Home সারাদেশ অনাবৃষ্টি: নড়াইলে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি, চলছে হাহাকার

অনাবৃষ্টি: নড়াইলে টিউবওয়েলে উঠছে না পানি, চলছে হাহাকার

by Shohag Ferdaus
নড়াইলে

নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে (টিউবওয়েল) পানি উঠছে না। রোজা ও তীব্র গরমে ওই সব এলাকায় পানির জন্য চলছে হাহাকার। এছাড়া বোরোধানে সেচ দিতেও কৃষকরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। জনস্বাস্থ্য বিভাগ বলছে এবছর বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। বৃষ্টি হলেই সমস্যার সমাধান হবে। পানির স্তর এলাকা ভেদে ৩০ থেকে ৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার হবখাল, মাইজপাড়া, শাহাবাদ, চন্ডিবরপুর, আউড়িয়া, তুলারামপুর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে এবং লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর, নোয়াগ্রাম, নলদী, লাহুড়িয়া, শালনগর, জয়পুর, লোহাগড়া, ইতনা, কোটাকোল ইউনিয়নে এবং কালিয়া উপজেলার উচু এলাকায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বিশেষ করে নদী ও খালের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেশি সমস্যা হচ্ছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। অনেকেই নদী খাল থেকে পানি নিয়ে ব্যবহার করছে। তীব্র খরায় অধিকাংশ পুকুর শুকিয়ে গেছে। অনেক পুকুরে সামান্য পানি থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের রুবেল মোল্যা বলেন, ‘আমাদের গ্রামের কমপক্ষে ৬০টি টিউবওয়েলে গত দুই মাস ধরে পানি উঠছে না। গ্রামের দুটি মসজিদে মুসল্লিরা ওযুর জন্য পানি পর্যন্ত পাচ্ছেন না। অনেকেই নবগঙ্গা নদীতে গিয়ে গোসল করছে। নদী থেকে পানি এনে ব্যবহার করছে। তবে কেউ কেউ বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে তারা পাইপ বসিয়ে কোন রকম খাবার পানি সংগ্রহ করছে। গ্রামের কয়েকটি টিউবওয়েলে তারা পাইপ বসালেও সেখানে লাইন দিয়ে পানি নিতে হচ্ছে। এই করোনার সময় এভাবে পানি সংগ্রহ করা অনেকটাই ঝুকিপুর্ণ।’

নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের দারিয়াপুর গ্রামের নেওয়াজ নাহিদ বলেন, ‘আমাদের ডিপ টিউবয়েলে পানি উঠছে না। আশেপাশের ২০/২৫টি পরিবার এই টিউবওয়েল থেকে পানি নিত। এখন আমরা ভীষণ সমস্যায় রয়েছি।’

নলদী ইউনিয়নের নওয়াপাড়া গ্রামের সোহেল রানা, গোপালপুর গ্রামের সাইফুর রহমান, কাশিপুর ইউনিয়নের গিলাতলাগ্রামের সৈকতুর রহমান, নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের হান্দলা গ্রামের আল আমিন, নোয়াগ্রামের অ্যাডভোকেট কাজী মেজবাহুর রহমান সুমনসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকায় চৈত্র মাস থেকে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। বর্ষার পর থেকে আর বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। যার কারণে কোন টিউবয়েলে পানি উঠছে না। বিভিন্ন এলাকায় বিকল্প হিসেবে তারা পাইপ বসিয়ে কিছুটা পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে। তবে সেসব টিউবওয়েলে পানি নেয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন। করোনা আতঙ্ক নিয়েই এসব টিউবওয়েলে লাইন দিচ্ছে পানি নেয়ার জন্য। তাছাড়া রোজার সময় সেহরি ও ইফতারে পানি সংকটে রোজাদারদের কষ্ট বেড়ে গেছে।

নড়াইলে

এদিকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক এলাকার বোরোচাষিরা বিপাকে পড়েছেন। গত এক মাসের অধিক সময়ে উঁচু এলাকার বোরো চাষীরা ধানে ঠিকমতো পানি দিতে পারছেন না। অনেকেই বিকল্প পন্থায় নদী ও খাল থেকে পানি দেয়ার চেষ্টা করছেন।

নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের বাড়ীভাঙ্গা গ্রামের বোরো চাষি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দুটি স্যালো মেশিনের আওতায় চাষিরা প্রায় ৫০ একর জমিতে ধান লাগিয়েছে। আমার দায়িত্ব রয়েছে ধান লাগানো থেকে কাটা পর্যন্ত পানি দেয়া। কিন্তু পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় স্যালোতে পানি উঠছে না। বিকল্প পদ্ধতি আমাদের গ্রামের খাল থেকে পানি দিতে হচ্ছে। ফিতা পাইপ দিয়ে পানি নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তবে যেসব এলাকায় পানির বিকল্প কোন উৎস নেই, সেখানে পানির জন্য অনেকটা হাহাকার তৈরি হয়েছে।’

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) নড়াইলের সহকারী প্রকৌশলী (সেচ) মো. রকিবুল হোসেন বলেন, ‘পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার জন্য ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে বোরো চাষ অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। সে কারণে নদী ও খালের পানি দিয়ে সেচকাজ চালানোর জন্য কৃষকদের এগিয়ে আসতে হবে। বিএডিসির অধীনে নড়াইল জেলায় ২১টি পাওয়ার পাম্পের আওতায় ৪৪৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এসব জমিতে পানি সেচের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয়নি। কৃষকরা আগ্রহ প্রকাশ করলে নদী বা খালের পানি দিয়ে সেচ প্রকল্প চালুর ক্ষেত্রে বিএডিসি সহযোগিতা করবে।’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এম আবু সালেহ বলেন,‘ ভূগর্ভস্থ পানি বেশি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর নিচে নিমে যাচ্ছে। যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে অনেক এলাকায় টিউবওয়েলে পানি পাচ্ছে না। তবে বৃষ্টি হলে সমস্যা কেটে যাবে। আমরা জনগণের মাঝে সচেনতা সৃষ্টির পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে সার্ভিস ওয়াটার অর্থাৎ নদী ও খালের পানি এবং বৃষ্টির পানি ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া বিনা প্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ভুগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে নড়াইলের চিত্রা ও নবগঙ্গা নদীর পানি কিভাবে ব্যবহার বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে গবেষণা চলছে।’

আরও পড়ুন: নদী ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like