Home জাতীয় গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে পারাই বড় উৎসব: প্রধানমন্ত্রী

গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে পারাই বড় উৎসব: প্রধানমন্ত্রী

by Shohag Ferdaus
প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই হবে মুজিব বর্ষের লক্ষ্য, যাতে দেশের প্রত্যেক মানুষ উন্নত জীবন যাপন করতে পারেন। দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে পারার চেয়ে বড় কোনো উৎসব আর কিছুই হতে পারে না।

২৩ জানুয়ারি শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবেই মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পুরো বাংলাদেশের গৃহহীনদের নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করে দেয়া হবে, যাতে দেশের একটি লোকও গৃহহীন না থাকে, যাতে তারা উন্নত জীবন যাপন করতে পারেন, আমরা সে ব্যবস্থা করে দেব। যাদের থাকার ঘর নেই, ঠিকানা নেই, আমরা তাদের যেভাবেই হোক, একটা ঠিকানা করে দেব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুজিববর্ষের অনেক কর্মসূচি আমাদের ছিল। সেগুলো আমরা করোনার কারণে করতে পারিনি। তবে, করোনা একদিকে আশীর্বাদও হয়েছে। কারণ, আমরা এই একটি কাজের দিকেই (গৃহহীনকে ঘর করে দেয়া) নজর দিতে পেরেছি। আজকে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও সীমিত আকারে আমরা করে দিচ্ছি এবং একটা ঠিকানা আমি সব মানুষের জন্য করে দেব। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, যখন এই মানুষগুলো ঘরে থাকবেন, তখন আমার বাবা এবং মা- যারা সারাটা জীবন এ দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন, তাদের আত্মা শান্তি পাবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাদের আত্মাটা অন্তত শান্তি পাবে। কারণ, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই ছিল আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একমাত্র লক্ষ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমি সবচেয়ে খুশি যে এত অল্প সময়ে এতগুলো পরিবারকে আমরা একটা ঠিকানা দিতে পেরেছি। এই শীতের মধ্যে তারা থাকতে পারবে। কেননা, আমাদের যারা শরণার্থী (রোহিঙ্গা), তাদের জন্যও আমরা ভাসানচরে ঘর করে দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী এই স্বল্প সময়ে সফলভাবে গৃহনির্মাণ ও কাগজপত্র তৈরির মতো জটিল কাজ ঠিকাদার নিয়োগ না দিয়ে সম্পন্ন করতে পারায় জেলা প্রশাসন, তার দফতর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, ‘এই গৃহায়ণ প্রকল্পে কোনো শ্রেণি বাদ যাচ্ছে না, বেদে শ্রেণিকেও আমরা ঘর করে দিয়েছি। হিজড়াদের স্বীকৃতি দিয়েছি এবং তাদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দলিত বা হরিজন শ্রেণির জন্য উচ্চমানের ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। চা–শ্রমিকদের জন্য করে দিয়েছি। এভাবে প্রতিটি শ্রেণির মানুষের পুনর্বাসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০১–০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ’৯৭–পরবর্তী সময়ে চালু করা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের ঘর দেয়ার প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়।

তিনি বলেন, ২০০১–০৮ পর্যন্ত সময় বাংলাদেশের জন্য একটি অন্ধকার যুগ ছিল। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্যের কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। সে সময়ে বিরোধী দলে থাকলেও বিনা কারণে কারাবন্দী হওয়ার স্মৃতিচারণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্দী হয়ে গেলাম আমি। তারপরও আমি আশা ছাড়িনি, আল্লাহ একদিন সময় দেবে এবং এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারব।’ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয় যুক্ত করায় এ সময় আবারও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাসের কারণে ঘরগুলো হস্তান্তরকালে সশরীর ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে না পারার আক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল নিজ হাতে আপনাদের কাছে বাড়ির দলিলগুলো তুলে দেব। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে সেটা করতে পারলাম না। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিলাম বলেই আপনাদের সামনে এভাবে হাজির হতে পেরেছি।’

গণভবনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) এবং সারা দেশের ৪৯২টি উপজেলা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। অনুষ্ঠানে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়।

সূত্র: বাসস।

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like