Home ভিডিও সংবাদ কাজী নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত তেওতা জমিদার বাড়ি

কাজী নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত তেওতা জমিদার বাড়ি

by Amir Shohel

মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের প্রাচীন এক জমিদার বাড়ি ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা তেওতা জমিদার বাড়ি। এটি উপজেলার তেওতা নামক গ্রামে অবস্থিত। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও তার পত্নীর স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি।

ইতিহাসবিদদের মতে, সতেরশ’ শতকে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি নির্মাণ করেছিলেন পঞ্চানন সেন নামক একজন জমিদার। জনশ্রুতি অনুসারে, পঞ্চানন সেন এক সময় খুবই দরিদ্র ছিলেন ও দিনাজপুর অঞ্চলে তিনি তামাক উৎপাদন করে প্রচুর ধনসম্পত্তির মালিক হওয়ার পর এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে এখানে জমিদারি প্রতিষ্ঠিত করে জয়শংকর ও হেমশংকর নাম দুজন ব্যক্তি। ভারত বিভক্তির পর তারা দুজনেই ভারত চলে গেলে বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

এছাড়াও এখানে রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিচিহ্ন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও তার পত্নির স্মৃতি বিজড়িত মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়ি। কবি পত্নী আশা লতা সেন গুপ্ত প্রমিলার জন্ম ভিটা এখানে। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে এই গ্রামেই আর সেই সুবাদে কয়েক বার তেওতায় কবি এসেছেন। তেওতাকে নিয়ে কয়েকটি কবিতা ও গান রচনা করেছিলেন তিনি। জমিদার বাড়ি শান বাঁধানো ঘাটে বসে বাঁশিতে সুর তোলা ও পুকুরে সাঁতার কাটাসহ শত স্মৃতি রয়েছেন এখানে। এ প্রাসাদেই নজরুল, প্রমীলা দেবীর প্রেমে পড়েন ও লিখেছিলেন, তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সেকি মোর অপরাধ?

তেওতা জমিদার বাড়িটি মোট ৭ দশমিক ৩৮ একর জমি নিয়ে স্থাপিত। মূল প্রাসাদের চারপাশে রয়েছে আরও বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ও একটি বড় পুকুর। প্রাসাদের মূল ভবনটি লালদিঘী ভবন নামে পরিচিত। এখানে একটি নটমন্দিরও রয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে নবরত্ন মঠ ও আর বেশ কয়েকটি মঠ। সবগুলো ভবন মিলিয়ে এখানে মোট কক্ষ রয়েছে ৫৫টি।

কবির বন্ধু তৎকালীন তেওতার জমিদার স্টেটের মালিক বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও লেখক পশ্চিম বঙ্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরণ শংকর রায় চৌধুরির আমন্ত্রণে ১৯২২ সালে কবি নজরুল প্রথম তেওতায় আসেন। এসময় কবি তেওতার জমিদার বাড়ির কোল ঘেষে যমুনা নদী বয়ে যাবার দৃশ্য ও এলাকার প্রাকৃতিক নৈস্বর্গিক দৃশ্য দেখে অভিভূত হন।

এই দৃশ্য দেখেই গান রচনা করেন, আমার কোন কুলে আজ ভিড়ল তরী, এ কোন সোনার গাঁয়সহ যমুনা নদীকে নিয়ে আরও অনেকগুলো গান রচনা করেন। এছাড়া তেওতাকে নিয়ে ছোট হিটলার, লিচু চোর কবিতা এবং হারা ছেলের চিঠি লেখেন। এসমই প্রমিলা দেবীর সাথে কবির মনের আদান প্রদান চলে।

এর কিছু দিন পর হঠাৎ করে প্রমিলার বাবা মারা যাবার পর তার মা গিড়িবালা দেবী প্রমিলার চাচা কুমিলায় ইন্দ্রকুমার সেন গুপ্তর বাসায় ওঠেন। ১৯২৬ সালে আবার কবি কয়েবার তেওতায় আসেন। এর পর ১৯৭৪ সালে কবি অসুস্থ অবস্থায় পরিবারসহ তেওতা ঘুরে যান। কবির সেই স্মৃতি বিজড়িত তেওতা জমিদার বাড়ীটিতে জেলাসহ অন্যন্ন জেলা থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা বেড়াতে আসেন।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like