Home বিনোদন গাঙ্গুয়া ও ‘মৃত এফডিসির’ প্রাণ ফিরালো শাপলা মিডিয়া

গাঙ্গুয়া ও ‘মৃত এফডিসির’ প্রাণ ফিরালো শাপলা মিডিয়া

by Newsroom

পারভেজ চৌধুরী মূল নাম হলেও অভিনেতা জসিমের দেয়া গাঙ্গুয়া নামেই অধিক পরিচিত। পেশা শুরু করেছিলেন একটি কনফেকশনারির দোকানি হিসেবে। ১৯৭৮ সালে চলচ্চিত্র জগতে কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষীর মাধ্যমে শুরুটা হয়। কিন্তু পরে অভিনেতা জসিমের হাত ধরে পুরোপুরি চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। প্রথমদিকে চলচ্চিত্রের অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করেন। পরে দর্শকরা খল চরিত্রেই দেখেছে এই অভিনেতাকে। ১৬ ফেব্রুয়ারি শাপলা মিডিয়ার শত সিনেমা নির্মাণের শুভ মহরত অনুষ্ঠানে এসে ভয়েস টেলিভিশন অনলাইনের মুখোমুখি হন এই অভিনেতা।

ভয়েস টেলিভিশন : কার হাত ধরে এসেছেন?
গাঙ্গুয়া : আমি সিনেমাতে কারও হাত ধরে আসিনি। একরকম ঘুরতে ঘুরতে এসেছি। অভিনয় করতে মন চেয়েছে করেছি। প্রথমে একা একা আসলে পরে আমার ওস্তাদ জসিম ভাইকে পেয়েছি। এখানে আসতে আমার কোনো সংগ্রাম করতে হয়নি। পুরানা পল্টনে শিরিন কনফেকশনারি নামে একটা দোকান ছিল। সেখানে সন্ধ্যায় শুটিং শেষে জসিম ভাইসহ চলচ্চিত্রের আরও অনেকে আড্ডা দিত। তখন থেকেই জসিম ভাই আমাকে খুব ভালবাসতেন। আমার দোকান থেকে অনেক কিছু কিনতেন। তিনি সেখান থেকে আমাকে নিয়ে এসে পুরোপুরি এখানে লাগিয়ে দিলেন।

ভয়েস টেলিভিশন : কতগুলো সিনেমায় অভিনয় করেছেন?
গাঙ্গুয়া : ৮শ‘র মতো সিনেমায় অভিনয় করেছি। আমার যেসব ক্যারেক্টার চাওয়ার ছিলো পরিচালকগণ সেসবই দিয়েছেন।

ভয়েস টেলিভিশন : সবগুলোতেই কি খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন?
গাঙ্গুয়া : না, সবসময় খল চরিত্রে অভিনয় করিনি। মাস্তান রাজা, বাবার আদেশ, ডাকাত ইত্যাদি ছবিতে সলো ভিলেন হিসেবে অভিনয় করেছি। এসব সিনেমা সুপারহিট ও ব্যবসা সফল ছিল।

ভয়েস টেলিভিশন : আপনি কি এটাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
গাঙ্গুয়া : আমি এটাতেই সবসময় অভিনয় করেছি এবং করছি। এটাতে আমি খুব মনোযোগ দিয়ে, মনের যত শক্তি আছে সম্পূর্ণটা ঢেলে দিয়ে কাজ করি। আমি এই চরিত্রটাকে খুবই ভালোবাসি।

ভয়েস টেলিভিশন : গাঙ্গুয়া নামটির পেছনের গল্পটি জানতে চাই।
গাঙ্গুয়া : আমার আসল নাম পারভেজ চৌধুরী। চলচ্চিত্রে আমাকে গাঙ্গুয়া নামেই চেনে সবাই। এ নামটি দিয়েছিলেন নায়ক জসিম ভাই। হঠাৎ একদিন একটি সিনেমায় অ্যাকশন শুটিং এর আগে জসিম ভাই বললেন তোর নামটা যদি গাঙ্গুয়া দেয় কেমন হয়। তখন আমি বললাম খুব ভালো। কারণ জসিম ভাই যেটা ভালো মনে করেই দিয়েছেন। ভাইয়ের দেয়া নাম নিয়ে আমি গর্বিত।

ভয়েস টেলিভিশন : আপনি কি মার্শালার্ট করতেন?
গাঙ্গুয়া : ওস্তাদ জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে মার্শালার্ট শিখেছি। ফিল্মে আসার পর ১৫-২০ বছর ধরে এটা করেছি। ওস্তাদ জাহাঙ্গীর সম্ভবত ১৯৭৯ সালে এখানে এসেছিলেন। তারপর থেকেই আমি মার্শালার্ট করতাম। তাকে নিয়ে আসছিলেন সোহেল রানা পারভেজ ভাই। এখানে যত পরিচালক আছে আমি সবার কাছে ফাইটার হিসেবে এক নাম্বার।

