সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ হত্যার ঘটনায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ঘনিষ্টভাবে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বক্তব্যে ওসি প্রদীপের সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে এসেছে। তাই ওসি প্রদীপের জবানবন্দি নিয়ে তার দেওয়া তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির জরুরি সভা শেষে আজ রোববার সন্ধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন। কক্সবাজার হিল ডাউন সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে বেলা ১১টায় শুরু হওয়া এই বৈঠক শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কমিটির প্রধান।
মিজানুর রহমান বলেন, তদন্ত কমিটির মেয়াদ আগামীকাল ৩১ আগস্ট শেষ হচ্ছে। ওইদিন আবার ওসি প্রদীপের র্যাবের রিমান্ড শেষ হবে। এ জন্য তদন্ত কমিটি আজ সারাদিন বৈঠক করে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার। তাই আমরা আরো কয়েকদিন সময় বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে আজ আবেদন করেছি। আশা করি মন্ত্রণালয় আগামীকাল সময় বৃদ্ধি করবে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপের জবানবন্দি নিতে পারবো।
ব্রিফিংয়ে তিনি উল্লেখ করেন, কমিটি এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৬৭ জনের জবানবন্দি নিয়েছে। ওসি প্রদীপ সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তার জবানবন্দি নিয়ে তার দেয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। ইতোমধ্যে তদন্ত রিপোর্ট অনেকটা গুছিয়ে আনা হয়েছে। তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শুধু ওসি প্রদীপের জবানবন্দির অপেক্ষায়। ওসি প্রদীপ রিমান্ডে থাকায় আমরা দুবার আদালতে আবেদন করেছি তার জবানবন্দি গ্রহণ করার জন্য। আদালত জানিয়েছে রিমান্ড শেষ হলেই তদন্ত কমিটি তার জবানবন্দি নিতে পারবে।
এদিকে সিনহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি বরখাস্ত হওয়া পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ৩০ আগস্ট রোববার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ’র আদালতের খাস কামরায় তিনি এই জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে লিয়াকতকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে এ মামলায় এপিবিএনের তিন সদস্য আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা হলেন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আব্দুল্লাহ।
একই মামলায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত রিমান্ডে আছেন। গত শুক্রবার তৃতীয় দফায় তাঁদের তিন দিনের রিমান্ডে নেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ। পরে ঘটনার বিচার চেয়ে টেকনাফ উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ’র আদালতে ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।
ওই হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত সাত পুলিশ সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও টেকনাফ পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
ভয়েস টিভি/টিআর