Home বিশ্ব জলবায়ু চ্যালেঞ্জে তরুণেরা অধৈর্য, বিশ্বনেতাদের সতর্কতা

জলবায়ু চ্যালেঞ্জে তরুণেরা অধৈর্য, বিশ্বনেতাদের সতর্কতা

by Mesbah Mukul

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অতীত অঙ্গীকার পূরণ না হওয়ায় বিশ্ব নেতারা বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটে রয়েছেন। তবুও তাদের কণ্ঠে আওয়াজ ওঠেছে ‘আর সময় নষ্ট করা চলে না’ বলে বারবার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। গ্লাসগোতে কপ২৬ শুরুর আনুষ্ঠানিকতার বিলম্ব সেই বাস্তব প্রতিকূলতারই প্রকাশ ঘটেছে। সম্মেলনের সূচনায় গোটা বিশ্বকে সুরক্ষায় আর কোনো সময়ক্ষেপণ নয় বলে জোরালো অঙ্গীকার করা হয়।

তরুণেরা অধৈর্য হয়ে পড়ছে বলে বিশ্বনেতাদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। তবে এতে কতটা কাজ হবে, তা নিশ্চিত করে কিছু বলা মুশকিল।

সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান উপস্থিতিতে সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা একটি মিলনায়তনে। কিন্তু কি কারণে তাদের জাতীয় বিবৃতি দুই পর্বে ভাগ হয়ে আলাদা মিলনায়তনে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হল তা বোধগম্য নয় এবং এর কোনো ব্যাখ্যা জাতিসংঘ বা কপ প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি। যার কারণে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কী বক্তৃতা দিলেন, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল শুনতে পেলেন না, ঠিক তেমনই শেখ হাসিনা বা ম্যার্কেলের মতো নেতাদের বক্তৃতা প্রেসিডেন্ট বাইডেনও শুনতে পেলেন না।

নির্ধারিত সময়ের ২৫ মিনিট পর শুরু হয় অনুষ্ঠান স্কটিশ বাঁশির সুরে। এরপর কবি ইরসা ডেলি ওয়ার্ড একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কবিতাটি শোনা যায়নি। পরে আর ত্রুটি সংশোধনের পর একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।

পরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বক্তৃতায় বলেন, এই পৃথিবী এক ভয়াবহ পরিণতির প্রহর গুণছে। ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের সিনেমার বন্ড চরিত্রের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘টাইমবোমার দিকে আমরা এগোচ্ছি, বন্ডকে তা নিষ্ক্রিয় করতে হবে। আমরা যত দেরি করব, আমাদের তত বেশি মূল্য দিতে হবে।’ সুইডিশ তরুণী গ্রেটা থুনবার্গের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আমরা যদি আজ আন্তরিক না হই, তাহলে প্যারিস, কোপেনহেগেনের অঙ্গীকারগুলো সব হবে বাকোয়াজি।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখান থেকেই টাইমবোমা সচল হয়েছে। তিনি সম্মেলনস্থলের বাইরে বিক্ষোভকারীদের কথা উল্লেখ করে বলেন, তরুণেরা ক্ষুব্ধ। আমরা এখানে সব ষাটোর্ধ্ব যদি তাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে ব্যর্থ হই, তাহলে তা তাদের আরও ক্ষুব্ধ করবে।

এরপর সামোয়ার পরিবেশবাদী ব্রায়ানা ফ্রুয়েন বিশ্বনেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়লে ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর কোটি কোটি মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, প্যারিস চুক্তির পর যে ছয় বছর পার হয়েছে, সেই ছয় বছরই বিশ্বের উষ্ণতম বছর। গত ৩০ বছরে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি ঘটেছে দ্বিগুণ। সমুদ্রের পানিও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত। জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে আমরা যতই আশাবাদী হই না কেন, আমরা একটি বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের এই ধারার বিরুদ্ধে লড়ছে তরুণেরা, এবং আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই যোদ্ধারা চলে যাবে না। ৮০ শতাংশ গ্যাস উদ্‌গিরণের জন্য দায়ী জি-২০-ভুক্ত দেশগুলোর দায়িত্ব অনেক বেশি উল্লেখ করে গুতেরেস ধনী দেশগুলোর প্রতি আস্থা অর্জনের জন্য বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার পূরণের আহ্বান জানান।

যুবরাজ চার্লস জীববৈচিত্র্যের সংকটের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের যোগসূত্রের ওপর আলোকপাত করে বলেন, আক্ষরিকভাবেই সময় শেষ হয়ে গেছে। নবায়নযোগ্য ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাধান খোঁজার ওপর জোর দিয়ে তিনি বেসরকারি খাতের ভূমিকার কথা বলেন।

বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মোটলি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মুখে টিকে থাকা বা অভিযোজনে অর্থায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী সি চিন পিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এই সম্মেলনে কারও কারও অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘নেতারা কখন নেতৃত্ব দেবেন? আমরা কিন্তু নজর রাখছি এবং মনে রাখব। তিনি বলেন, আজকের নেতাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ২০৩০ বা ২০৫০-এর নেতাদের জন্য অপেক্ষা নয়।

কেনিয়ার তরুণ পরিবেশবাদী এলিজাবেথ ওয়াতহুতি বিশ্বের যে শত শত কোটি মানুষের কথা অশ্রুত থাকে, তাদের স্মরণে একমুহূর্ত নীরবতা পালনের জন্য রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের প্রতি আহ্বান জানান।

উদ্বোধন পর্ব শেষে শুরু হয় নিজ নিজ দেশ কী করবে, সে বিষয়ে নেতাদের বক্তৃতা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় হালনাগাদ করা ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন বা এনডিসি থেকে বোঝা যাবে চলতি শতকের শেষে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্যের তাঁরা প্রয়োজনীয় কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো লক্ষ্য অর্জন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় উন্নয়নশীল ও ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য বার্ষিক ১০ হাজার কোটি ডলার সহায়তা নিশ্চিত করা, টেকসই ও নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি স্থানান্তরের মতো বিষয়গুলোতে সমঝোতার সম্ভাবনা কতটুকু, নেতাদের বক্তৃতায় তার আভাস মিলতে পারে।

বৈশ্বিক উষ্ণাতা বেড়ে যাওয়ার জন্য যেসব দেশ বেশি দায়ি, বিশ্বের সেসব ধনী দেশের নেতারা সভ্যতাকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে যুদ্ধকালীন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানালেও নিজেরাই প্রয়োজনীয় কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে এখনো পিছিয়ে আছেন।

আরও পড়ুন : জলবায়ু সুবিচারের দাবি উপকূলীয় তরুণদের

ভয়েসটিভি/এমএম

You may also like