মনের মাঝে বড় হওয়ার স্বপ্ন পোষে মানবকুল সবাই। নিজের জীবনকে আলোকিত করার বাসনা রয়েছে সব মানুষের হৃদয়ে। সবাই চায় তার জীবনের সব দুঃখ দুর্দশা মুছে যাক। কিন্তু চাওয়া আর পাওয়া অনেকের ক্ষেত্রে অধরাই থেকে যায়। শত চেষ্টা করেও অনেকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। নিজের জীবনকে বদলে ফেলার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও সে বদলাতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে আমরা শুধু বাহ্যিক উপায় উপকরণের পেছনেই ছুটি। প্রকৃত জিনিসকে উপলব্ধি করে খুব কম মানুষেই। যার ফলে তারা আর বাস্তবতার মুখ দেখে না। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করার পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। যদি কেউ তার জীবনকে সুন্দর করতে চায় তাহলে সে যেন তার আমলকে সুন্দর করে।
আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না; যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর কোনো সম্প্রদায়ের সম্পর্কে যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন তাহলে তা রদ করার কেউ নেই এবং তিনি ছাড়া তাদের কোনো অভিভাবক নেই’। (সূরা র’দ : ১১)
বান্দা যখন নিজেদের জীবনযাপন অবাধ্যতা ও নাফরমানিতে পরিবর্তিত করে নেয়, তখন আল্লাহ তায়ালাও স্বীয় কর্মপন্থা পরিবর্তন করে দেন। এ পরিবর্তন হয় তারা নিজেরা করে, অথবা তাদের ওপর যারা কর্তৃত্বশীল তারা করে, নতুবা তাদেরই মধ্যকার অন্যদের কারণে সেটা সঙ্ঘটিত হয়। যেমন উহুদের মাঠে তীরন্দাজদের স্থান পরিবর্তনের কারণে মুসলিমদের ওপর বিপদ এসে পড়েছিল। মুসলমানদের পরাজয়ের বাহ্যিক কারণ মনে করা হয় তীরান্দাজ বাহিনী নিজেদের স্থান ত্যাগ করা। অথচ তাদের বলা হয়েছিল কোনো অবস্থাতেই ওই স্থান ত্যাগ করা যাবে না।
ইসলামী শরিয়াতে এরকম আরো বহু উদাহরণ রয়েছে। তবে এর মানে এ নয় যে, তিনি কারো কোনো গুনাহ ব্যতীত তাদের ওপর বিপর্যয় দেন না। বরং কখনো কখনো অপরের গুনাহের কারণে বিপর্যয় নেমে আসে। যেমন রাসূল সা:কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, আমাদের মধ্যে নেককার থাকা অবস্থায় কি আমাদের ধ্বংস করা হবে? তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, যখন অন্যায় অপরাধ ও পঙ্কিলতা বৃদ্ধি পায়।’ (তিরমিজি : ২১৮৫)
যে জাতিকে আল্লাহ তায়ালা কোনো নেয়ামত দান করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি তা তাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেন না, যে পর্যন্ত না তারা নিজেরাই নিজেদের অবস্থা ও কার্যকলাপকে পরিবর্তিত করে আল্লাহ তায়ালার আজাবকে আমন্ত্রণ জানায়।
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা যদি সত্য-সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত থাকত, তাহলে আমি তাদেরকে প্রচুর পানি পান করাতাম’। (সূরা
জিন : ১৭)
হজরত ইউনুস আ:-এর জাতি যাদের ওপর আল্লাহর আজাব অবধারিত হয়ে গেছে, তা সত্ত্বেও যখন তারা তওবা করেছে তখন আল্লাহ তাদের থেকে আজাব উঠিয়ে নিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, তারা যখন ঈমান আনে তখন আমি তুলে নেই তাদের ওপর থেকে অপমানজনক আজাব-পার্থিব জীবনে এবং তাদেরকে কল্যাণ পৌঁছাই এক নিধারিত সময় পর্যন্ত। (সূরা ইউনুস : ৯৮)
একজন চরিত্রবান মুমিন সৎ ও ধর্মভীরু জীবনযাপনে, আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে, দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত ও অল্পে তুষ্ট হওয়াতে যে পরম সুখ-স্বাদ অনুভব করে, তা কোনো কাফের ও পাপী ব্যক্তি পৃথিবীর সব সুখ ভোগ করলেও সে সুখ-স্বাদ পায় না। বরং সে এক ধরনের মানসিক অশান্তি ভোগ করে। মহান আল্লাহ বলেন, যে আমার স্মরণে বিমুখ হবে, তার জীবন হবে সঙ্কুুচিত। (সূরা তহা : ১২৪)
অন্যত্র বলেন, যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরস্কার দেবো যা তারা করত। (সূরা নাহল : ৯৭)
বান্দার সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন- কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। (সূরা মুলুক :২)
সূরা রোমের ৪৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, যে অবিশ্বাস করে, অবিশ্বাসের জন্য সে-ই দায়ী। আর যারা সৎকাজ করে, তারা নিজেদেরই জন্য সুখশয্যা রচনা করে।
মহান আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি মুমিনের সুখ-দুঃখের উত্তম সঙ্গী। নির্জনে-নিভৃতে বান্দা যখন মালিকের কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তায়ালা তখন মহানুভবতায় বান্দার সমস্যা দূর করে দেন। তাই বুদ্ধিমান সে যে তার আমলের মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যৎকে সুন্দর করে।