ভয়েস টেলিভিশন : বর্তমানে কোন কোন সিনেমায় কাজ করছেন?
গাঙ্গুয়া : এখন শুধু একটা ছবি নিয়ে কাজ করছি। আমি সাড়ে তিন বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করেছিলাম। ওই সময়ে আমি কোনো সিনেমায় অভিনয় করতে পারিনি। ফলে সুস্থ হওয়ার পরও নিজেকে মৃত মনে করেছিলাম। শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার সেলিম খান সাহেব অন্য কোনো মাধ্যমে হয়তো আমার সুস্থতার বিয়টি জানতে পেরেছেন। সপ্তাহ খানেক আগে তিনি আমাকে শাহিন সুমনের পরিচালিত একটা সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ করে দেন।

ভয়েস টেলিভিশন : শাপলা মিডিয়া ১০০টা সিনেমা তৈরির উদ্যোগকে কিভাবে দেখছেন?
গাঙ্গুয়া : পরিচালক শাহিন ভাই আমাকে কল দিয়ে বললেন, শাপলা মিডিয়ার ছবির মহরত হবে। এজন্য আমি আজ আসলাম এবং দেখলাম ১০০ ছবির মহরত। প্রথমে বলতে চাই যে, মৃত এফডিসি এবং আমিও ছিলাম মৃত। আল্লাহর ইচ্ছায় আমি এখন সুস্থ। দুইটাই একসঙ্গে মিলে যাচ্ছে। শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার সেলিম খান মৃত এফডিসিকে জীবিত করার পাশাপাশি আমাকেও জীবিত করলেন। এখন থেকে শাপলা মিডিয়ার প্রতিটি সিনেমাতেই আমি থাকবো বলে জানানো হয়েছে।

ভয়েস টেলিভিশন : এ ঘোষণার মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পের কতটুকু উন্নতি হবে মনে করেন?
গাঙ্গুয়া : এই মহতি উদ্যোগের বিষয়টি ভাষায় প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না। আগেই বললাম মৃত এফডিসির কথা। মৃত এফডিসিকে জীবিত করতে পারলে আমরা অনেক ধন্য হব। কারণ এখানে অনেক টেকনিশিয়ান, আর্টিস্টসহ অনেকেই জড়িত। তারাও একরকম মৃত। এ উদ্যোগের মাধ্যমে তারাও যদি জীবিত হয়, তাহলে অনেক বড় মহৎ কাজ হবে। আবার ইন্ডাস্ট্রি জীবিত হবে এবং সরব হয়ে উঠবে। আমরা সবাই খুশি। আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া। দেয়া করি তিনিও (সেলিম খান) ভালোভাবে ছবিগুলো শেষ করে দর্শকদের মাঝে উপহার দিতে পারেন। একই সঙ্গে দর্শকরাও যেন উপভোগ করতে পারে, এটাই আমাদের চাওয়া।

গাঙ্গুয়া

ভয়েস টেলিভিশন : অনেকগুলো ছবিতে অভিনয় করার কারণে আপনার বেশ সফলতা রয়েছে এবং দর্শকদের কাছে চাহিদা রয়েছে। আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
গাঙ্গুয়া :আমার সবকিছু চলচ্চিত্র নিয়েই। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন চলচ্চিত্র-অভিনয় নিয়েই থাকবো। তারপর সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যাব।

ভয়েস টেলিভিশন : আপনার জীবনের কোনো স্মরণীয় ঘটনা ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলবেন কি?।
গাঙ্গুয়া : ৪৪ বছরের অভিনয় জীবনে সবচেয়ে বড় ঘটনা শেষের দিকে এসে ঘটেছে। সাড়ে তিন বছর আগে আমি ফিল্ম ক্লাবে রাত সোয়া ১০টার সময় স্ট্রোক করেছিলাম। ক্লাবের স্টাফরা ছাড়া ওই সময় সেখানে তেমন কেউ ছিলো না। তারা তিন-চার জন ধরে আমাকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দায় রেখেই চলে আসে। কারণ হাসপাতালটি আমাকে ভর্তি করতে চায়নি। পরে আমার স্ত্রী-মেয়ে জানতে পেরে সেখান থেকে নিয়ে স্কয়ারসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করার চেষ্টা করে। কিন্তু কেউ আমাকে ভর্তি নিচ্ছিল না। পরে রাত তিনটার দিকে পুনরায় স্কয়ারে গিয়ে অনেক অনুরোধ করার পর আমার ভর্তি নেয়। আমি গাঙ্গুয়া এখনও জীবিত আছি, এটাই আল্লাহর কাছে হাজার শোকর। আবার ফিরে আসলাম এবং ছবিতে শুটিং করছি।

ভয়েস টেলিভিশন : আপনার ভক্তদের উদ্দেশ্যে কি কিছু বলার আছে?
গাঙ্গুয়া : ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমি গাঙ্গুয়া আবার ফিরে আসছি আপনাদের মাঝে। সুন্দর সুস্থভাবে কাজ করে যাতে আপনাদের বিনোদিত করতে পারি সেই দোয়া করবেন।

আরও পড়ুন : পরকীয়ার জেরে ছেলেকে হত্যার পর ব্রহ্মপুত্রে ভাসিয়ে দিলেন মা

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like