Home সারাদেশ দেশে ৬ মাসে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা: ইউনিসেফ

দেশে ৬ মাসে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা: ইউনিসেফ

by Newsroom

ভয়েস রিপোর্ট: করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত প্রায় ৪ লাখ ৫৯ হাজার মা ও শিশুর জীবন হুমকির মুখে রয়েছে। এমনটাই মনে করছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।
মঙ্গলবার সংস্থাটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। ৬ মাসের মধ্যে সেখানে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। জন হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণার উদৃতি দিয়ে ইউনিসেফ এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে করোনা রোধে যান চলাচল বন্ধ ও সংক্রমণের ভয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না যাওয়াকে শিশুদের পুষ্টি বঞ্চনার অন্যতম কারণ বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে আরো বলা হয়, এখানে চরম দরিদ্র পরিবারগুলো দিনে তিন বেলা খাবার জোগাতে পারছে না।
‘লাইভস আপএনডেড’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ইউনিসেফ বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিতে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দেয়, তা সত্ত্বেও লকডাউনের সময় পরিষেবা প্রাপ্তির সীমিত সুযোগ এবং অভিভাবকদের সংক্রমণের আশঙ্কার কারণে এপ্রিল মাসে কেবলমাত্র অর্ধেক শিশু তাদের নিয়মিত টিকা নিতে পেরেছে।

জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ কর্তৃক মে মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির পরোক্ষ কারণে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে আগামী ছয় মাসে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৮ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হতে পারে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমু হোজুমি জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি বাংলাদেশেও ক্রমবর্ধমান ক্ষতির প্রেক্ষাপটে শিশুদের ওপর এর প্রভাব ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। জীবন রক্ষাকারী টিকাদান কার্যক্রম এবং পুষ্টিজনিত সেবা অব্যাহত রাখতে হবে। যেহেতু বাবা-মায়েরা এসব সেবা অনুসন্ধান করে এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা প্রদান করে, তাই বাবা-মা স্বাস্থ্যকর্মী- উভয় শ্রেণিই যাতে নিরাপদে থাকে এবং নিরাপদ বোধ করে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। স্কুলগুলোকেও যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদে চালু এবং শিশুদের জন্য হেল্পলাইনগুলোকেও চালু রাখতে হবে। ইউনিসেফ এইসব ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশ; বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ এবং শ্রীলংকার শিশুদের বর্তমান অবস্থার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ইতিমধ্যে এসব দেশের ২৪ কোটি শিশু বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে বলে জানানো।

প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে এই অঞ্চলের ১২ কোটি শিশু আর্থিক সচ্ছলতা হারিয়ে দরিদ্র হয়ে পড়বে। দক্ষিণ এশিয়া একটি জনবহুল অঞ্চল। এখানে বসবাস করে পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ মানুষ। আর বিগত কয়েক সপ্তাহে এই অঞ্চলের নানা দেশে করোনার সংক্রমণ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আঞ্চলিক বৃহৎ দেশ ভারতে সংক্রমিত এখন চার লাখ ৪০ হাজার।
এই অবস্থায় ‘পাল্টে যাওয়া জীবন: কীভাবে কোভিড-১৯ দক্ষিণ এশীয় ৬০ কোটি শিশুর ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ।
প্রতিবেদনের মূল বক্তব্যেই বলা হয়, শিশু-কিশোরদের এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম একথা সত্য, কিন্তু তাদের জন্য সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হচ্ছে অর্থনৈতিক দৈন্য। সংক্রমণ প্রতিরোধের চেষ্টাকালে দেখা দেয়া অর্থনৈতিক বিপর্যয় শিশুর আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তন করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার সুযোগ থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশ; বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ এবং শ্রীলংকার শিশুদের বর্তমান অবস্থার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ইতিমধ্যে এসব দেশের ২৪ কোটি শিশু বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছে বলে জানানো হয়।

শুধু আর্থিক সঙ্গতি নয়, বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের সংজ্ঞা নির্ধারণে কোনও ব্যক্তির স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ না পাওয়া, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া, নিম্নমানের কাজ করতে বাধ্য হওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসে বাধ্য হওয়ার মতো নানাবিধ বঞ্চনা গণনা করা হয়।

বহুমাত্রিক এই দারিদ্র্যের তালিকায় চলমান মহামারির কারণে আরও ১২ কোটি শিশু যোগ হলে, দক্ষিণ এশিয়ায় মোট সংখ্যাটি উন্নীত হবে ৩৬ কোটিতে।
ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক প্রধান জিন গফ বলেন, এ অঞ্চলে চলমান মহামারি এবং সে কারণে চালু করা লকডাউন শিশুদের নানাদিক দিয়ে ক্ষতির শিকার করেছে। কিন্তু, অচলাবস্থার ফলে সৃষ্ট দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক মন্দায় শিশুদের দুর্গতি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নেয়া হলে আগামীদিনের প্রজন্মের সম্পূর্ণ ভবিষ্যৎ এবং সমৃদ্ধির আশা হারিয়ে যেতে পারে।

কোভিড-১৯ মহামারি দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশে শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করেছে। স্থগিত করেছে প্রচলিত রোগের টিকাদান কর্মসূচি। গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় আগামী মাসগুলোতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অভিভাবকদের হাতে শিশু নির্যাতন বৃদ্ধির তীব্র আশঙ্কাও করছে ইউনিসেফ প্রতিবেদন।

You may also like