মুঘল সম্রাট শাহজাহান ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ নির্মাণ করেছিলেন তাজমহল। যার অনন্য স্থাপত্য শৈলী ও সৌন্দর্যে আজও বিমোহিত মানুষ। শুধু তাজমহলই নয়, শাহজাহানের সময় নির্মিত হয়েছিল আরও অনেক দৃষ্টিনন্দন স্থ্যাপত্য। যা এখনো টিকে আছে আগ্রা আর দিল্লির পথে-প্রান্তরে।
সম্রাট শাহজাহান দিল্লিতে একটি জামে মসজিদও নির্মাণ করেছিলেন। দিল্লির এ জামে মসজিদ ভারতের তো বটেই, পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত ধর্মস্থান। দেশ বিদেশের মানুষ দেখতে আসেন শাহজাহানের তৈরি এই বিশাল স্থাপত্য। ১৬৫০ থেকে ১৬৫৬ সালের মধ্যে মোগল সম্রাট শাহজাহান তৈরি করেছিলেন এই বিশাল মসজিদ। খরচ হয়েছিল ১০ লাখ টাকা। মসজিদের উদ্বোধন করতে উজবেকিস্তান থেকে এসেছিলেন ইমাম সৈয়দ আব্দুল গফুর শাহ বুখারি।
লাল বেলে পাথর আর সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি হয়েছে এই মসজিদ। পরবর্তীকালে এই পাথরেই লাল কেল্লা তৈরি করেছিলেন শাহজাহান। মসজিদটির তিনটি প্রকাণ্ড দরজা আছে। উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে। আর রয়েছে দু’টি বিশাল মিনার।
মসজিদের সামনের প্রকাণ্ড চাতালে এক সঙ্গে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের ওপরে রয়েছে তিনটি প্রকাণ্ড ডোম। ভারতের যে কোনও জামে মসজিদে একই রকমের ডোম দেখতে পাওয়া যায়।
শাহজাহান এই মসজিদের নাম রেখেছিলেন মসজিদ-ই-জাহান-নুমা। অর্থাৎ, সারা পৃথিবীর প্রতিফলন রয়েছে যে মসজিদে। তার ইচ্ছে ছিল, এই মসজিদই হবে পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের সব চেয়ে বড় মিলনস্থল।
শাহজাহান পুরনো দিল্লির নাম দিয়েছিলেন শাহজাহানাবাদ। যার এক প্রান্তে লালকেল্লা। অন্য প্রান্তে জামে মসজিদ। এখনও আকাশ পরিষ্কার থাকলে জামে মসজিদের মিনার থেকে লাল কেল্লার মূল ফটক দেখতে পাওয়া যায়। ব্রিটিশরা দিল্লি দখলের পরে কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল জামে মসজিদ। সেখানে রাখা হয়েছিল সৈন্যদের। এক সময় ব্রিটিশরা মসজিদ ভাঙার কথাও ভেবেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
শুধু দিল্লি নয়, এ জামে মসজিদে ভারতের সব চেয়ে বড় নামাজ হয়। মুসলিমদের কাছে জামি মসজিদে নামাজ পড়া এক অন্যরকম অনুভূতি।
অনেকেই বলেন, মেয়েদের নামাজের সময় মসজিদে থাকতে দেয়া হয় না। কিন্তু এ মসিজদ চত্বরে মেয়েরাও নামাজ আদায় করতে পারেন।
জামে মসজিদ কেবলই এক ধর্মীয় স্থান নয়। অনেকেই এখানে আসেন বিশাল স্থাপত্যের শিল্পকর্ম কর্ম দেখতে। মসজিদকে সাক্ষী রেখে তুলে নেন সেলফি। মসজিদের চাতাল ঘিরে রয়েছে বসার জায়গা। দিনভর সেখানে পিকনিকও চলতে থাকে। খাওয়াদাওয়া, গান বাজনা সবই হয়।
জামে মসজিদের সুউচ্চ মিনারে ওঠার টিকিট পাওয়া যায়। সেখান থেকেই দেখতে পাওয়া যায় পুরনো দিল্লির ল্যান্ডস্কেপ।
এটি শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, এ জামে মসজিদ এখন দিল্লির আন্দোলনের অন্যতম জায়গাও।
আরও পড়ুন: চার শ বছরের পুরোনো জিনের মসজিদ!