Home বিশ্ব জলবায়ুতে প্রতিশ্রুতি নয়, এবার চাই পদক্ষেপ

জলবায়ুতে প্রতিশ্রুতি নয়, এবার চাই পদক্ষেপ

by Mesbah Mukul

এই সবুজ পৃথিবীকে জলবায়ুর বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেন বিভিন্ন দেশের পরিবেশ ও আন্দোলনকর্মীরা। গত শনিবার গ্লাসগোয় বিক্ষোভে যোগ দেন সুইডিস জলবায়ু অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ সামনে রেখে স্থানীয় সময় গত শনিবার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাযথভাবে পৃথিবীকে রক্ষা করতে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন তারা। বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছেন বিভিন্ন দেশের পরিবেশ আন্দোলনকর্মী ও শত শত মানুষ। গতকাল রোববারও বিশ্বনেতাদের প্রতি একই দাবি নিয়ে ও চাপে ফেলতে রাজপথে ছিলেন পরিবেশ অধিকারকর্মীরা।

গতকাল শনিবার শুরু হয়েছে জলবায়ু সম্মেলন। চলবে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত।

গতকাল সম্মেলন শুরুর আগে থেকে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গে বিক্ষোভ করেন শতাধিক মানুষ। সেখান থেকে তারা গ্লাসগোর উদ্দেশে রওয়ানা হন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে অ্যালান ম্যাকইনটায়ার বলেন, ‘আমি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছি; কারণ, আমি চাই জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে রাজনীতিকেরা আরও বেশি কিছু করুন।’

বিভিন্ন দেশের পরিবেশকর্মীরা গ্লাসগোতে ভিড় করছেন। অনেক দূর-দূরান্ত থেকেই মানুষ সম্মেলনস্থলে যাচ্ছেন। নিজেদের হতাশার কথা জানাতে অনেকে হেঁটেও সম্মেলনস্থলে জড়ো হচ্ছেন।

অনেক বিক্ষোভকারী হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে গ্লাসগোয় মিছিল করেন। এসব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘শুধু মুখের কথা নয়, পদক্ষেপ চাই’ এবং ‘জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করুন’। এতে বিক্ষোভে আরো নেতৃত্ব দেন যুক্তরাজ্যের ‘এক্সটিংকশন রেবেলিয়ন’ নামের আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্যরা।

অবসরজীবন কাটাচ্ছেন বেলজিয়ামের নাগরিক ডির্ক ভান এসব্রোয়েক। কেন বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি এএফপিকে বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে সচেতন করতে আমরা আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে চাই। আমাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিরা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে পড়ছে।’ ‘গ্র্যান্ড প্যারেন্টস ফর দ্য ক্লাইমেট’ নামের গ্রুপের হয়ে এসব্রোয়েকসহ ২০ জন সদস্য বেলজিয়াম থেকে ট্রেনে করে এডিনবরায় এসেছেন। এরপর সেখান থেকে ৪৭ মাইল হেঁটে গ্লাসগোতে পৌঁছান তাঁরা।

৬৮ বছর বয়সী এসব্রোয়েকের ৫ সন্তান ও ১২ জন নাতি-নাতনি রয়েছে। তিনি বলেন, ঘোষণা থেকে শুরু করে পদক্ষেপ পর্যন্ত আরও অনেক পথ যেতে হবে।

বিক্ষোভে যোগ দিতে স্পেন থেকে এসেছেন ৩১ বছর বয়সী বেকি স্টোকস। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু দৃঢ় পদক্ষেপ চাই। এটিই শেষ সুযোগ।’

১৯ বছরের শিক্ষার্থী ম্যাসিয়েজ ওয়াল্কজুক বলেন, আগের ২৫টি কপ সম্মেলন হওয়ার পরও ‘জয়বায়ু পরিস্থিতি কিন্তু আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে খারাপ। তাই আমরা ভিন্ন কপ সম্মেলন চাই…যেখান থেকে এরই মধ্যে জলবায়ুসংকটে পড়া মানুষজনের জন্য সমাধান আসবে।’

পুলিশ জানায়, সম্মেলনে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর আগে স্কটল্যান্ডে কোনো আয়োজনে এতসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়নি।

দাবদাহ, দাবানল ও বন্যার মতো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া তীব্রতর হচ্ছে। গত দশক ছিল রেকর্ড গরম। বিজ্ঞানীরা বারবার এ ব্যাপারে সতর্কতা উচ্চারণ করে আসছেন। বিশ্বের সরকারগুলো একমত যে এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে যৌথ পদক্ষেপ দরকার।

কপ-২৬ সম্মেলনে বিশ্বের ২০০টি দেশের কাছে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে তাদের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হবে। জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে এই দেশগুলো ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক্‌শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যাতে না বাড়ে, সে ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে ধরে না রাখা যায় তবে জলবায়ু বিপর্যয় এড়ানো যাবে না।  কপ-২৬ এবার এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্তে আসবে এনমটাই আশা করছে বিশ্ববাসী।

ভয়েসটিভি/এমএম

You may also like