Home বিনোদন কবরী-ওয়াসিমের মৃত্যুতে তারকাদের শোক

কবরী-ওয়াসিমের মৃত্যুতে তারকাদের শোক

by Shohag Ferdaus
তারকাদের

করোনা মহামারীর ভায়াবহ পরিস্থিতেতে চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল। দিনদিন বেড়েই চলছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। ঢাকাই চলচ্চিত্র অঙ্গনেও চলছে শোকের মাতম। একে একে বিদায় নিচ্ছেন চলচ্চিত্রের প্রাণ ভোমরারা। এটিম শামসুজ্জামান, সাদেক বাচ্চুসহ অনেকেই ইতোমধ্যে বিদায় নিয়েছেন। মৃত্যুর সেই শোক কাটিয়ে না উঠতেই করোনায় মারা গেলেন ‘মিষ্টি মেয়ে কবরী’। আজও করোনা কেড়ে নিয়েছে একুশে পদক প্রাপ্ত অভিনেতা এস এম মহসীন। এদিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন নায়ক ওয়াসিম।

অসম্পূর্ণ অনেক কাজ, অনেক স্বপ্ন রেখেই চলে গেলেন কবরী। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিনের মাথায় গত ১৬ এপ্রিল রাত ১২টা ২০ মিনিটে তিনি চলে গেলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

কবরী প্রথম চলচ্চিত্র ‘সুতরাং’ এ দর্শকদের নজর কেড়ে কয়েক বছরের ব্যবধানেই ঢালিউডে নিজেকে শীর্ষস্থানে নিয়েছেন। তাই দর্শক তাকে ‘মিষ্টি মেয়ে কবরী’ আখ্যা দিতে ভোলেননি। ৩০ বছরে তিনি শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন।

কবরীর শোক কাটিয়ে না উঠতেই আরেক মহানায়ক ওয়াসিমের মৃত্যুতে বেশ নড়চড়ে বসেছেন গোটা চলচ্চিত্র অঙ্গণ। রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। সত্তর ও আশির দশকজুড়ে ফোক ফ্যান্টাসি ও অ্যাকশন চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন ওয়াসীম; সেই সময়ে শীর্ষ নায়কের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। তার অভিনীত দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রের মধ্যে বেশিরভাগই সুপারহিট ছবি। ১৯৭২ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরুর পর ১৯৭৪ সালে মহসিনের পরিচালনায় ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে নায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে ওয়াসিমের। এস এম শফীর পরিচালনায় ‘দ্য রেইন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শদের পাশাপাশি বোদ্ধামহলেও প্রশংসিত হয়েছিলেন ওয়াসিম। ছবিটি বিশ্বের ৪৭টি দেশে মুক্তি পেয়েছিল।

এই দুই মহাতারকার মৃত্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তারকাদের যেন শোকের ছাড়া নেমে এসেছে। তাদের নিয়ে লিখেছেন, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, আনিসুল হক মিলন, চিত্রনায়ক ইমন, নিরব, শাকিব খান, চিত্রনায়িকা জয়া আহসান, নিপুন, অপু বিশ্বাস, পূজা চৈরী, বিপাশা কবিরসহ অনেকেই।

চঞ্চল চৌধুরী লেখেন, ‘কবরী আপা নেই! আমাদের স্বপের নায়িকা… কোন অনুষ্ঠান প্রথম দেখা হয়েছিল মনে নেই… শেষ যেবার দেখা হয়েছিল তার সাথে… আবদার করেছিলাম, একটা ছবি তোলার.. খুব স্পষ্ট মনে আছে, বলেছিলেন…. “চঞ্চল, আমি তোমার ‘মনপুরা’র ভক্ত…” ভালো থাকবেন কবরী আপা… কয়েক দিন ধরেই আপনার সাথে তোলা ছবিগুলো খুঁজছিলাম… এখন পেলাম…. যখন আপনি অনেক দুরে…’

নিরব লেখেন, ‘সারেং বউ, ময়নামতি, সুজন সখী, সাত ভাই চম্পা, বধূ বিদায়, বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ড্রাস্টির মিষ্টি মেয়ে নামে খ্যাত বরেণ্য অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতুবরণ করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) এই কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোকাহত!…রীপ ওয়াসিম ভাই’

