নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ধলেশ্বরী নদীতে ছয়দিন আগে যাত্রীবাহী লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ দশজনের মধ্যে আরও তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে; এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা নয়জনে দাঁড়িয়েছে।
‘এমভি ফারহান-৬’ লঞ্চের ধাক্কায় গত বুধবার ৫ জানুয়ারি ওই ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের মধ্যে রোববার ছয়জনের লাশ উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। এ ঘটনায় এখনও একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
সোমবার সকাল ৮টার দিকে বক্তাবলী এলাকা থেকে যাদের লাশ উদ্ধার করা হয় তাদের মধ্যে এক শিশু রয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানিয়েছেন। তাদের একজন ২২ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ্ ও আট বছর বয়সী তানিম। আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি।
ট্রলার ডুবির পঞ্চম দিনে রোববার বিকালে ধলেশ্বরী নদীর ধর্মগঞ্জ গুদারা ঘাট এলাকা থেকে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে ভাসমান অবস্থায় দুইজনের লাশ এবং এর আগে সকালে চারজনের ভাসমান লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা।
রোববার যাদের লাশ পাওয়া গেছে- মাদ্রাসা ছাত্র তামিম, মোয়াজ্জেম আব্দুল্লাহ, মোতালেব মিয়া, আওলাদ হোসেন, গৃহবধূ জেসমিন বেগম তার বড় মেয়ে তাসনিম, কলেজ ছাত্র সাব্বির ও পোশাক কারখানার নারী শ্রমিক জোসনা বেগম।
আরও পড়ুন : বুড়িগঙ্গায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আরেফিন বলেন, “যেখানে ট্রলার ডুবেছে, সেখান থেকে কিছুটা দূরে সোমবার সকালে তিনটি লাশ করা হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ নয়জনের জনের লাশ উদ্ধার করা হল। এখনও নিখোঁজ রয়েছে একজন।”
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ইউএনও রিফাত ফেরদৌস জানান, সোমবার সকালে উদ্ধার করা লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া মৃতদের প্রত্যেককের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর মোহনার কাছে ঘন কুয়াশার মধ্যে ট্রলারটিতে করে শতাধিক যাত্রী নদী পার হচ্ছিলেন। সে সময় হঠাৎ করে যাত্রীবাহী লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে অন্তত ১০ যাত্রী নিখোঁজ হন। ট্রলারের যাত্রীরা অনেকে আশপাশের নৌযানের সহায়তায় এবং সাঁতরে তীরে উঠলেও সবাই উঠতে পারেননি।
দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ‘ফারহান-৬’ নামের এই লঞ্চটির মালিক বরিশাল-৩ (মুলাদি-বাবুগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। লঞ্চটি ঢাকা-বেতুয়া রুটে চলাচল করে। দুর্ঘটনার পর কেরাণীগঞ্জের একটি ডকইয়ার্ড থেকে লঞ্চটি আটক এবং তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের মাস্টার কামরুল হাসান (৪০), ইনচার্জ ড্রাইভার জসিম উদ্দিন ভুইয়া (৪০) ও সুকানি মো. জসিম মোল্লা (৩০)।
এ ঘটনায় ওই তিনজনকে আসামি করে বিআইডব্লিউটিএ উপ-পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগ) বাবু লাল বৈদ্য বৃহস্পতিবার ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। রোববার আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ভয়েসটিভি/এমএম