Home মুক্তমত গরুদের হারিয়ে মুরগিদের আনন্দ মিছিল

গরুদের হারিয়ে মুরগিদের আনন্দ মিছিল

by Shohag Ferdaus
খুন

মাংসের দামে গরুদের হারিয়ে দেয়ার ঘটনায় মুরগিরা রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় আনন্দ মিছিল করেছে। মুরগিদের নেতৃস্থানীয়রা বলেছেন, দশকের পর দশক ধরে চলা কঠোর পরিশ্রমের ফসল এবার পাওয়া গেছে। মাংসের দামের নিরিখে গরুরা এখন কম দামি। দাম বেড়েছে মুরগিদের। আর এই অর্জন এসেছে দেশি মুরগিদের ‘পা’ ধরে। স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে এ এক অনন্য অর্জন।

বাজারে গরুর চেয়ে মুরগির মাংসের কেজিপ্রতি দাম বেড়ে যাওয়ার খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে সম্প্রতি এমন আনন্দ মিছিল বের করে নিখিল বাংলাদেশ মুরগি সমাজ। তবে সেদিন সব রাজপথে তারা বিচরণ করতে পারেনি। ভিভিআইপি মানুষদের আনাগোনা এবং সে কারণে রাস্তায় যান ও প্রাণী চলাচল নিয়ন্ত্রণ করায়, আনন্দ মিছিলের অভিমুখ বারবার পরিবর্তন করতে হয়। তবে সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করে যথাসম্ভব চাকচিক্যের সঙ্গে আনন্দ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। এ সময় কিছু গরুকে বিমর্ষ চিত্তে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাদের অনুভূতি জানতে চাওয়া হলেও, শুধু লেজ নাড়ানো ছাড়া মুখ খোলেননি তারা। ইঙ্গিতে জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া হবে।

সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, বাজারে দুই জাতের মুরগির দাম গরুর মাংসকে ছাড়িয়ে গেছে। সোনালিকা মুরগির দামের কেজি উঠেছে ৩৮০ টাকায়। এ দরে জীবিত মুরগি কিনলে শুধু মাংসের দাম দাঁড়ায় ৫৮০ টাকার মতো। বাজারে এর সমান দামে গরুর মাংসও পাওয়া যায়। অন্যদিকে দেশি মুরগির মাংসের দাম গরুর চেয়ে অনেকটাই বেশি। চামড়া, পশম ও নাড়িভুঁড়ি বাদ দিলে দেশি মুরগির শুধু মাংসের কেজি দাঁড়ায় সাড়ে ৭০০ টাকার মতো।

মুরগির দামের গরম বাতাস বইছে অনলাইন জগতেও। ভার্চ্যুয়াল বাজারে রিয়েল সোনালিকা জাতের মুরগির এক কেজি ওজনের দাম প্রায় ৬৪০ টাকা। আর দেশি মুরগির কেজি দাঁড়াচ্ছে পৌনে ৮০০ টাকার মতো। যদিও গরুর মাংসের কেজি চাওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকার নিচে।

নিখিল বাংলাদেশ মুরগি সমাজ আনন্দ মিছিলে জানিয়েছে, কিছুদিন আগে মাংসের চেয়ে ডিমের দাম কম হওয়ায় তারা আন্দোলন করেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেই আন্দোলনে ভয় পেয়েই বাজারে এখন মুরগির ন্যায্য দাম উঠেছে। মনুষ্য চরিত্রের সমালোচনা করে এ সময় বলা হয়, ‘আমরা জানি, মানুষেরা বেশির ভাগই শক্তের ভক্ত, নরমের যম। ডিম নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে মনে রাখতে হবে যে ডিম কিন্তু আমরাই পাড়ি। সুতরাং, মানুষকে অন্য অর্থে “ডিম দেওয়া” আমাদের জন্য অসম্ভব কিছু নয়।’

সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মাস তিনেক আগের হিসাব তুলনায় নিলে সোনালিকা জাতের মুরগির দাম বেড়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ। দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ২৯ শতাংশের মতো। বাজারমূল্যে দেশিদের এমন উত্থানে পিছিয়ে থাকতে চাইছে না ব্রয়লার মুরগিও। কেজিতে দাম বেড়েছে ৩০ টাকার মতো।

