Home সারাদেশ ঘোড়ার মাংস বিক্রির মামলা থেকে আসামীদের অব্যাহতি, দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে তিরস্কার

ঘোড়ার মাংস বিক্রির মামলা থেকে আসামীদের অব্যাহতি, দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে তিরস্কার

by Newsroom
তেঁতুলিয়ায়

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় বাজারে ঘোড়ার মাংস বিক্রির অপরাধে দায়ের করা মামলা থেকে সানাউল্লাহ (৩২) ও হামিদুর রহমান (৩৩) নামের দুই ব্যক্তিকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে এই মামলায় সংশ্লিষ্ট দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে তিরস্কার করা হয়েছে।

পঞ্চগড় অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মতিউর রহমান ২৪ আগস্ট মঙ্গলবার এ আদেশ দিলেও তা ২৫ আগস্ট বুধবার রাতে প্রকাশ পায়।

জানা গেছে, বিশেষ ক্ষমতা আইনে আসামিদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) লিপন কুমার বসাক ও মামলার তদন্তে গাফিলতি পরিলক্ষিত হওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহেদুল ইসলামে তিরস্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে মামলায় সংশ্লিষ্টতা থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সূত্র জানায়, গত বছরের ২২ ডিসেম্বরে উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের চৌধুরীহাটে বিকেলে জবাইকৃত ঘোড়ার মাথা, চামড়া ছাড়ানো চারটি পা ও ৩৫ কেজি ঘোড়ার মাংস জব্দ করে বোদা থানা পুলিশ। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য দেন প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে। বাকি মাংস মাটিতে পুতে ফেলার নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে আসামিদেরকে আটক করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এজাহার দায়ের শেষে মামলা দায়ের করা হয়।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ঘোড়ার জবেহ করে গোস্ত খাওয়ার অপরাধে এসআই লিপন কুমার বসাক আসামিদের বিরুদ্ধে ১৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(গ) তৎসহ পেনাল কোডের ২৭৩ ধারায় মামলা করেন। ঘটনার দিন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এজাহারকারীর সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আসামিদের বৈধ ৩৫ কেজি ঘোড়ার গোস্ত জব্দ করেন।

মুসলিমদের হাদিস গ্রন্থ সহীহ বুখারির (তাওহিদ প্রকাশনী) ৫৫১৯ ও ৫৫২০, মিশকাত শরীফের ৪১০৭ নং হাদীসে ঘোড়ার গোস্ত হালাল মর্মে উল্লেখ আছে। মুসলিম হিসেবে হালাল প্রাণি জবেহ করা ও খাওয়া তাদের ধর্মীয় অধিকার। দেশের প্রচিলত আইনে ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া নিষেধ মর্মে কোথাও উল্লেখ নেই। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত বুখারি শরিফের ৫০০৯, ৫০১০ ও ৫০১৪ নং হাদিসে ঘোড়ার গোস্ত হালাল ও বৈধ উল্লেখ আছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ আব্দুস সোবহান জব্দকৃত ঘোড়ার গোস্ত রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়াই ক্ষতিকর উল্লেখ করেছেন; যা গ্রহণযোগ্য নয়। ঘোড়ার গোস্তের রসায়নিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা অবহেলা করেন। কর্মকর্তাগণের খামখেয়ালিপনা ও ভুলের কারণে আসামিরা এ মামলায় ৭ দিন হাজতবাস করেছেন; যা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।

ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া হালাল স্বত্ত্বেও বিনা অপরাধে আসামিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এজাহার দায়ের করায় এসআই লিপন কুমার বসাক ও মামলার তদন্তে গাফিলতি পরিলক্ষিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহেদুল ইসলামকে দায়িত্ব পালনে সজাগ থাকার জন্য সতর্ক করে তিরস্কার করা হয়।

এদিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন আদালত। সেইসঙ্গে আসামিদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।

বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সায়েদ চৌধুরী বলেন, ওই মামলা থেকে আসামিদেরকে অব্যাহতি প্রদান ও দুই পুলিশ সদস্যকে তিরস্কারের বিষয়টি শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত লিখিতভাবে কোন নোটিস পাইনি।

আরও পড়ুন : পঞ্চগড়ে ঘোড়ার মাংস বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার ২

ভয়েস টিভি/এএন

You may also like