শাকিব খান লেখেন, ‘চলচ্চিত্রের যারা পথপ্রদর্শক তারা একে একে চলে যাচ্ছেন। সেই পথে পাড়ি দিলেন আমাদের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী আপা। তিনি আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন… চলচ্চিত্রের প্রাজ্ঞজনের একজন ছিলেন কবরী আপা। তিনি সোনালি অতীতে সমুজ্জ্বল সাক্ষী ছিলেন। সুতরাং, হীরামন, ময়নামতি, চোরাবালি, পারুলের সংসার, বিনিময়, আগন্তুক, সুজন সখী, তিতাস একটি নদীর নাম, সারেং বউ, নীল আকাশের নিচেসহ অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের নায়িকা ছিলেন কবরী আপা। অভিনেত্রী পরিচয়ের বাইরে পরিচালনাতেও সুনাম অর্জন করেছিলেন তিনি। পর্দার মিষ্টি মেয়ে হিসেবে খ্যাতি পেলেও ব্যক্তি জীবনে কবরী আপা ছিলেন অত্যন্ত ব্যক্তিত্ববান একজন মানুষ। কিংবদন্তি এই মানুষটির সাথে আমার অসংখ্য স্মৃতি। যখনই দেখা হতো আমাকে স্নেহ করতেন। তাঁর সময়কার বিভিন্ন স্মৃতি শেয়ার করতেন। কবরী আপার মৃত্যুতে প্রিয় অভিনেত্রী হারানোর পাশাপাশি একজন অভিভাবক হারানোর শোক অনুভব করছি। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন কবরী আপা…’

চিত্রনায়ক ওয়াসিমকে নিয়ে শাকিব লেখেন, ‘আবারও চলচ্চিত্রাঙ্গনে শোকের মাতম। একের পর নক্ষত্রের পতনে শূন্য হয়ে যাচ্ছে এ মাধ্যমটি। কবরী আপা চলে যাওয়ার বিষাদের মধ্যে সোনালি দিনের জনপ্রিয় নায়ক ওয়াসিম আঙ্কেল মারা গেলেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন… ফোক ফ্যান্টাসি ধারার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ওয়াসিম আঙ্কেল ৭০-৮০ এর দশকে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ওইসব চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নায়ক হিসেবে আলাদা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছিলেন তিনি। তাই আজও সোনালি অতীতের চলচ্চিত্র ও তৎকালীন স্টারদের প্রসঙ্গ এলে প্রথম সারির নায়কদের কাতারে আসে ওয়াসিম আঙ্কেলের নাম। তিনি ছিলেন সুঠাম, সুদর্শন ও পরিপূর্ণ এক নায়ক। বেশ কিছুদিন আগে জেনেছিলাম ওয়াসিম আঙ্কেল দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। অবশেষে চলে গেলেন। তার চলে যাওয়ায় আরও এক অভিভাবক হারালো বাংলা চলচ্চিত্র। ওয়াসিম আঙ্কেলের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’

জয়া আহসান লেখেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যে খুব প্রশস্ত একটা রাজপথে উঠে গেছে, তা তো নয়। তবু আমরা যারা এর বন্ধুর পথ ধরে হাঁটছি, সেটি যাঁদের কষ্টে তৈরি হয়েছে কবরী তাঁদের একজন। কোত্থেকে এসে সারা দেশের চিত্ত জয় করেছিলেন নিমেষে। পাকিস্তান আমলের উর্দু ছবির রাজত্বে তিনি আর রাজ্জাক বাংলা ছবিকে কী জনপ্রিয়ই না করে তুলেছিলেন। তাঁর চরিত্রের মধ্যে বাঙালি মেয়ের সজল প্রতিচ্ছবি পেয়েছিলেন দর্শকেরা। কবরী আমাদের প্রথম যুগের বড় তারকা। আকাশে জ্বলজ্বল করবেন সব সময়।’

অপু বিশ্বাস এই দুই মহাতারকাকে নিয়ে কিছু না লিখলেও তার ফেসবুক পেজে দুইটি জন্ম ও মৃত্যু নিয়ে সাদাকালো ছবি পোস্ট দিতে দেখা যায়।

বিপাশা কবির লেখেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিওন। আপনিও চলে গেলেন আমরা শিল্পীরা অনেক ইমোশন হই.. এত দুঃখ ভরা একটা জীবন কেটে যায় যা অনেকে বুঝতেও পারে না। ফিল্ম এ আমার দেখা কেউ কখনো কারো বন্ধু হয়ে না সব স্বার্থপর, সব প্রয়োজন, কেউ আপনজন না… আজ আপনি চলে গেলেন এক বুক কষ্ট নিয়ে এটা বোঝার এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষের শক্তি নেই… ওপারে কি আছে কেউ বলতে পারি না তার পরেও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি… আপনি ভালো থাকুন আল্লাহ বেহেস্ত নসিব করুক আপনাকে।’

চিত্রনায়ক ওয়াসিমকে নিয়ে লেখেন, ‘সোনালি দিনের মানুষগুলো এক এক করে চলে যাচ্ছে.. চিত্রনায়ক ওয়াসিম ভাই… ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ আপনাকে বেহেস্ত নসিব করুন..’

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like