Home সারাদেশ তিস্তা পাড়ে ফের বন্যা, ডুবলো ২০ হাজার পরিবার

তিস্তা পাড়ে ফের বন্যা, ডুবলো ২০ হাজার পরিবার

by Shohag Ferdaus
তিস্তা

দুই সপ্তাহ ধরে টানা ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তার বাম তীরে লালমনিরহাটের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

২৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপরে।

এদিকে পানিবন্দি পরিবারগুলো চৌকি/খাটের ওপর মাচা বানিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউ কেউ ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ বা পার্শ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। খুব কষ্টে পড়েছেন বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিশুরা। গবাদি পশু-পাখি নিয়েও চরম বিপাকে পানিবন্দি পরিবারগুলো। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে বন্যাদুর্গত এলাকায়।

জানা গেছে, জন্মলগ্ন থেকে খনন না করায় তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় উজানের সামান্য ঢলেই তিস্তার দুই তীর প্লাবিত হয়ে লালমনিরহাটে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। পানি কমতে শুরু করলে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে নদী পাড়ের বসতভিটা, ফসলি জমি ও স্থাপনা।

২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল থেকে দিনভর ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে উজানে ভারতের পাহাড়ি ঢলের পরিমাণ বেড়ে গেলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। বুধবার সন্ধ্যা থেকে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারেজ রক্ষার্থে মূলস্রোত ধারার সবকটি জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ।

ফলে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ।

দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ওয়াবদা আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা রজবপাড়া, চৌরাহা ও কুটিরপাড়সহ প্রায় শতাধিক স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বাঁধটি মাটির বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা করছে। এ বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করলে বা ধসে গেলে হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমি পানির নীচে তলিয়ে যাবে। বেড়ে যাবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা। এ কারণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের ঊর্ধতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নদীপাড়ের মানুষেরা।

রজবপাড়া গ্রামের মানজেদুল ইসলাম ডলার বলেন, একদিকে নদী ভাঙন, অন্যদিকে বন্যা। এতে নদীপাড়ের মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। ওয়াবদা বাঁধটি উপচে পানি প্রবেশের উপক্রম হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাউকে পাওয়া যায়নি। রাতভর গ্রামবাসী চেষ্টা করে কোনো রকমে আটকে রেখেছে। তবে পানি আরও বাড়লে ওয়াবদা বাঁধ রক্ষা করা সম্ভব হবে না। এ বাঁধ ভেঙে গেলে কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি পানিতে ডুবে যাবে। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

এদিকে টানা দুই সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হওয়া ভারতের পাহাড়ি ঢলে জেলার হাজার হাজার হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে। টানা বৃষ্টিতে পচে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের সবজি ক্ষেত। চলমান বৃষ্টি আর বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। আমনের লোকসানের আশঙ্কায় পড়েছেন জেলার কৃষক পরিবারগুলো। অপর দিকে টানা বৃষ্টিতে কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমজীবী পরিবারগুলো পড়েছেন খাদ্য সংকটে।

আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন গ্রামে সাহেদ মিয়া বলেন, দুইদিন ধরে পানিবন্দি আছি। গত এক মাস ধরে থেমে থেমে বন্যা হচ্ছে। ২/৪ দিন টানা পানিবন্দি থাকতে হয়েছে। তিস্তার তলদেশ ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। চলতি বছরে ৫ম বারের মতো পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। এবারের পানির বেগ অনেক বেশি। গত বন্যার চেয়ে এ বন্যায় পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা অনেক বেশি।

তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, বুধবার সন্ধ্যা থেকে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা এবং সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপরে, পরে বিকেল ৩টায় ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। ব্যারেজ রক্ষার জন্য সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পরে পানি প্রবাহ কমে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তার তলদেশ ভরাট হওয়ায় সামান্যতেই এ জেলায় বন্যা দেখা দেয়। চলমান বন্যায় পানিবন্দি পরিবারগুলোর খোঁজ খবর নিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like