Home সারাদেশ করোনায় চাকরি হারিয়ে মাশরুম চাষে ভাগ্য ফিরেছে আমিনুলের

করোনায় চাকরি হারিয়ে মাশরুম চাষে ভাগ্য ফিরেছে আমিনুলের

by Shohag Ferdaus
মাশরুম

করোনাভাইরাসের মহামারিকালে চাকরি হারিয়ে মাশরুম চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কুড়িগ্রামের আমিনুল ইসলাম। উত্তরের এই জনপদে মাশরুম চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় অনেক বেকার মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। মাশরুম বাজারজাত করা এবং মাশরুমের উপকারিতা প্রচার বৃদ্ধি পেলে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে মাশরুম বড় ভূমিকা রাখবে বলে মত বিশিষ্টজনদের।

মাশরুম খামারি আমিনুল ইসলাম মিলন জানান, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীরঝাড় সড়ক কাটা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। কিন্তু গত বছর করোনার থাবায় সেই চাকরি হারাতে হয় তাকে। উপার্জনের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাশরুম চাষ বিষয়ে জানতে পারেন তিনি। গত বছরের নভেম্বর মাসে বগুড়ায় বেসরকারিভাবে মাশরুম চাষের ওপর ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ নেন। ডিসেম্বর মাসেই নিজ বাড়িতে প্রায় সোয়া লাখ টাকা খরচ করে ৩০ ফুটের একটি টিনের ঘর নির্মাণ করেন। সেখানে মাশরুমের ৬ শ স্পন দিয়ে শুরু করেন উৎপাদন কার্যক্রম। মাত্র দু’মাসের মাথায় ফেব্রুয়ারিতেই মাশরুমের ফলন পেতে শুরু করেন।

প্রথম ফলনেই প্রায় ৭০ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করেন আমিনুল ইসলাম। বর্তমানে তার মাশরুমের স্পন রয়েছে প্রায় ১২শ। একটি স্পন থেকে ১৫/২০ দিনের মধ্যেই মাশরুম উৎপাদন শুরু হয় যা ৩ মাস পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব। ঢাকা, সিলেট, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তার মাশরুম নিয়ে যায় গ্রাহকরা। অনলাইনেও মাশরুম বিক্রি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

মাশরুম

আমিনুল বলেন, মাশরুমের উপকারিতা বিষয়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রচার করা গেলে এই মাশরুম উৎপাদন কের অনেক বেকার ভাই-বোনরা স্বাবলম্বি হতে পারবেন। এতে করে দরিদ্র জেলার অর্থনৈতিক চাকা স্বচ্ছল হবে।

মাশরুম খামারের দিনমজুর মজিবর বলেন, আমিনুল যে মাশরুম চাষ করায় আমার একটা স্থায়ী কাজের সুযোগ হয়েছে। প্রতিদিন এখানে কাজ করে ৩/৪ শ টাকা আয় হচ্ছে। এতে করে বেশ ভালোই চলছে সংসার। স্থানীভাবেও প্রতিবেশিসহ বন্ধুরা মাশরুমের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে বেশ মাশরুম বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবেশিরা প্রথমে মাশরুম খেতে না চাইলেও পরবর্তিতে এর উপকার জানতে পেরে অনেকেই কিনে নিয়ে মাশরুম খাচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন মাশরুমের উপকারিতা নিয়ে বলেন, মাশরুম একটি মৃতজীবী ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ। মাশরুমে মধ্যে রয়েছে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন এবং মিনারেলের সমন্বয়। যা শরীরের ‘ইমুন সিস্টেম’কে উন্নত করে। মাশরুমে আছে শরীরের কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভষ্টটিন এবং এনটাডেনিন। তাই নিয়মিত মাশরুম খেলে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় করে। এছাড়াও মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-ডি। যা শিশুদের দাঁত ও হাড় গঠনে অত্যন্ত কার্যকারী। মাশরুমে আছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড ও লৌহ। ফলে মাশরুম খেলে রক্ত শূন্যতা দূর হয়।

তিনি আরও বলেন, মাশরুমে বি-ডি গ্লুকেন, ল্যাম্পট্রোল, টারপিনওয়ডে এবং বেনজো পাইরিন। এটি ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকার রাখে। গর্ভবতী মা ও শিশুরা নিয়মিত মাশরুম খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মাশরুমে চর্বি ও শর্করা কম এবং আঁশ বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ খাবার হয়ে উঠছে মাশরুম। মাশরুম প্রতিদিন নূন্যতম ১ চা চামচ গুড়া মাশরুম বা মাশরুম পাউডার স্যুপ,চা,কফি,হরলিক্স,গরম দুধ,গরম পানি,লাচ্চি, শরবত, ডাল, তেঁতুলের চাটনি, রুটির আটার সাথে মিশিয়ে অথবা যে কোন তরকারি সাথে মিশিয়ে মাশরুম খাওয়া যায়।

মাশরুম

এমন হাজারো গুণাগুণ সম্বলিত মাশরুম বাজারজাত করণে নেই কোন তেমন উদ্যোগ। এটি সরকারি-বেসরকারিভাবে বাজারজাত করা গেলে জেলায় মাশরুমের চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে। এতে করে দারিদ্রপীড়িত খ্যাত এ জেলায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে মনে করেন তিনি।

কৃষি অধিদপতরের উপ-পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার। এটি তরকারি হিসেবে সাধারণ মানুষ খেতে পারবেন। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাশরুম উৎপাদন করছেন আমিনুল। সে অনলাইনের মাধ্যমে মাশরুম বাজারজাত করছেন। মাশরুম ২ শ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়ে থাকে। বর্তমানে আমিনুলের প্রায় ১২ শ স্পন রয়েছে। এখান থেকে একমাসেই আমিনুল আরও ৮০ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করতে পারবে। আমিনুলের সাফল্য দেখে অনেকেই মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন: কোটি টাকায় জমি কিনেছেন খাদ্য গুদামের নিরাপত্তা প্রহরী

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like