Home সারাদেশ ভাঙ্গায় এতিমদের ৩৮ লাখ টাকা লোপাট

ভাঙ্গায় এতিমদের ৩৮ লাখ টাকা লোপাট

by Newsroom
টাকা-লোপাট

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ১২টি এতিমখানার ৩১৭ জন এতিমের নামে বরাদ্দ ৩৮ লাখ টাকা লোপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতর কার্যালয় অথবা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে ২০২০ সালের জুন মাসে দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্দকৃত টাকা লোপাট করে।

করোনা মহামারির সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশেষ উন্নয়ন খাতে ব্যয় দেখিয়ে এতিমদের এসব টাকা গায়েব হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের দাবি করোনায় ছাত্র না থাকায় এসব টাকা উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা হয়েছে। অথচ বরাদ্দকৃত টাকার বিষয়ে অনেক এতিম ছাত্র জানেই না।

এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠানে এতিমদের নামের তালিকায় দেশের অন্য বিভাগের ছাত্রদের নাম দেয়া হয়েছে। আবার এমনও কিছু নাম আছে, যাদের কোনো হদিস নেই।

প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা জানায়, যেসব এতিম শিক্ষার্থীদের নাম দেয়া হয়েছে তাদের নাম তো দুরের কথা, চোখেও দেখেনি কেউ।

এই টাকাগুলো দেয়ার কথা ছিলো ইসলামিয়া এতিমখানায় ৩৯ জন, ভাঙ্গা পশ্চিমপাড় একমাতু সুন্নাহ এতিমখানায় ৫০ জন, বাংলাদেশ ইসলামী মিশন শিশু সদন এতিমখানায় ৪২ জন, রহমানিয়া এতিমখানায় ২২ জন, মফিজউদ্দিন ইসলামিয়া এতিমখানায় ৪৮ জন, বালিয়াহাটি হায়েজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় ১৬ জন, ডাঙ্গারপাড় স্বতন্ত্র ইসলামিয়া এতিমখানায় ২২ জন, মুনসুরাবাদ ইসলামিয়া শিশু সদন এতিমখানায় ১৬ জন, সোনময়ী লোকমানিয়া তারিমুস সুন্নাহ এতিমখানায় ১৬ জন, দারুস সুন্নাহ মাদরাসা ও এতিমখানায় ১৩ জন, পল্লীবেড়া একামাতেদ্বীন এতিমখানায় ১৩ জন এবং ফয়জুল উলুম এতিমখানায় ২০ জনকে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ইসলামী মিশন শিশু সদন এতিমখানায় ৪২ জন এতিমের নামে পাঁচ লাখ চল্লিশ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ মাদরাসাটি গত মার্চ মাস থেকেই বন্ধ। এছাড়াও এতিমখানার নামে কোন সাইনবোর্ড বা তাদের আবাসস্থল পর্যন্ত নেই।

ওই মাদরাসার সুপার মাওলানা সিরাজ জানান, করোনার কারণে ছাত্ররা বাড়িতে ছিল। তাই টাকাগুলো আমরা বিশেষ উন্নয়ন কাজে ব্যয় করেছি।

সোনাময়ী লোকমানীয় তারিমুস সুন্নাহ এতিমখানায় ১৬ জনকে দেখিয়ে এক লাখ বিরানব্বই হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে শুধু এক কক্ষ বিশিষ্ট একটি রুম রয়েছে, কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থীও নেই। বিভিন্ন সময়ে সুকৌশলে সরকারি বা বেসরকারিভাবে আসা অর্থ আদায় করাই হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানটির কাজ।

এ ব্যাপারে মাদরাসার সুপারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তিনি অপর একটি মাদরাসায় চাকরি করেন। অবসর সময়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা করেন তিনি।

মফিজউদ্দিন ইসলামিয়া এতিম খানায় ৪৮ জনের নামে পাঁচ লাখ ছিয়াত্তর হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থী জানায়, আমরা প্রতি মাসে টাকার বিনিময়েই মাদরাসায় পড়ি। এসময় দায়িত্বরত শিক্ষক এ প্রতিনিধিকে এ বিষয়ে না লেখার আহবান করে কৌশলে অর্থের প্রস্তাব দেয়।

মুনসুরাবাদ ইসলামী এতিমখানা শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। নেই কোনো এতিমদের আবাসস্থল বা সাইনবোর্ড। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে সুপার মাদরাসা ছেড়ে চলে যান।

দারুস সুন্নাহ মাদরাসায় ১৩ জন এতিমের নামে এক লাখ ৫৬ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। এরও নেই কোনো সাইনবোর্ড। অথচ উক্ত মাদরাসায় একাধিক ছাত্র লেখাপড়া করলেও কোনো তালিকা নেই। এমনকি কোনো ছাত্রকে ফ্রি লেখাপড়ার সুযোগও দেয়া হয় না। মাদরাসার সুপার মাওলানা শফিকউদ্দিন দেখা না করে ফোনে যোগাযোগ করতে বলেন।

এসব বিষয় নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতিমদের নামে বরাদ্দকৃত টাকার সঠিক ব্যবহার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই করতে হবে। ওই টাকা উন্নয়ন কাজে ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই। আমরা এতিমদের নাম শোনা মাত্রই তাদের টাকা বরাদ্দ করে থাকি। অথচ কিছু প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের অভিযোগ আমরা শুনতে পায়।

আরও পড়ুন : তোমরা একা নয়, পাশে আছি: এতিমদের প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেন, আগামীতে যাচাই বাছাই করে অর্থ দেয়া হবে। একই সঙ্গে এ বছরের জুনে দ্বিতীয় কিস্তির ৩৮ লাখ টাকার যথার্থ ব্যবহার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। কোনো ধরণের অনিয়ম পেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like