নিখিল বাংলাদেশ মুরগি সমাজ আয়োজিত আনন্দ মিছিলে বিতরণ করা লিখিত বিবৃতি অনুযায়ী, মুরগিরা অনেক দিন থেকেই ন্যায্য দাম পাচ্ছিল না। আকারে বড় ও নানাবিধ কারণে গরুদের দাম বাড়িয়ে মুরগিদের আক্ষরিক অর্থেই ‘মুরগি’ বানানো হচ্ছিল। কিন্তু এবার সেই দুষ্টচক্র ভাঙা গেছে। যদিও ডিমের বাজারে এখনো সেভাবে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে না। তবে দেশীয় সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে মাংসের দামের ঘোড়াকে ‘উন্মাদ’ বানিয়ে দেওয়া গেছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি ভেদাভেদ রাখতে চায় না মুরগিদের নেতারা। ব্রয়লারকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যেতে চায় সমৃদ্ধির পথে।

মুরগিদের এমন আনন্দ মিছিলে কিঞ্চিৎ উত্তেজনা-উৎকণ্ঠাও ছিল। রাস্তায় কিছু গরুকে উদাস নয়নে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুরগিরা আনন্দ পেলেও, যখন ভিভিআইপিদের চলাফেরার কারণে মুরগিদের মিছিলকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢোকার জন্য বাধ্য করা হচ্ছিল, তখন মুরগি নেতারা আতঙ্কিত হয়ে এর প্রতিবাদ শুরু করেন। তাদের আশঙ্কা, এই আনন্দ মিছিলকে ‘প্রতিবাদ মিছিল’ মনে করে হেলমেট পরা সুসজ্জিত কোনো দলকে তাদের ওপর লেলিয়ে দিতে পারে স্বার্থান্বেষী মহল। এ সময় এক মুরগি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা আমাদের ছোট মাথা অনুযায়ী বিশেষ হেলমেটের ক্রয়াদেশ দিয়েছি। তা এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। সেগুলো পাওয়ার আগপর্যন্ত আমাদের পক্ষে অরক্ষিত অবস্থায় ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব হবে না।’ পরে অবশ্য মুখ খোলা যাবে না, এমন শর্তে তাদের রাস্তার পাশে এক কোণে নির্বিবাদে দাঁড়িয়ে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।

এদিকে মুরগিদের এমন মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে গরুরা হতাশ হলেও এ বিষয়ে ‘গোবন্ধন’ আয়োজনের মতো শক্ত পদক্ষেপ নিতে চাইছে না তারা। জাতীয় গোবৎস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের একজন বিশিষ্ট নেতা বলেন, মানুষের সঙ্গে তারা দ্বন্দ্বে যেতে চাইছেন না। মাস তিনেকের মধ্যেই তারা ফর্মে ফিরে আসবেন বলে ধারণা করছেন। আর তা-ও না হলে কোনো এক ঈদের পর আন্দোলন করা হতে পারে। সেটিই হবে ‘ট্রাম্প কার্ড’।

ওই নেতা আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে এ-ও বলেছেন, ‘মুরগিদের আবারও “মুরগি বানানো” সময়ের ব্যাপার মাত্র। স্থানীয় অনেক মানুষও আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হচ্ছেন। ফলে আমাদের সাংগঠনিক শক্তি ক্রমশ বাড়ছে। গরুদের সঙ্গে মানুষদের একটি বিরাট অংশের মস্তিষ্কজনিত যে নিবিড় সম্পর্ক আছে, তাতে মুরগিরা তাদের ছোট মাথা দিয়ে চিড় ধরাতে পারবে না। কথায় আছে, বেশি বাড় বেড়ো না, ঝরে পড়ে যাবে। দেশি-ব্রয়লার সবার ক্ষেত্রেই এমনটা হতে পারে।’

এমন হুমকিতে অবশ্য ভয় পাচ্ছে না সোনালিকা ও দেশিরা। তারা বলছে, মানুষ এমন প্রাণী যে এরা যেদিকে বৃষ্টি হবে, সেদিকেই ছাতা ধরবে। প্রয়োজনে এরা স্বজাতিকেও ‘মুরগি বানায়’, ‘গরু’ বলে গালি দেয়। এমন প্রজাতির প্রাণীকে ‘অলটাইম দৌড়ের ওপর’ রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। সেটা যখন সম্ভব হয়েছে, তখন গরু কোন ছার!

সূত্র: প্রথম আলো।

You may also like