এক সময় ছিলো সুখের সংসার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ একাকিত্ব নিয়ে ঢেঁকি নির্ভর জীবন পার করতে হচ্ছে তার। স্বামী ও সন্তান পরিত্যক্তা ওই নারী জীবন নির্বহের জন্যে গড়ে তুলেছেন ঐতিহ্যবাহী এক ঢেঁকি। আর সেই ঢেঁকিতেই নির্ভর করে চলে তার জীবন।
ওই সংগ্রামী নারী হলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের মধুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আনজুয়ারা।
জানা গেছে, বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে জন্ম নেয়া নয় মাসের ছেলে শিশুসহ আনজুয়ারাকে ছেড়ে নতুন বিয়ে করে পালিয়ে যায় স্বামী ইব্রাহিম। এরপর থেকে জীবন যুদ্ধে নামতে হয় তার। শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসারের হাল ধরেন তিনি। থাকার জায়গা না থাকায় কামলা দিয়েই প্রায় ১০-১৫ বছর আগে আর ডেসিমল জমি ক্রয় করে গড়ে তোলেন একটা ছোট বাড়ি।
তবে জমি ক্রয় করে কোনো মতে বাড়ি তৈরি করলেও বসবাসে প্রায় অযোগ্য সে ঘর। অন্যদিকে একাকিত্ব জীবনে পেটের ক্ষুধা নিবারণে স্থায়ী কর্ম না পেয়ে গত তিন বছর আগে সেই ছোট বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ঐতিহ্যবাহী এক ঢেঁকি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করছেন আনজুয়ারা। কাজে না গেলে কোন দিন বাড়ির চুলাও জ্বালাতে পারে না সে। বর্তমানে তার একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে ঢেঁকি। এই ঢেঁকিতে গুড়ো করে তা পিঠা তৈরি করে বিক্রি করে জীবন চালাচ্ছে সে।
সরেজমিনে অমরখানা ইউনিয়নের মধুপাড়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় আনজুয়ারার সঙ্গে। তিনি জানান, স্বামী-সন্তান অন্যত্র চলে যাওয়ার পর জীবন বাঁচাতে কর্ম খুঁজতে নেমে পড়ি। এক সময় পাথর ক্রাশিং মেশিনে কাজ করলেও এর পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনসহ বিভিন্ন লোকের বাড়িতে কামলা দিছি। বর্তমানেও কামলা দিচ্ছি।
তবে কামলার মাঝে স্থায়ীভাবে ছোট একটি ঢেঁকি বসিয়ে একাই কাজ করি। চাল ক্রয় করে ঢেঁকিতে দিনে ৪-৫ কেজি করে গুড়ো করি। আর এরপর সেই গুড়োয় ভাকা (ভাপা পিঠা) তৈরি করে বিভিন্ন গ্রামে বিক্রি করে ২০০-৩০০ টাকা আয় হয়। আর এ টাকায় নিজের চাহিদা মিটানোসহ বাড়ির কাজ করছি।
বর্তমানে কাজ করতে পারছি। যখন অসুস্থ্য হবো তখন আমার কি হবে। আমি সাহায্য পাওয়ার আশায় অনেকবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে গেছি। কিন্তু কেও আমার দিকে দেখছে না।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ হোসেন জানান, খবর পেয়ে আমরা আনজুয়ারার বাড়িতে পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে তাকে কম্বল দিয়েছি। আগামী এক মাসের মধ্যে তাকে নতুন ঘর দেয়া হবে। আশা করছি আগামী সাত দিনের মধ্যে ঘরের কাজ শুরু হবে।
তিনি আরো জানান, ভাতার আওতায় যেটা আসে সেটা আমরা দিবো এবং সঙ্গে আমি নিজে আর্থিকভাবে সহায়তা করবো, যাতে তিনি ভালোভাবে থাকতে পারেন।
আরও পড়ুন : চার বছরে ‘চিরতরে’
ভয়েস টিভি/এমএইচ