Home চিকিৎসা গণস্বাস্থ্যের কিট : একদিকে আশঙ্কা অন্যদিকে আশার আলো

গণস্বাস্থ্যের কিট : একদিকে আশঙ্কা অন্যদিকে আশার আলো

by shahin

ভয়েজ ডেস্ক: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ‘র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন-অ্যান্টিবডি টেস্টিং কিট’ পরীক্ষার জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর গ্রহণ করায় বিশেষজ্ঞদের অনেকেই আশার আলো দেখছেন।তারা বলছেন, এই কিট পরীক্ষায় সফলতা হবে চিকিৎসা সেবায় আশীর্বাদ স্বরূপ। এই কিট দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে প্রচুর টেস্ট করা যাবে। পাশাপাশি হটস্পটগুলোও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।সেই সাথে কমবে রাষ্টের বিপুল পরিমাণ খরচও ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অ্যান্টিবডি র‌্যাপিড টেস্টিং কিট প্রথম সপ্তাহে ৯০ শতাংশ নিখুঁত ফল দিতে পারে। পরের সপ্তাহ থেকে শতভাগ নিখুঁত ফল আসতে থাকে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, র‌্যাপিড টেস্টের ক্ষেত্রে ‘ফলস পজেটিভ’ ও ‘ফলস নেগেটিভ’ আসার আশঙ্কা বেশি। এক্ষেত্রে গণস্বাস্থ্যের কিট যদি ১৫ শতাংশের বেশি ‘ফলস পজেটিভ’ বা ‘ফলস পজেটিভ’ ফল দেয়, তাহলে তারা ‘র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট-পলিমারি চেইন রিঅ্যাকশন’ (আরটি-পিসিআর) পদ্ধতিকেই বেশি গুরুত্ব দেবেন।
জানা গেছে, করোনা শনাক্তে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ‘আরটি পিসিআর’, ‘আইসোথারমাল অ্যামপ্লিফিকেশন’ ও ‘অ্যান্টিজেন’ পদ্ধতি। বাংলাদেশে শুধু ‘আরটি পিসিআর’ পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এটি শতভাগ নিখুঁত ফল দিলেও সময় লাগে বেশি। আইসোথারমাল অ্যাম্প্লিফিকেশেও নির্ধারিত ল্যাব ছাড়া পরীক্ষা করা যায় না। অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি ল্যাপিড টেস্টিংয়ের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা যায়। ইউরোপের দেশগুলোর করোনা হটস্পটে দ্রুত পরীক্ষা করতে এর ব্যবহার করা হচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এক ভাইরোলজিস্ট বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, সেটি বিবেচনায় আরও টেস্ট বাড়ানো উচিত। সেক্ষেত্রে আরটি পিসিআরের বিকল্প ভাবা দরকার। ইউরোপে অ্যান্টবডি র‌্যাপিড টেস্টিং কিট দিয়ে করোনা শনাক্তকরণ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও এটি করা দরকার।’প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘ড. বিজন কুমার শীলের উদ্ভাবিত কিটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকার কথা নয়। কারণ তিনি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞনী। তার এই কিট অনুমোদন পেলে দ্রুত টেস্ট করে হটস্পটগুলো চিহ্নিত করা যাবে।’
ডা. লেলিন বলেন, ‘র‌্যাপিড টেস্টিং কিটে প্রথম সপ্তাহে ৯০ শতাংশ, দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শতভাগ নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। তিন দিন আগে ইউরোপেও এ পদ্ধতিতে টেস্ট শুরু হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যদি যথাযথ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে, তাহলে তাদের কিট থেকে কার্যকারিতা পাওয়া যাবে।’
জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘র‌্যাপিড টেস্টিং কিটের কার্যকারিতা সন্তোষজনক। তাই আমরা এটি বাজারে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। স্বল্প খরচে যেকোনো জায়গায় বসে করোনা পরীক্ষা করা যাবে। এটি অ্যান্টিবডি র‌্যাপিড টেস্টিং কিট হওয়ায় ভুল ফল আসবে না। এই ফর্মুলা আগেও প্রমাণিত হয়েছে। এটা বাজারে ছাড়া গেলে করোনা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।’এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘র‌্যাপিড টেস্টে যদি ‘ফলস নেগেটিভ’ ও ‘ফলস পজেটিভ’ আসে, তাহলে রোগী শনাক্তে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ যদি উপসর্গবিহীন আক্রান্ত কাউকে ‘ফলস নেগেটিভ’ দেখায়, তাহলে ওই ব্যক্তি সাধারণ মানুষের মতো চলাফেরা করবেন। তখন তার মাধ্যমেই অনেকেই আক্রান্ত হতে পারেন। ফলে বাংলাদেশে এর অনুমোদন দেওয়ার আগে অনেক যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে।’’জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘র‌্যাপিড টেস্টে যদি ১৫ শতাংশের বেশি ‘ফলস নেগেটিভ’ ও ‘ফলস পজেটিভ’ আসে তাহলে আমাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে। তবে এর ফল যদি ৯০ শতাংশের বেশি নিখুঁত হয়, তাহলে করোনা মোকাবিলায় এটি অনেক সহযোগিতা করবে।’’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) গণস্বাস্থ্যের কিট পরীক্ষার জন্য দুটি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

You may also like