ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরার ভোমরা ইউনিয়নের হাড়দ্দহ এলাকায় সীমান্তরেখা দুই দেশকে বিভক্ত করলেও বিভক্ত করা যায়নি দুই দেশের মানুষের মিলন ও আন্তরিকতা। হাড়দ্দহে সীমান্তের এক নম্বর সীমানা পিলার এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়।
সীমান্তে বাংলাদেশী ২২ পরিবার আর ভারতীয় ৪৮ টি পরিবারের বাসিন্দাদের মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ বসবাস। দুই দেশের এসব বাসিন্দাদের মাঝে নেই অপ্রীতিকর ঘটনা। একজনের বিপদে ছুটে আসেন আরেকজন।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভোমরা ইউনিয়নের (১ নং সিমানা পিলার) হাড়দ্দহ গ্রামের ২২ পরিবারে বসবাস করেন ৭০ জন বাংলাদশেী। সীমান্তের ওপারে ভারতীয় বশিরহাট থানার পানিতর গ্রামে বসবাস করেন ৪৮টি পরিবারে রয়েছেন ১৫০ জন ভারতীয়। এই সীমান্ত এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে ইসামতি নদী। এই নদীর তীরেই বাংলাদেশের হাড়দ্দহ ও ভারতের বশিরহাট থানার পানিতর গ্রাম।
সীমান্তের বাংলাদেশী ২২টি পরিবারের একজন শওকত আলী গাজী। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রেখায়। শওকত আলী গাজী জানান, আমার দাদা এখানে বসবাস করতেন। বাবাও করতেন। বাবার পর আমিও এখানেই রয়েছি। সীমান্ত এ রেখায় কত বছর আমার পরিবার রয়েছে তার কোন সঠিক হিসেব আমার জানা নেই। এখানে ভারত ও বাংলাদেশের মানুষদের মাঝে আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। একজনের বিপদে আরেকজন ছুটে যায়। কখনো একে অপরের সঙ্গে বিবাদ হয়নি। ছেলে মেয়েরাও একত্রে খেলাধুলা করে।
বাংলাদেশী নাগরিক শওকত আলী গাজী বলেন, জরুরী মুহূর্ত যখন কোন ডাক্তারের প্রয়োজন পড়ে তখন উভয় দেশের যে কোন চিকিৎসক আনা যায়। আমাদের এখানে সীমান্ত রেখা এমন যে, রান্নাঘরটি ভারতের মধ্যে আবার বসত ঘরটি বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে। আমরা মিলেমিশে এখানে রয়েছি। সামনেই বিজিবি ও ওপারে বিএসএফের টহল রয়েছে। দুই দেশের নাগরিক একত্রে বসবাস করলেও সীমান্তরক্ষীদের অতিক্রম করা যায় না।
পানিতর গ্রামের ভারতীয় নাগরিক দাউদ আলী গাজী বলেন, সীমান্তে একত্রে বসবাস তবে আমরা বাংলাদেশের সীমানায় যাই না। যা করি সব ভারতের মধ্যে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য পাশর্^বর্তী ইটইন্ডিয়া বাজারে যেতে হয়। তাছাড়া বড় কোন প্রয়োজনে যেতে হয় বশিরহাট বা কলকাতায়। বসবাসের এই জায়গায় ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মধ্যে বিজিবি যেতে দেয় না। তবে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি আটকানো যায় না।
তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে ভারত সরকার আমাদের ফ্রি রেশন দিচ্ছে। সেটি খেয়ে বেঁচে আছি। আমাদের কোন অসুবিধা নেই।
ভারতীয় নাগরিক ছবেদ গাজীর স্ত্রী মজ্ঞুয়ারা বেগম বলেন, দুই দেশ ভাগ হলেও এক জায়গায় বসবাস। আমরা সবাই মিলেমিশে থাকি। সীমান্তরেখা দুইদেশকে ভাগ করলেও মানুষদের ভাগ করতে পারিনি। আমাদের প্রয়োজনে আমরা তাদের বাড়িতে যায়। তাদের প্রয়োজন হলে আমাদের বাড়িতে আসে। ছেলেমেয়েরাও এক সঙ্গে খেলাধুলা করে।
বাংলাদেশী নাগরিক শওকত আলী গাজীর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আম্ফানের সময় আমার ঘরটি ভেঙে যায়। নদীর পানিতে ছেলে মেয়ের বই খাতাসহ সবকিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তবে সরকারি কোন সহযোগিতা আমি পাইনি। ভারতীয়রা করোনার সময়ে রেশন চাল, ডাল, তেল, আটা পায়। আমরা কিছু পাই না। শুধু দেখি আর কি করবো।
সীমান্তবর্তী ভোমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী জানান, সীমান্তে হাড়দ্দহ ও পানিতর গ্রামের ৭০-৮০টি পরিবার একত্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করছেন। তাদের মাঝে কখনো বিবাদ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। করোনাকালীন সময়ে সরকারি যে সুবিধা দেওয়ার কথা সেগুলো ওই এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরকিদের দেয়া হয়েছে। অনেকের অনেক দাবি থাকে সব দাবি পূরণ করা সম্ভব হয় না।
সীমান্তের এই বাসিন্দাদের বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবির লে. কর্নেল মোহাম্মদ আল মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে সদ্য বিদায়ী লে. কর্নেল গোলাম মহিউদ্দীন খন্দকার জানান, সীমান্তের ১ নং সিমানা পিলারের ওখানে জায়গাটি এমন যে, ভারত ও বাংলাদেশী নাগরিকদের ঘরবাড়ি পাশাপাশি। সীমান্তে বিজিবির পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক টহল রয়েছে। ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশ অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ নেই।
ভয়েস টিভি/ডিএইচ