রংপুর মহানগরীর মধ্য গণেশপুর এলাকায় পাশাপাশি রুমে দুই বোন রহস্যজনকভাবে খুন হয়েছে। একজনের মৃতদেহ মেঝেতে পড়ে থাকলেও অন্যজনের মৃতদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ঘরের ভেতর থেকে দরজার সিটকিনি লাগা থাকলেও ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য আলামত পাচ্ছে না পুলিশ।
তবে, একটি ছেড়া হেডফোন ও একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। মেঝেতে ছেড়া হেডফোন থাকলেও মোবাইল ফোন কোথায় গেলো? কে নিলো সেই ফোন এই রহস্য উদঘাটন করতে পারলেই খুনের ক্লু পেতে সহজ হবে বলে মনে করছেন পুলিশ। হঠাৎ দুই কিশোরীর এমন মৃত্যুতে আহাজারি চলছে পাড়া জুড়ে।
এদিকে, কীভাবে এই ডাবল খুন হলো তার রহস্য উদ্ধারে চুলচেরা বিশ্লেষণসহ পুলিশের একাধিক গোয়েন্দা মাঠে কাজ শুরু করেছে। ঘটনাস্থলে নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) শহিদুল্লাহ কাওসার, উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আবু মারুফসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা গেছেন।
১৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে পুলিশ দু’বোনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে। কাউকে আটক করা হয়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলাও হয়নি।
স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, নিহত সোমাইয়া আক্তার মীম (১৫) কাপড় ব্যবসায়ী মোকছেন আলীর মেয়ে ও জান্নাতুল ফেরদৌস মৌ (১৩) বিদ্যুতের মিস্ত্রী মমিনুল ইসলামের মে। তারা আপন চাচাতো জ্যাঠাতো দুই বোন। মীম রংপুরের একটি মাদ্রাসায় ৯ম শ্রেণির ছাত্রী আর মৌ বীরমুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে মীম ও মৌ রাতের খাবার খেয়ে মৌদের বাসায় ঘুমিয়ে পড়ে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তাদের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজায় জোড়ে জোড়ে ধাক্কা মারে। এতেও কোন শব্দ না পেলে পুলিশকে খবর দেয় প্রতিবেশীরা। দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাদের দুজনের আলাদা লাশ দেখতে পায়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জান্নাতুল ফেরদৌস মিম ঘরের পূর্বদিকের রুমের মেঝেতে পড়ে ছিলো। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন এবং নাকে রক্ত রয়েছে। এছাড়াও তার রুম থেকে একটি ছেড়া হেড ফোন পাওয়া যায়। পাশের(পশ্চিমের) রুমে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলো সোমাইয়া আক্তার মীম।
একটি সূত্র জানায়, মীরের কক্ষ থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। সেই ডায়েরিতে তার মায়ের মৃত্যুর পর ‘মাকে যে খুব মনে পড়ে’ এ কথাটি ছাড়াও আরো অনেক লেখা আছে। ওই লেখাটি ছিলো ডায়েরির একদম শেষ পাতায়। ধারণা করা হচ্ছে লেখাটি একদম টাটকা। যা খুব সম্প্রতি সময়ে লেখা হয়েছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ এই ডাবল খুনের কোন কিনারা পায়নি। তবে একাধিক গোয়েন্দা মাঠে কাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই বলছেন, মৌ ও মীমের মধ্যে ব্যক্তিগত কোন দ্বন্দ্ব ছিলো কী না তা খতিয়ে দেখতে হবে। তারা কারণ হিসেবে বলছে, যদি তারা দুজনই আত্মহত্যা করে তাহলে একই সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা যাবে। তা না হয়ে একজনের মৃতদেহ মেঝেতে আর একজন ফাঁসিতে কেন? তাছাড়া মৌ এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি কে নিলো? রাতে বাসায় অন্য কেউ এসেছে কী না তাও খতিয়ে দেখতে হবে। এর পেছনে আরো অন্য কোন বিষয় লুকিয়ে আছে কী না তা খুঁজে আইনশৃংখলা বাহিনীকে তৎপর হবার আনুরোধ জানান তারা।
প্রতিবেশীরা বলছেন, জান্নাতুল ফেরদৌস মৌ এর বাবা মমিমুল ইসলাম। তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গত কয়েকদিন হলো ঘুরতে গেছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরে।
মীমের বাবা মোকছেদ আলী জানান, কেন এই হত্যাকাণ্ড হলো তা তিনি নিশ্চিত নন। তবে সুষ্ঠু তদন্ত করে এর আসল ঘটনা উদ্ধার করার দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজু জানান, আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে শুনি দুবোন মারা গেছে। কেন তারা দু বোন এক সঙ্গে মারা গেলো তা প্রশ্ন থেকে যায়। সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করতে আইনশৃংখলাবাহীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এ ঘটনায় যেন কেউ অহেতুক হয়রানি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানান।
ঘটনাস্থলে যাওয়া নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার শহিদুল্লাহ কাওসার জানান, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছি। কী কারণে এই ঘটনা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে তদন্ত চলছে।
ভয়েসটিভি/এএস