসএফ